গাড়ির বয়স মাত্র এক বছর। তবে, শিক্ষা দফতরে ভাড়া দেওয়া হয়েছিল দেড় মাস আগে। মাসখানেক ধরে গাড়িটি ছিল শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর বাহন। দফতরের ‘বিশ্বস্ত’ চালক রেহান মোল্লার হাতেই থাকত স্টিয়ারিংয়ের দায়িত্ব। গাড়ির খোঁজ রাখতে সেই চালকের সঙ্গে নিয়মিত কথা হত গাড়ির মালিক রাজু ঘোষের। তবে, শনিবারের পর থেকে আর চালকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেননি গাড়ির মালিক। গাড়ির মালিকের দাবি, বার বার ফোন করলেও কখনও কেটে দেওয়া হয়েছে, কখনও বেজে গিয়েছে ফোন।
শিক্ষামন্ত্রীর ওই গাড়ির নীচে পড়েই যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ার আহত হওয়ার অভিযোগ উঠেছে। সামনে মানববন্ধন করে পড়ুয়ারা দাঁড়িয়ে থাকলেও শিক্ষামন্ত্রীর গাড়ি থামেনি বলে অভিযোগ। শনিবার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতরে এই ঘটনাকে ঘিরে ধুন্ধুমার পরিস্থিতি তৈরি হয়। জানা গিয়েছে, শিক্ষামন্ত্রী বসে থাকাকালীন যে গাড়িটির বিরুদ্ধে পড়ুয়াকে চাপা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে, সেই ডব্লিউবি ২৫এল ৭১৯৫ নম্বরের গাড়িটির মালিক আদতে রূপা ঘোষ এবং রাজু ঘোষ। উত্তর ২৪ পরগনার হাড়োয়ার পূর্ব আন্দুলিয়ার বাসিন্দা রাজু নিজে গাড়িচালক। গ্যাসের গাড়ি চালান। তিনি এ দিন ফোনে জানান, মাস দেড়েক আগে বিকাশ ভবনে ওই গাড়িটি ভাড়ায় দিয়েছিলেন তিনি। রাজুর কথায়, ‘‘শিক্ষামন্ত্রীই গাড়িটিতে চড়তেন। রেহান মোল্লা বলে এক জন চালাতেন। ওঁকে ফোন করেই গাড়ির খোঁজ রাখতাম। শনিবার গাড়ি ভাঙচুর হয়েছে দেখতে পেয়ে ওঁর সঙ্গে বার বার চেষ্টা করি যোগাযোগ করার। কিন্তু কথা হয়নি।’’
যদিও বিতর্কিত সেই গাড়ির চালক রেহান মোল্লার সঙ্গে এ দিন কথা হয়েছে সংবাদমাধ্যমের। রেহান জানিয়েছেন, ঘটনার সময়ে তাঁর গাড়ির কাচ ভেঙে দেওয়ায় সামনে দেখতে অসুবিধা হচ্ছিল। কাচের গুঁড়ো তাঁর চোখে-মুখে এসে পড়েছিল। ব্রাত্য বসুর দিকের জানলার কাচ, লুকিং গ্লাসও ভেঙে দেওয়া হয়। রেহানের দাবি, এই অবস্থায় তাঁদের গাড়ির ইঞ্জিনের উপরে যে ছাত্র বসেছিলেন, তিনি চালককে লক্ষ্য করে ইট মারতে উদ্যত হন। তখনই রেহান ব্রেক কষেন। ইঞ্জিন থেকে বাঁ দিকে পড়ে যান সেই ছাত্র। সেই সময়ে মন্ত্রীকে নিয়ে ডান দিক দিয়ে বেরিয়ে যায় গাড়িটি। রেহানের আরও দাবি, গাড়ির গতি তখন ১০ কিলোমিটারের বেশি ছিল না। তাঁর কথায়, ‘‘শয়ে শয়ে লোকের মধ্যে দিয়ে ওইটুকু রাস্তায় কখনও ৫০-৬০ কিলোমিটার গাড়ির গতি উঠতে পারে না। যাঁরা এ কথা বলছেন, তাঁরা ভুল বলছেন।’’
গাড়ির মালিক রাজু জানান, গাড়িটি বেলগাছিয়ার এক কোয়ার্টার্সে রাখা থাকত। গাড়ির ক্ষয়ক্ষতি জানতে রবিবার সেখানে গিয়েছিলেন তিনি। রাজু বলেন, ‘‘নিরাপত্তারক্ষীর কাছে রেহানের খোঁজ করেছিলাম। শুনলাম, সকালে রেহান এসেছিলেন কোয়ার্টার্সের এক জনের সঙ্গে দেখা করতে। কিছু পরে বেরিয়েও যান।’’
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)