Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
board exam

দেরিতে হলেও হোক মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক, বলছেন শিক্ষকেরা

অতিমারির চোখরাঙানিতে দুই পরীক্ষা নিয়েই তৈরি হয়েছে ঘোর অনিশ্চয়তা।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

আর্যভট্ট খান
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ মে ২০২১ ০৬:২৮
Share: Save:

নির্ধারিত সূচি অনুযায়ী আগামী পয়লা জুন মাধ্যমিক এবং ১৫ জুন উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা। কিন্তু অতিমারির চোখরাঙানিতে দুই পরীক্ষা নিয়েই তৈরি হয়েছে ঘোর অনিশ্চয়তা। মধ্যশিক্ষা পর্ষদ এবং উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ জানিয়ে দিয়েছে, এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাবে রাজ্য সরকারই। যদিও বিভিন্ন শিক্ষক সংগঠন থেকে শুরু করে শিক্ষকদের বড় অংশের মতে, এই দুই পরীক্ষা পুরোপুরি বাতিল না করে পিছিয়ে দেওয়া হোক। রদবদল ঘটানো যেতে পারে পরীক্ষা পদ্ধতিতেও। অনেক শিক্ষক এ-ও জানাচ্ছেন, দেরিতে হলেও পরীক্ষা হওয়ারই পক্ষপাতী অধিকাংশ ছাত্রছাত্রী।

উচ্চ মাধ্যমিকের ক্ষেত্রেও একই মত প্রায় সব শিক্ষক সংগঠনের। তাদের বক্তব্য, উচ্চ মাধ্যমিকের ফলের উপরে নির্ভর করে পরীক্ষার্থীরা বিভিন্ন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়। কাউন্সিল ফর ইন্ডিয়ান স্কুল সার্টিফকেট এগজামিনেশন (সিআইএসসিই) এখনও তাদের দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষা বাতিল করেনি। তারা পরীক্ষা স্থগিত রেখেছে। একই ভাবে শিক্ষকেরা চাইছেন, উচ্চ মাধ্যমিকও কিছুটা সময় পিছিয়ে দেওয়া হোক।

নিখিলবঙ্গ শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সুকুমার পাইনের মতে, দেরিতে হলেও মাধ্যমিক না নিয়ে উপায় নেই মধ্যশিক্ষা পর্ষদের। তাঁর প্রশ্ন, “মধ্যশিক্ষা পর্ষদ কিসের ভিত্তিতে দশম শ্রেণির পড়ুয়াদের মূল্যায়ন করে একাদশ শ্রেণিতে তুলবে? গত বছর তাদের তো কোনও মূল্যায়নই হয়নি। তাই দেরিতে হলেও পরীক্ষা নেওয়া জরুরি।”

ছাত্রছাত্রীদের নিজেদের স্কুলেই (হোম সেন্টার) মাধ্যমিক পরীক্ষা হোক অগস্ট মাসে। এমনই দাবি করেছে আর এক শিক্ষক সংগঠন, অল পোস্ট গ্র্যাজুয়েট টিচার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক চন্দন গড়াই বলেন, “প্রতিটি বিষয়ের পূর্ণমান কমানো হোক। কমানো হোক পরীক্ষার সময়ও। প্রশ্ন হোক মাল্টিপল চয়েস ভিত্তিক। তা হলে দ্রুত ফল প্রকাশ সম্ভব হবে।’’ এই বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু এবং শিক্ষা দফতরে চিঠি দিয়েছেন তাঁরা। কলেজিয়াম অফ অ্যাসিস্ট্যান্ট হেডমাস্টার্স অ্যান্ড অ্যাসিস্ট্যান্ট হেডমিস্ট্রেসেস-এর সম্পাদক সৌদীপ্ত দাসের মতে, ‘‘টেস্ট বাতিল করে সকলকে পাশ করানোর নির্দেশ দিয়েছিল রাজ্য সরকার। তাই মাধ্যমিক উত্তীর্ণদের মার্কশিট যে টেস্ট পরীক্ষার ভিত্তিতে দেওয়া হবে, সেটাও সম্ভব নয়। তাই দেরিতে হলেও হোম সেন্টারে পরীক্ষার ব্যবস্থা করা দরকার।’’

মাধ্যমিক নিয়ে এই দোলাচলে আখেরে ক্ষতি হচ্ছে পরীক্ষার্থীদেরই। এমনটাই বলছেন মাধ্যমিক শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতি-র সদস্যেরা। সমিতির নেতা অনিমেষ হালদারের মতে, “পরীক্ষা যে হেতু বাতিল হয়নি, তাই সব ছাত্রছাত্রীই প্রস্তুতি নিয়েছে। অধিকাংশেরই মত, পরীক্ষা হোক। তাই আমরাও চাই না, পরীক্ষা বাতিল হোক।”

আইসিএসই এবং সিবিএসই বোর্ড ইতিমধ্যেই তাদের দশম শ্রেণির পরীক্ষা বাতিল করেছে। তবে তাদের অনুসরণ করে মাধ্যমিক বাতিল করা যুক্তিযুক্ত নয় বলেই মনে করছে শিক্ষকমহলের একাংশ। তাঁদের মতে, ওই দুই বোর্ডের দশম শ্রেণির পড়ুয়াদের সারা বছর অনলাইনে মূল্যায়ন হয়েছে। হয়েছে টেস্টও। ফলে সংশ্লিষ্ট স্কুলগুলি সারা বছরের ফলাফল দেখে পড়ুয়াদের মূল্যায়ন করতে পারবে। যা মধ্যশিক্ষা পর্ষদের পক্ষে সম্ভব নয়।

পশ্চিমবঙ্গ সরকারি বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সৌগত বসু বলছেন, “পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে স্কুল খুললে মাধ্যমিক হোক হোম সেন্টারে। দ্রুত ফল প্রকাশ হবে, এই আশ্বাস দেওয়া হোক। পিছিয়ে যাওয়া মাধ্যমিক পরীক্ষার এক বছর পরে একাদশ থেকে দ্বাদশে ওঠার পরীক্ষা নেওয়া হোক। তা হলে পড়ুয়ারা একাদশ শ্রেণিতে পড়ার সময় পাবে।’’ কিন্তু সে ক্ষেত্রে তো ওই পরীক্ষার্থীদের উচ্চ মাধ্যমিকও শুরু হবে দেরিতে। “অতিমারিতে বিশ্ব টালমাটাল। এই পরিস্থিতিতে কিছুটা দেরিতে পরীক্ষা হলে কি খুব ক্ষতি হবে?”— প্রশ্ন তুলছেন সৌগতবাবু।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

board exam
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE