E-Paper

বাজির বোঝা থানায় থানায়, মামলা মেটার আগে পর্যন্ত পাহারায় পুলিশ

দমকলের গাড়ি পাঠিয়ে প্রতিদিন নিয়ম করে দু’ঘণ্টা ধরে জল দিয়ে ভিজিয়ে ঠান্ডা করে রাখা হচ্ছে বাজি! এর সঙ্গেই ছোটাছুটি চলছে আদালতে। দ্রুত রায় বার করিয়ে বাজি নিষ্ক্রিয় না করা পর্যন্ত শান্তি নেই!

নীলোৎপল বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ২৫ জুন ২০২৫ ০৭:২২
বাজি অন্য কোথাও সরিয়ে রাখা যাচ্ছে না, নিষ্ক্রিয়ও করা যাচ্ছে না!

বাজি অন্য কোথাও সরিয়ে রাখা যাচ্ছে না, নিষ্ক্রিয়ও করা যাচ্ছে না! —প্রতীকী চিত্র।

ডিউটি তালিকা তৈরি করার সময়ে আলাদা করে ঠিক করতে হচ্ছে, বাজি পাহারা দেবেন কে? হয় সিভিক ভলান্টিয়ার, নয়তো কনস্টেবল পদমর্যাদার কাউকে দিয়ে সর্বক্ষণ চোখে চোখে রাখতে হচ্ছে বাজির বাক্স! কোনও ভাবে দাহ্য কিছু উড়ে এসে পড়লে বা অত্যধিক গরমের জেরে কিছু হলে আর রক্ষা নেই! থানা-সহ উড়ে যেতে পারে আশপাশের অনেক কিছুই। কোনও কারণে উদ্বেগ বাড়লেই এর পরে খবর যাচ্ছে দমকল কেন্দ্রে। সেখান থেকে দমকলের গাড়ি পাঠিয়ে প্রতিদিন নিয়ম করে দু’ঘণ্টা ধরে জল দিয়ে ভিজিয়ে ঠান্ডা করে রাখা হচ্ছে বাজি! এর সঙ্গেই ছোটাছুটি চলছে আদালতে। দ্রুত রায় বার করিয়ে বাজি নিষ্ক্রিয় না করা পর্যন্ত শান্তি নেই!

ধরা পড়া বাজি নিয়ে এমনই পরিস্থিতি রাজ্যের একাধিক থানায়। পুলিশ সূত্রের খবর, এই বাজি অন্য কোথাও সরিয়ে রাখা যাচ্ছে না, নিষ্ক্রিয়ও করা যাচ্ছে না! কারণ, ধরা পড়ার সঙ্গে সঙ্গেই মামলা ঠুকে দিচ্ছেন বাজি ব্যবসায়ীরা। ফলে, আটক করা বা দুর্ঘটনাগ্রস্ত গাড়ির মতো মামলায় যুক্ত সামগ্রী হিসাবে বাজিও সামলে রাখতে হচ্ছে পুলিশকেই। যত দিন মামলার নিষ্পত্তি না হচ্ছে, তত দিন বয়ে বেড়াতে হচ্ছে বাজির বোঝা। এর জেরে কার্যত বারুদের স্তূপের উপরেই কাজ চলছে ওই সমস্ত থানায়। কিন্তু উদ্ধার হওয়া বাজি বিস্ফোরণে কী পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে, দিনকয়েক আগেই তা দেখা গিয়েছে ডায়মন্ড হারবার থানায়। সেখানে থানা চত্বরে রাখা উদ্ধার হওয়া বাজি ফেটে আগুন ধরে যায়। দমকলের তৎপরতায় পরিস্থিতি তেমন জটিল হয়নি। তারও দিনকয়েক আগে মহেশতলা থানা চত্বরেও উদ্ধার করা বাজি এবং মশলার ড্রামে আগুন ধরে যায়। প্রশ্ন ওঠে, বিপদের আশঙ্কা সত্ত্বেও কেন পুলিশ এই ভাবে বাজি মজুত রাখবে? কেন উদ্ধার হওয়া বাজি দ্রুত নিষ্ক্রিয় করা হবে না?

পুলিশকর্মীদের যুক্তি, কলকাতা পুলিশের কাছে গার্ডেনরিচে কেন্দ্রীয় মালখানা থাকলেও শহরতলি বা জেলা পুলিশে বহু ক্ষেত্রেই সেই সুযোগ নেই। তাই তাদের থানা বা থানা চত্বরেই উদ্ধার হওয়া সামগ্রী রেখে দিতে হয়। ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেটের একটি থানার এক অফিসার বললেন, ‘‘সরকারি ভাবে হলদিয়ায় ওয়েস্ট বেঙ্গল ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট লিমিটেড-এর ডাম্পিং গ্রাউন্ডে বাজি নিষ্ক্রিয় করতে হয়। কিন্তু সেখানে বাজি নিয়ে যাওয়া এবং নিষ্ক্রিয় করার খরচ সব মিলিয়ে প্রতি কিলোগ্রামে ৬০ থেকে ৭০ টাকা পড়ে। আড়াই থেকে তিন হাজার কেজি বাজি ধরা পড়লে নিষ্ক্রিয় করার খরচ দাঁড়ায় দেড় লক্ষাধিক টাকা। থানা-ভিত্তিক এত টাকা খরচ করার উপায় থাকে না। তাই অনেকগুলি থানা মিলিয়ে একসঙ্গে নিষ্ক্রিয় করার দিন ঠিক হয়।’’

বাজি ব্যবসার সঙ্গে যুক্তদের দাবি, পুজো যত এগিয়ে আসে, ততই বাড়ে পুলিশি ধরপাকড়। তা এড়াতে বছরের এই সময়েই মূলত চকলেট বোমা থেকে বিভিন্ন ধরনের শব্দবাজি রাজ্য থেকে বাইরে যেতে শুরু করে। কোথাও ফলের ঝুড়ি, কোথাও ঠান্ডা পানীয়ের ক্রেটের আড়ালে নিয়ে যাওয়ার সময়ে ধরা পড়ছে বাজি। গত এক মাসে বারুইপুর, নুঙ্গি, মহেশতলা থেকে আসা বাজি ধরা পড়েছে ভিআইপি রোড, বিমানবন্দর চত্বরে। ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেটে, উত্তরবঙ্গের বেশ কয়েকটি থানাতেও একই ভাবে বাজির গাড়ি ধরা পড়েছে বলে সূত্রের খবর। প্রায় ১১ দিন এমনই বাজি মজুত করে রাখতে হয়েছে বিমানবন্দর থানাতেও। পাশেই বিমানবন্দর, এয়ারপোর্ট অথরিটির অফিস।

থানার ওসি সলিল মণ্ডল বললেন, ‘‘বাজির স্তূপের সঙ্গেই ছিলাম। যিনি কিনেছিলেন, তিনি মামলা করেছিলেন। অবশেষে আদালত বাজি নিষ্ক্রিয় করার অনুমতি দেওয়ায় স্বস্তি পেয়েছি।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

police Firecrackers

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy