Advertisement
E-Paper

সেরিব্রাল পলসির সঙ্গে যুদ্ধে পাশে ওঁরা

অরিজিতের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে তার স্কুলও। বাড়ি থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরের স্কুলে এখন আর হুইল চেয়ার ঠেলে ছেলেকে নিয়ে আসতে হয় না মিলিদেবীর।

শান্তনু ঘোষ

শেষ আপডেট: ১৯ জুলাই ২০১৮ ০৩:২৫
হাত বাড়ালেই: সহপাঠীদের সঙ্গে অরিজিৎ। বুধবার, বালির ওই স্কুলে। নিজস্ব চিত্র

হাত বাড়ালেই: সহপাঠীদের সঙ্গে অরিজিৎ। বুধবার, বালির ওই স্কুলে। নিজস্ব চিত্র

মাস খানেক হল ফের ফিজিওথেরাপি চালু হয়েছে তার। চলছে লড়াই। হুইল চেয়ারটা সরিয়ে রেখে কবে সে হাঁটবে নিজের পায়ে, জানলার গ্রিল ধরে যে শুধুই সেই দিনটার অপেক্ষা!

বালি শিক্ষানিকেতন বালক বিভাগের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র অরিজিৎ বসু জন্মগত সেরিব্রাল পলসিতে আক্রান্ত। নিজের ক্ষমতায় সে হাঁটতে, দাঁড়াতে পারে না। মন চাইলেও এক ছুটে ঘরের বাইরে
বেরিয়ে পড়তে পারে না ফটিকচন্দ্র পাঠক লেনের ওই বালক। বিছানার পাশের জানলার ধারে বসেই মনের ইচ্ছেগুলিকে নিয়ে স্বপ্নের জাল বোনে মেধাবী অরিজিৎ। বারবার বাদ সেধেছে আর্থিক প্রতিকূলতা। দু’ বছর আগে বাবার মৃত্যুর পর থেকে মা মিলিদেবীই সব অরিজিতের কাছে। শারীরিক প্রতিবন্ধী ছেলের ইচ্ছেপূরণ করতে দিন-রাত এক করে পাড়ায় জামাকাপড় ফেরি করেন মা। কিন্তু সামান্য রোজগারে জোগাড় করতে পারেননি ছেলের ফিজিওথেরাপির খরচ। ফলে এক বছর আগে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল চিকিৎসা।

সম্প্রতি সংবাদমাধ্যমে ওই ছোট্ট ছেলেটির শারীরিক ও আর্থিক প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে গবেষক হওয়ার ইচ্ছের খবর দেখে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন উত্তরপাড়া, হিন্দমোটরের দুই বাসিন্দা-সহ আরও এক সহৃদয় ব্যক্তি। প্রতি মাসে তাঁরা কয়েক হাজার টাকা করে দেন বলে জানান মিলিদেবী। যার জোরে আবার শুরু হয়েছে ফিজিওথিরাপি। মিলিদেবী বলেন, ‘‘আবার ফিজিওথেরাপি শুরু করায় ছেলেটার পা দু’টি একটু সোজা হয়েছে।’’ যাঁরা সাহায্যের হাত বাড়িয়েছেন, তাঁদের এক জন হলেন প্রাক্তন স্কুল শিক্ষিকা স্বপ্না মুখোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘শুনেছি অরিজিতের প্রিয় বিষয় বিজ্ঞান ও ইংরেজি। হতেও তো পারে ও এক দিন স্টিফেন হকিংয়ের মতো সব বাধা জয় করে গবেষক হল!’’

অরিজিতের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে তার স্কুলও। বাড়ি থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরের স্কুলে এখন আর হুইল চেয়ার ঠেলে ছেলেকে নিয়ে আসতে হয় না মিলিদেবীর। তার যাতায়াতের জন্য স্কুলই একটি টোটো ঠিক করে দিয়েছে বলে জানান পরিচালন সমিতির সভাপতি সুব্রত গোস্বামী।

অরিজিতের ‘জীবন যুদ্ধে’ সহযোগিতার হাত বাড়াতে বুধবার সকালে বালির ওই স্কুলে মিষ্টি, উপহার আর ২৫ হাজার টাকার চেক নিয়ে হাজির হয়েছিল বেলেঘাটার
কে জি বসু সরণির একটি সংগঠনের অমল বসু, দিলীপ ঘোষ ও সুব্রত ঘোষেরা। ওই সংগঠনের সঙ্গে স্কুলে হাজির ছিলেন চিকিৎসক সুমিত পোদ্দার-সহ আরও অনেকে। ফিজিওথেরাপির জন্য প্রতি মাসে কয়েক হাজার টাকা অরিজিতের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে তাঁরা দেবেন বলেও এ দিন জানান সুমিতবাবুরা।

সে সব ঘিরেই স্কুলে এ দিন চলছিল জমাটি অনুষ্ঠান। সকলের মাঝে হুইল চেয়ারে বসে অরিজিৎ। তাকে ঘিরে সহপাঠী থেকে শুরু করে সেই দাদারা, যারা প্রতিদিন কোলে করে ক্লাসে পৌঁছে দেয় অরিজিতকে। আর দূরে এক কোণে দাঁড়িয়ে আঁচলে চোখ মুছলেন মিলিদেবী। বলছেন, ‘‘ও আর কত যে লড়বে, ঈশ্বরই জানেন!’’

Cerebral Palsi Bali School student
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy