Advertisement
E-Paper

মশারির নীচে কেক কেটে জন্মদিন মা-হারা শিশুর

দু’জনের মৃত্যুর পরে ২২ দিন কেটে গিয়েছে। তবু বদলায়নি যাদবপুরের প্রিন্স গোলাম হুসেন শাহ রোডের একটি বস্তির অবস্থা। এখনও ডেঙ্গি-আতঙ্কে আছেন বাসিন্দারা। বস্তির অন্তত চার জন জ্বরে আক্রান্ত। সেখানকার যে তরুণীর মৃত্যু হয়েছিল, তাঁর শিশুকন্যার জন্মদিনও বৃহস্পতিবার পালিত হয়েছে মশারি টাঙিয়ে।

নীলোৎপল বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ৩০ নভেম্বর ২০১৮ ০১:২৭
হর্ষ-বিষাদ: ভাইকে পাশে নিয়ে কেক কাটছে ছোট্ট অনন্যা। বৃহস্পতিবার, যাদবপুরে। ছবি: সুমন বল্লভ

হর্ষ-বিষাদ: ভাইকে পাশে নিয়ে কেক কাটছে ছোট্ট অনন্যা। বৃহস্পতিবার, যাদবপুরে। ছবি: সুমন বল্লভ

দু’জনের মৃত্যুর পরে ২২ দিন কেটে গিয়েছে। তবু বদলায়নি যাদবপুরের প্রিন্স গোলাম হুসেন শাহ রোডের একটি বস্তির অবস্থা। এখনও ডেঙ্গি-আতঙ্কে আছেন বাসিন্দারা। বস্তির অন্তত চার জন জ্বরে আক্রান্ত। সেখানকার যে তরুণীর মৃত্যু হয়েছিল, তাঁর শিশুকন্যার জন্মদিনও বৃহস্পতিবার পালিত হয়েছে মশারি টাঙিয়ে।

ওই এলাকা পুরসভার ৯৩ নম্বর ওয়ার্ডে। স্থানীয় কাউন্সিলর তথা মেয়র পারিষদ (রাস্তা) রতন দে-র দাবি, ‘‘নতুন করে জ্বরের খবর নেই। সব ঠিক করে দিয়েছি। যাঁরা আগে আক্রান্ত হয়েছিলেন, তাঁদের কয়েক জনেরই এখনও জ্বর।’’

নভেম্বরের গোড়ায় ওই বস্তিতে দু’জনের মৃত্যু শোরগোল ফেলে দেয়। তাঁদের পরিবার দাবি করে, দু’জনেরই ডেঙ্গি হয়েছিল। যদিও হাসপাতালের ডেথ সার্টিফিকেটে লেখা ছিল, ‘এন এস-১ পজিটিভ। ভাইরাল ফিভার উইথ শক সিন্ড্রোম।’ শীতের শুরুতে ওই মৃত্যুর ঘটনায় অস্বস্তিতে পুরসভা। পুর আধিকারিকেরা জানান, চলতি বছরে বস্তি এলাকায় ডেঙ্গির খবর মেলেনি সে ভাবে। মৃত্যুও আগের থেকে কম। পুরকর্তাদের নির্দেশে ওই এলাকায় স্বাস্থ্য শিবির বসানো হয়। কাউন্সিলর বলেন, ‘‘ওই শিবিরে এখন বেশি লোকজন আসছেন না। কয়েক দিন পরে শিবির তুলে দেব।’’

স্থানীয় বাসিন্দারা অবশ্য ভিন্নমত। ওই বস্তির এক বাসিন্দার কথায়, ‘‘দু’টি মৃত্যুর পরে কয়েক দিন সাফাই হয়েছিল। তার পরে সব আগের মতো। নালার জল আটকে উপচে পড়ছে। ঘরে ঘরে জ্বর। ময়লাও জমে থাকছে রাস্তায়।’’ ৭ নভেম্বর মৃত্যু হয়েছিল দিশা বর্মণের। তাঁর স্বামী রাজেশ বর্মণ বলেন, ‘‘আমাদের পাশেই থাকে রোহিত দাসের পরিবার। ওঁদের ঘরে তিন জনের জ্বর। এক জন হাসপাতালে।’’ রাজেশ জানান, স্ত্রীর মৃত্যুর পর থেকে তিন মাসের ছেলে আয়াংশ ও চার বছরের কন্যা অনন্যাকে বস্তির বাইরে মাসির বাড়িতে রাখা হচ্ছে। যেটুকু সময় তারা বস্তিতে থাকছে, তা মশারির নীচেই। রাজেশ বলেন, ‘‘সাহস দেখাই কী করে? ওদের যদি মশা কামড়ায়?’’ এ দিনই ছিল অনন্যার জন্মদিন। মশারির নীচেই সে কেক কেটেছে।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, সেখানে বন্ধ একটি কারখানার ভিতরেও জমে আছে আগাছা, জঞ্জাল। দু’টি মৃত্যুর পরে ওই কারখানাকে নোটিস পাঠিয়ে সাফাই করতে বলেছিল পুরসভা। তবে সে কাজ কিছুই হয়নি বলে অভিযোগ। এ নিয়ে রতন দে বলেন, ‘‘আমি কী করব? ওটা আমার এক্তিয়ারে পড়ে না!’’ তা হলে নোটিস পাঠানোর অর্থ কী? উত্তর নেই।

ওই ওয়ার্ডের আর এক দিকে যোধপুর পার্ক। সেখানকার বাসিন্দাদেরও অভিযোগ, পুরসভা মশা দমনের জন্য কিছুই প্রায় করে না। তেল স্প্রে করা থেকে নিয়মিত রাস্তা পরিষ্কার বা জঞ্জাল সাফাই— ঘাটতি রয়েছে প্রায় সব ক্ষেত্রেই।

Birthday Girl Child Death Dengue Mosquito Net
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy