বড় প্রতিরোধ জারি করে কেন্দ্রীয় সরকারের আইএসআই সংক্রান্ত খসড়া বিল মোকাবিলার পথে আরও কয়েক কদম এগোলেন ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিস্টিক্যাল ইনস্টিটিউটের শিক্ষক, গবেষক, শিক্ষাকর্মীরা। দিনকয়েক আগে বার্ষিকসাধারণ সভা বা এজিএমে গণতন্ত্রের টুঁটি চিপে ধরা আইএসআই বিল প্রত্যাহারের দাবি তোলেন তাঁরা। সোমবার সেই প্রতিরোধের স্বরে বিশ্বের তা-বড় পণ্ডিত গণিতবিদ, স্ট্যাটিসটিশিয়ান, অর্থনীতিবিদদের গলা মেলানোর কথা তুলে ধরল আইএসআই সমাজ।সাম্প্রতিক একটি গণস্বাক্ষর অভিযানে শামিল হয়েছেন অঙ্কের নোবেল বলে পরিচিত এবেল পুরস্কারজয়ী, পদ্মবিভূষণ এসআরআই শ্রীনিবাস বর্ধন। প্রেসিডেন্সি কলেজ ও আইএসআইয়ের প্রাক্তনী ছিলেন তিনি। প্রশান্তচন্দ্র মহলানবীশের সুযোগ্য ছাত্র সি আর রাওয়ের ছাত্র ছিলেন শ্রীনিবাস।
ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট তথা আইএসআইয়ের ইমেরিটাসঅধ্যাপক পার্থপ্রতিম মজুমদারও এ দিন দেশের এই গর্বের প্রতিষ্ঠানে আঘাত নিয়ে সরব হয়েছেন। আইএসআই খসড়া বিল নিয়ে আগেই কেন্দ্রীয় সরকারকে চিঠি লিখেছেন পার্থপ্রতিম। এ দিন তিনি বলেন, ‘‘একদা আইএসআইয়ের সোসাইটি গঠন করে স্বাধীন গণতান্ত্রিক মডেলে পঠনপাঠন, গবেষণাপরিচালনার বিষয়টি অনুসরণ করে আমেরিকার নর্থ ক্যারোলাইনাতেও স্ট্যাটিস্টিক্যাল ইনস্টিটিউট গড়ে ওঠে। অথচ, আমরা কোনও কারণনা দেখিয়ে হঠাৎ খেয়ালে আইএসআইয়ের সেই কাঠামো ধূলিসাৎ করতে বসেছি।’’ পার্থপ্রতিম বা কম্পিউটার সায়েন্সের অধ্যাপক অরিজিৎ বিষ্ণু, কুন্তল ঘোষ প্রমুখ প্রশ্ন তুলেছেন, এ যাবৎ কোনও রিভিউ কমিটি আইএসআই বিল বা আইএসআই পরিচালনা-প্রণালী নিয়ে কোনও প্রশ্ন না তুললেওকেন হঠাৎ জওহরলাল নেহরুর আমলে ১৯৫৯ সালের ওই বিলটির উপরে কোপ পড়ল? আইএসআই বিলটি একতরফা ভাবে চাপিয়ে দেওয়ার মধ্যে অনেকেই অতীতের সঙ্গে আগ্রাসী বিদ্বেষমূলকছায়াযুদ্ধও দেখছেন। কুন্তল বলেন, ‘‘আমরা এক অদ্ভুত দেশে রয়েছি, যেখানে প্রথম প্রধানমন্ত্রীর আমলের সব কিছু চিৎকৃত ভাবে খারাপ বলে নস্যাৎ করা হচ্ছে। অথচ গবেষণায় বরাদ্দ কমছে।তথাকথিত ট্রিলিয়ন ডলার অর্থনীতির কোনও সুফলই শিক্ষা ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে না।’’
আইএসআইয়ের গবেষক ছাত্র উদ্ভাস দাস সরব হয়েছেন, শিক্ষার্থীদের ভাতা বন্ধ করে এ বারমোটা টাকা বেতনের খাঁড়া নামতে পারে। কোপ পড়তে পারে তাত্ত্বিক গবেষণার উপরেও। যা আইএসআইয়ের মৌলিক আদর্শের বিরোধী। নতুন বিল কার্যকর হলে কলকাতায় আইএসআইয়ের সদর দফতরটির অস্তিত্বও বিপন্নহতে পারে, যা দেশের যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় আঘাত বলে অনেকে দেখছেন। ওয়ার্কার অর্গানাইজ়েশনের সেক্রেটারি স্বরূপ ঘড়াও নতুন বিলটি শিক্ষাকর্মীদের জন্য দমনমূলক বলে মনে করছেন। কম্পিউটার সায়েন্সের অধ্যাপক রজত দে, থিয়োরেটিক্যাল স্ট্যাটিসটিক্স ও অঙ্কের অধ্যাপক পারমিতা দাসও এ দিন উপস্থিত ছিলেন। নানা আঙ্গিকে প্রতিবাদে শিক্ষক, প্রাক্তনীরা একটি পডকাস্ট প্রচার করছেন। গণস্বাক্ষর সংগ্রহ ছাড়া শুক্রবার মানবন্ধন এবং পথসভার ডাক দেওয়া হয়েছে। শিক্ষক, ছাত্রদের বিশ্বাস, অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে খুব সহজে হাল ছাড়বেন না তাঁরা।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)