Advertisement
E-Paper

সামনে থেকেও নজরে নেই হাসপাতালের লন্ড্রি

হাসপাতালের লন্ড্রিতে ঢুকে দেখা গেল, চূড়ান্ত প্রক্রিয়ার শেষ ধাপে ধোয়া কাপড় ভাঁজ করার পরে তা রাখা হচ্ছে মেঝেতে।

জয়তী রাহা

শেষ আপডেট: ১০ মে ২০১৯ ০০:২৮
স্তূপাকার: কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল চত্বরে এ ভাবেই পড়ে রয়েছে কাপড়ের গাঁটরি। ছবি: রণজিৎ নন্দী

স্তূপাকার: কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল চত্বরে এ ভাবেই পড়ে রয়েছে কাপড়ের গাঁটরি। ছবি: রণজিৎ নন্দী

রাস্তার উপরেই স্তূপীকৃত হয়ে পড়ে লাল, নীল, সবুজ রঙের কাপড়ের গাঁটরি। পাশ দিয়েই যাচ্ছে কুকুর-বেড়াল, গাড়ি। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল চত্বরে অবহেলায় পড়ে থাকা ওই সব গাঁটরির কোনওটিতে রয়েছে অপারেশন থিয়েটার, আইসিইউ-সহ বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে আসা রোগীদের ব্যবহৃত চাদর ও বালিশের ওয়াড়, কোনওটিতে বা অ্যাপ্রন, কম্বল।

কিন্তু এ ভাবে পড়ে কেন? উত্তর মিলল, ‘‘ধোয়া হবে।’’ কিন্তু ধোয়ার পরে কতটা বদলায় সে ছবি?

হাসপাতালের লন্ড্রিতে ঢুকে দেখা গেল, চূড়ান্ত প্রক্রিয়ার শেষ ধাপে ধোয়া কাপড় ভাঁজ করার পরে তা রাখা হচ্ছে মেঝেতে। এর পরে ওই হাসপাতালের নিজস্ব খোলা ট্রলিতে করে সে সব যায় নির্দিষ্ট ওয়ার্ডে। অন্য হাসপাতালের ধোয়া কাপড় পাঠিয়ে দেওয়া হয় মালবাহী গাড়িতে চাপিয়ে।

স্বাস্থ্য ভবন সূত্রের খবর, শহরের দু’টি হাসপাতালে রয়েছে এমন লন্ড্রি, যেখানে সরকারি হাসপাতালে ভর্তি থাকা রোগীদের ব্যবহৃত কাপড় ধোয়া হয়। এ দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে দু’টি বেসরকারি সংস্থাকে। একটি লন্ড্রি রয়েছে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। যেখানে ২৫টি সরকারি হাসপাতালের কাপড় ধোয়া হয়। অন্যটি রয়েছে বাঘা যতীন স্টেট জেনারেল হাসপাতালের বেসমেন্টে। সেখানে ১৬টি সরকারি হাসপাতালের কাপড় ধোয়ার কাজ চলে।

কী ভাবে চলে এই প্রক্রিয়া? একাধিক হাসপাতালের কর্তৃপক্ষ জানান, সাধারণ ওয়ার্ড, ওটি, আইসিইউ প্রভৃতি থেকে সংগৃহীত কাপড় আলাদা গাঁটরিতে পাঠানো হয় লন্ড্রিতে। দুই লন্ড্রির তরফে জানানো হয়েছে, রক্তমাখা বা দাগযুক্ত কাপড়গুলিকে প্রথমে বিশেষ কেমিক্যালে ধোয়া হয়। তার পরে যন্ত্রে কাচা হয়। বিভিন্ন বিভাগের কাপড় যাতে মিশে না যায় তাই মার্কার দিয়ে চিহ্নিত করা থাকে। সেই অনুযায়ী একই জায়গার জিনিস একত্রে কাচা হয়। এর পরে কাপড় ড্রায়ারে শুকিয়ে বিশেষ যন্ত্রে টানটান করা হয়। সব শেষে থাকে ভাঁজ করার পর্ব।

স্বাস্থ্য-সুরক্ষা নিয়ে নির্দেশিকা রয়েছে দেশের সর্বোচ্চ সংস্থা ‘ন্যাশনাল অ্যাক্রিডিটেশন বোর্ড ফর হসপিটালস অ্যান্ড হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার’-এর। সেখানে আছে, ‘হসপিটাল লিনেন’ কী পদ্ধতিতে পরিষ্কার করতে হবে। যার উদ্দেশ্য, হাসপাতালের ভিতর থেকে ছড়ানো সংক্রমণ (হসপিটাল অ্যাকোয়ার্ড ইনফেকশন) ঠেকানো। সারা বিশ্বের সঙ্গে ভারতেও এই সংক্রমণ ও তার কারণে মৃত্যুর সংখ্যা রীতিমতো ভাঁজ ফেলে কপালে। এই সংক্রমণ রুখতে পরিচ্ছন্নতার বড় ভূমিকা রয়েছে।

নির্দেশিকা অনুযায়ী, প্রথমে রোগীর ব্যবহৃত পোশাক থেকে ব্যাক্টিরিয়া, রক্ত দূর করতে বিশেষ রাসায়নিকে তা ধুতে হবে। শুকনো কাপড় ভাঁজ করে রাখতে স্বাস্থ্যসম্মত জায়গার ব্যবস্থা করতে হবে। কর্মীদের দস্তানা ও মুখোশ পরতেই হবে। দু’টি লন্ড্রিতেই দেখা গেল, নির্দেশিকার অনেক কিছুই মানা হয় না। কর্মীদের স্বাস্থ্য-সুরক্ষার দিকটা কেন দেখা হচ্ছে না? দুই সংস্থারই আধিকারিকদের দাবি, দস্তানা ও মুখোশের জোগানে সমস্যা রয়েছে। তাঁদের দাবি, নির্দেশিকা মেনেই পুরো কাজ হয়।

শহরের এক বেসরকারি হাসপাতালের ক্রিটিক্যাল কেয়ার চিকিৎসক সুরেশ রামাসুব্বান বলেন, ‘‘ব্যাক্টিরিয়া দূর করতে যন্ত্রে ধোয়ার আগে কয়েকটি ধাপ পেরোতে হয়। সে সব ঠিক মতো করলে সংক্রমণ ছড়ানোর আশঙ্কা রোখা যায়। রোগীর ব্যবহার করা কাপড় ঢাকা পাত্রে লন্ড্রিতে পাঠানো উচিত। ধোয়া কাপড় হাসপাতালে পৌঁছে দেওয়ার সময়ও ঢাকা থাকলে ভাল হয়।’’

দুই লন্ড্রিতে নির্দেশিকা মানা হচ্ছে কি না, তার কি নজরদারি চলে? রাজ্যের স্বাস্থ্য-অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তী বলেন, ‘‘দরপত্রের মাধ্যমে দীর্ঘ সময়ের জন্য নিয়োগ করা হয়েছে সংস্থা দু’টিকে। স্বাস্থ্য ভবনের পক্ষে এত দেখা সম্ভব নয়। সংশ্লিষ্ট হাসপাতালের দায়িত্ব পালন করা উচিত।’’ কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের সুপার ইন্দ্রনীল বিশ্বাস বলেন, ‘‘এ বিষয়ে কী দায়িত্ব, জানি না। পরিদর্শন করার নিয়ম আছে কি না জেনে বলব।’’

Kolkata Medical College Laundry
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy