E-Paper

দাদুর কবরের দখল নিয়েছেন অন্য জন, ‘মালিকানা’ ফিরে পেতে মুখ্যমন্ত্রী মমতাকে চিঠি নাতনির

পদ্মভূষণে সম্মানিত চিকিৎসক রফিউদ্দিন আহমেদ মারা যান ১৯৬৫ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি। তাঁর নামে শিয়ালদহে ডেন্টাল কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

মেহবুব কাদের চৌধুরী

শেষ আপডেট: ০৬ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৬:৪২
An image of the grave

প্রয়াত চিকিৎসক রফিউদ্দিন আহমেদের কবর দেখাচ্ছেন তাঁর নাতি জাহিদ মাকসুদ। —নিজস্ব চিত্র।

পদ্মভূষণে সম্মানিত, প্রখ্যাত চিকিৎসককে কবরস্থ করা হয়েছিল ১৯৬৫ সালে, পার্ক সার্কাসের তিন নম্বর গোবরা কবরস্থানে। ১৯৭৫ সালে সেই একই জমিতে কবর দেওয়া হয় সুপ্রিম কোর্টের এক প্রাক্তন প্রধান বিচারপতির আত্মীয়াকেও। বর্তমানে তাঁর নাম লেখা ফলকই বসানো রয়েছে ওই জমিতে। প্রয়াত চিকিৎসকের কবরের মালিকানা ফিরে পেতে এবং সেখানে তাঁর নামে ফলক বসাতে চেয়ে তাই এ বার মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি লিখেছেন ওই চিকিৎসকের নাতনি।

পদ্মভূষণে সম্মানিত চিকিৎসক রফিউদ্দিন আহমেদ মারা যান ১৯৬৫ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি। তাঁর নামে শিয়ালদহে ডেন্টাল কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। রফিউদ্দিনের পরিবারের দাবি, পার্ক সার্কাসের তিন নম্বর গোবরা কবরস্থানে তাঁকে কবর দেওয়া হয়েছিল। ওই কবর দেওয়ার জমিটি তাঁর পরিবার কিনেও নিয়েছিল। কিন্তু অভিযোগ, ১৯৭৫ সালে সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি আলতামাস কবীরের (বর্তমানে প্রয়াত) এক আত্মীয়া আনোয়ারা খাতুনকেও ওই জমিতেই (যেখানে রফিউদ্দিন আহমেদের দেহ শায়িত আছে) কবরস্থ করা হয়।

প্রয়াত চিকিৎসকের নাতনি, পেশায় চিকিৎসক জারিনা আলিয়া তাই এ বার দাদুর নামে ফলক বসাতে চেয়ে মুখ্যমন্ত্রী ও কলকাতার মেয়রকে চিঠি লিখেছেন। তিনি জানিয়েছেন, তাঁর দাদুর কবরস্থানে আনোয়ারার নামফলক বসানো আছে। জারিনার অভিযোগ, ‘‘আমার দাদুকে যেখানে কবরস্থ করা হয়েছিল, সেখানে আলতামাস কবীরের আত্মীয়াকে কবর দেওয়া হয়নি। পাশের জায়গায় তাঁর দেহ শায়িত রয়েছে। অথচ, আমার দাদুর কবরে আনোয়ারার নামে ফলক বসানো রয়েছে। আমরা দাদুর নামফলক ওখানে বসাতে চাই। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র আমাদের কাছে রয়েছে।’’ যদিও প্রয়াত প্রধান বিচারপতির স্ত্রী মিন্না কবীরকে এ বিষয়ে জানতে চেয়ে ফোন করা হলে তিনি কোনও মন্তব্য করতে চাননি।

ইন্ডিয়ান ডেন্টাল অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিষ্ঠাতা, রফিউদ্দিন আহমেদের নাতনি জারিনা তাঁর দাদুর স্মৃতিরক্ষায় গত কয়েক বছর ধরে কলকাতা পুরভবনে নিয়ম করে আসছেন। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। বাধ্য হয়ে এই সমস্যার সমাধানে সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও মেয়র ফিরহাদ হাকিমকে চিঠি লিখেছেন তিনি। চিঠি পাঠিয়েছেন রাজ্য সংখ্যালঘু কমিশনেও। কিন্তু তার পরেও কাজ না হওয়ায় সম্প্রতি কলকাতা পুরসভার ‘টক টু মেয়র’ অনুষ্ঠানে সরাসরি ফোন করেন জারিনা। ফিরহাদ তাঁর আবেদন শুনে জানান, বিষয়টির দ্রুত সমাধানে তিনি দুই পরিবারের সদস্যদের নিয়ে আলোচনায় বসবেন।

রফিউদ্দিনের চার মেয়ে ও এক ছেলে। সকলেই মারা গিয়েছেন। চার মেয়ের মধ্যে ছোট, জুলেখা রুকসানা ছিলেন তারাতলার ইনস্টিটিউট অব হোটেল ম্যানেজমেন্টের প্রাক্তন অধ্যক্ষা। প্রয়াত জুলেখার কন্যা জারিনা ও পুত্র জাহিদ মাকসুদ এখন দাদুর কবরস্থানের ‘মালিকানা’ ফিরে পেতে প্রশাসনের দরজায় দরজায় ঘুরছেন। গোবরা গোরস্থানে প্রয়াত দাদুর কবরে কবি জসীমউদ্দিনের ‘কবর’ কবিতাটি আওড়াচ্ছিলেন নাতি জাহিদ। দাদুর কবরে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে বললেন, ‘‘জোড়হাত দাদু মোনাজাত কর, আয় খোদা! রহমান।/ ভেস্ত নসিব করিও সকল মৃত্যুব্যথিত প্রাণ।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Grave Mamata Banerjee Ownership

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy