E-Paper

কলেজের পাঁচিলে রঙের প্রলেপ, তবুও উঁকি দিচ্ছে অভিযুক্তের নাম

ধর্ষণের ঘটনার কয়েক মাস পরেও কলেজ জুড়ে অভিযুক্তের নাম থেকে যাওয়ায় নতুন করে বিতর্ক শুরু হয়। কেন ধর্ষণে অভিযুক্তের নাম মুছতে কলেজ কর্তৃপক্ষ তৎপর হলেন না, তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে।

চন্দন বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ০৭ নভেম্বর ২০২৫ ০৮:২৮
কসবায় আইন কলেজের পাঁচিলে এখনও লেখা রয়েছে অভিযুক্তের নামের আদ্যক্ষর (চিহ্নিত)। বৃহস্পতিবার।

কসবায় আইন কলেজের পাঁচিলে এখনও লেখা রয়েছে অভিযুক্তের নামের আদ্যক্ষর (চিহ্নিত)। বৃহস্পতিবার। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার।

গণধর্ষণে অভিযুক্ত ছাত্রনেতার নাম কসবার আইন কলেজের দেওয়াল জুড়ে মাসকয়েক পরেও থেকে যাওয়ায় প্রশ্ন উঠেছিল। চাপে পড়ে কলেজ কর্তৃপক্ষ নাম মুছে দেওয়া হবে বলে আশ্বাস দেন। পুজোর ছুটিতে কলেজের দেওয়ালজোড়া অভিযুক্তের নামের উপরে পড়েছে রঙের প্রলেপ। যদিও তার নীচ দিয়েই অভিযুক্তের নামের সংক্ষিপ্তাংশ ‘এমএম’ এখনও বহু দেওয়ালে উঁকি মারছে। জ্বলজ্বল করছে দক্ষিণ কলকাতার আরও এক ছাত্রনেতার নাম মিলিয়ে লেখা হরেক স্লোগানও।

গত ২৫ জুন কসবার দক্ষিণ কলকাতা আইন কলেজের ভিতরে এক ছাত্রীকে গণধর্ষণের অভিযোগ ওঠে। তৃণমূল ছাত্র পরিষদের নেতা তথা ওই কলেজের অস্থায়ী কর্মী মনোজিৎ মিশ্র এবং আরও দুই পড়ুয়ার বিরুদ্ধে কসবা থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন নির্যাতিতা। তদন্তে নেমে মনোজিৎ-সহ তিন অভিযুক্তকে গ্রেফতার করে পুলিশ। গ্রেফতার করা হয় কলেজের এক নিরাপত্তারক্ষীকেও। ঘটনার রাতে ওই নিরাপত্তারক্ষীকে ঘর থেকে বার করে দিয়ে সেই ছাত্রীকে সেখানে ঢুকিয়ে অভিযুক্তেরা গণধর্ষণ করেছিল বলে অভিযোগ। নির্যাতনের ভিডিয়ো অভিযুক্তেরা মোবাইলবন্দি করেছিল বলেও তদন্তে উঠে আসে।

যদিও ঘটনার সময়ে আইন কলেজের ভিতরে দেখা গিয়েছিল, দেওয়াল জুড়ে রয়েছে মনোজিতের নাম। কলেজের পাঁচিল ও বিভিন্ন দেওয়ালে লেখা ছিল— ‘মনোজিৎ দাদা ইজ ইন আওয়ার হার্টস।’ কোথাও মনোজিতের নামে অন্য স্লোগান লিখে শেষে লেখা ছিল ‘টিম এমএম’। কোথাও আবার সংক্ষেপে লেখা ‘এমএম’। কলেজে নিজের দাপট বোঝাতেই দেওয়াল জুড়ে মনোজিৎ নিজের নাম লিখিয়েছিল বলে দাবি করেন কলেজের পড়ুয়ারা। এমনকি, বহু জায়গায় মনোজিৎকে সংক্ষেপে বোঝাতে ‘এমএম’ লিখে রাখা হয় বলেও দাবি করেন পড়ুয়ারা।

যদিও ধর্ষণের ঘটনার কয়েক মাস পরেও কলেজ জুড়ে অভিযুক্তের নাম থেকে যাওয়ায় নতুন করে বিতর্ক শুরু হয়। কেন ধর্ষণে অভিযুক্তের নাম মুছতে কলেজ কর্তৃপক্ষ তৎপর হলেন না, তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। কার্যত চাপে পড়েই কলেজ কর্তৃপক্ষ আশ্বাস দেন, পুজোর ছুটিতে তা মুছে দেওয়া হবে। অবশেষে সেই নামের উপরে প্রলেপ পড়েছে। বৃহস্পতিবার কসবার আইন কলেজে গিয়ে দেখা গেল, পুলিশের সিল করে দেওয়া নিরাপত্তারক্ষীর সেই ঘর এখনও বন্ধ। তার সামনে পুলিশের গার্ডরেল বসানো। কলেজের বাইরের গেটের সামনের গার্ডরেল পাঁচিল ঘেঁষে রেখা দেওয়া হয়েছে। ভিতরে কলেজের দেওয়াল জুড়ে লেখা মনোজিতের নাম ও স্লোগানে রঙের প্রলেপ পড়েছে। পাঁচিলে ‘মনোজিৎ দাদা ইজ ইন আওয়ার হার্টস’ লেখারও আর অস্তিত্ব নেই। যদিও জায়গায় জায়গায় এখনও পড়া যাচ্ছে ‘এমএম’ লেখা। কয়েকটি জায়গায় নতুন রঙের প্রলেপ পড়লেও তার নীচ দিয়ে উঁকি দিচ্ছে সাদা রঙের ‘এমএম’। মনোজিতের নাম সরাসরি না থাকলেও অন্য ছাত্রনেতাদের নাম নিয়ে লেখা স্লোগান এখনও রয়ে গিয়েছে পাঁচিলে। তা নিয়ে প্রশ্ন করতেই কলেজ চত্বরে ঘোরা এক কর্মী বললেন, ‘‘তা হলেই বুঝছেন তো, তার প্রভাব! রঙের পরেও মোছা যায় না।’’

কলেজ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, পুজোর ছুটিতেই কলেজ জুড়ে লেখা মনোজিতের নাম সরানো হয়েছে। পাঁচিলের রং মিলিয়েই নতুন রং করা হয়েছে। আইন কলেজের সহ-উপাচার্য নয়না চট্টোপাধ্যায় বললেন, ‘‘কলেজের পরিচালন সমিতির বৈঠকে আলোচনা করা হয়েছিল। সেই বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ করা হয়েছে।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

kasba police investigation

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy