Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪
Awareness

জন্ম-বধিরতা রোধে মূল বাধা সচেতনতার অভাব

চিকিৎসকদের মতে, জন্মগত বধিরতা রোধে প্রাথমিক ধাপ হল ‘ওটো অ্যাকাউস্টিক এমিশনস’ (ওএই) স্ক্রিনিং।

সৌম্যদীপ প্রামাণিক এবং প্রত্যুষা ভৌমিক।

সৌম্যদীপ প্রামাণিক এবং প্রত্যুষা ভৌমিক।

সৌরভ দত্ত
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ মার্চ ২০২০ ০২:০১
Share: Save:

আদরের নামে শব্দ করে অনেক ক্ষণ ধরে ডেকে চলেছেন বাবা। খুদে সৌম্যদীপ প্রামাণিকের ভ্রুক্ষেপ নেই। মেয়ে প্রত্যুষা ভৌমিক ঘুরে তাকাবে, এই আশা নিয়ে যত জোরে সম্ভব মাটিতে থালা-বাসন ছুড়ছেন মা। কিন্তু একরত্তি শিশুকন্যা প্রতিক্রিয়াহীন। তিন বছর আগের ঘটনা মনে পড়লে এখনও চোখে জল আসে সঞ্জীব প্রামাণিক, পূজা ভৌমিকের। ঠিক সময়ে চিকিৎসা করানোয় মুখে বোল ফুটেছে দুই শিশুর। কিন্তু সচেতনতার অভাবে প্রতিদিন অসংখ্য সৌম্যদীপ, প্রত্যুষারা হারিয়ে যাচ্ছে বলে আক্ষেপ করছে চিকিৎসক শিবির।

চিকিৎসকদের মতে, জন্মগত বধিরতা রোধে প্রাথমিক ধাপ হল ‘ওটো অ্যাকাউস্টিক এমিশনস’ (ওএই) স্ক্রিনিং। জন্মের এক মাসের মধ্যে ৩০ সেকেন্ডের ‘স্ক্রিনিং’ বা পরীক্ষায় সন্তোষজনক ফল না-মিললে ‘ব্রেন স্টেম ইভোকড রেসপন্স অডিয়োমেট্রি’ বা ‘বেরা’র পরামর্শ দেন চিকিৎসকেরা। বধিরতা ধরা পড়লে প্রথমে তিন মাস ‘হিয়ারিং এড’ দিয়ে দেখা হয়। কাজ না-হলে চিকিৎসকেরা ‘ককলিয়ার ইমপ্ল্যান্ট’ বা অন্তঃকর্ণ প্রতিস্থাপনের পথে হাঁটেন।

আজ, মঙ্গলবার বিশ্ব শ্রবণ দিবস। তার আগে এসএসকেএম হাসপাতালের ‘ইনস্টিটিউট অব ওটো রাইনো ল্যারিঙ্গোলজি’র চিকিৎসক অরিন্দম দাস জানান, শিশুর বয়স ছ’বছর হয়ে গেলে অন্তঃকর্ণ প্রতিস্থাপনে তেমন সুফল মেলে না। অভিভাবকেরা যত দ্রুত সন্তানকে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাবেন, ততই ভাল। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে সেটাই হয় না। ‘ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব স্পিচ অ্যান্ড হিয়ারিং ডিসঅ্যাবিলিটিজ়’-এর (এনআইএসএইচডি) এক কর্তা জানান, শহরাঞ্চলের তুলনায় গ্রামাঞ্চলে সচেতনতার অভাব বেশি।

পূর্ব মেদিনীপুরের বিবিচকের বাসিন্দা সঞ্জীব বলেন, ‘‘ছেলে যখন দু’বছরের, তখনই খটকা লেগেছিল। কিন্তু এক আত্মীয় বলল, ওর মেয়ে আড়াই বছর পরে কথা বলেছে।’’ আর পূজা বললেন, ‘‘মেয়ের অস্ত্রোপচারে স্বামী রাজি ছিলেন না। ওঁকে বোঝাতেই ছ’মাস সময় লেগেছে!’’

তা ছাড়া প্রতিস্থাপনের যন্ত্রের দাম অন্তত ছ’লক্ষ টাকা। প্রতিবন্ধীদের সহায়তা প্রকল্পে (এডিআইপি) সেই যন্ত্র দেয় এনআইএসএইচডি। কিন্তু চাহিদার তুলনায় জোগান অল্প। প্রতি বছর সারা দেশে ৫০০টি যন্ত্র দেয় কেন্দ্রীয় সংস্থা। যন্ত্র-প্রার্থী শিশুর সংখ্যা অনেক বেশি। এসএসকেএমের চিকিৎসক অরিন্দমবাবু বলেন, ‘‘আবেদনের পরে যন্ত্র আসতে আট মাস থেকে এক বছর অপেক্ষা করতে হয়।’’ আবেদনের ছ’বছর পরে যন্ত্র এসেছে, এমনও অভিজ্ঞতা রয়েছে এসএসকেএমের চিকিৎসকদের।

শিশুদের বধিরতা নিয়ন্ত্রণে মধ্যপ্রদেশ, তামিলনাড়ু, রাজস্থানের মতো রাজ্যের নিজস্ব তহবিল আছে। এনআইএসএইচডি-র অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর বি নাগেশ্বর রাও জানান, রাষ্ট্রীয় বাল সুরক্ষা কার্যক্রমে যন্ত্র দেওয়ার জন্য পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কাছেও আবেদন জানানো হয়েছিল। কিন্তু তেমন সাড়া মেলেনি।

বধিরতা সংক্রান্ত অভিভাবক সংগঠনের কর্ণধার স্নিগ্ধা সরকারের বক্তব্য, রাজ্যে ১২টি মেডিক্যাল কলেজে সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে বিনামূল্যে ‘ওএই’ বা ‘বেরা’র ব্যবস্থা রয়েছে। কিন্তু প্রসূতি-সংখ্যার চাপে ‘হাই রিস্ক প্রেগন্যান্সি’ ছাড়া সেই স্ক্রিনিংয়ের চল নেই। তাঁর কথায়, ‘‘প্রসবের পরেই মেডিক্যাল কলেজ-সহ সব সরকারি হাসপাতালে স্ক্রিনিং বাধ্যতামূলক হওয়া উচিত। নইলে রাজ্যে কত শিশু জন্মগত বধিরতার শিকার, বোঝা যাবে কী করে? রাজ্যের কাছে কোনও পরিসংখ্যানই নেই!’’

ইনস্টিটিউট অব ওটো রাইনো ল্যারিঙ্গোলজির প্রধান অরুণাভ সেনগুপ্ত বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর তহবিল থেকে পাঁচ-ছ’টি শিশুকে ওই যন্ত্র দেওয়া হয়েছে। কেন্দ্র যে-যন্ত্র দেয়, তা খুবই কম। অন্যান্য রাজ্যের মতো আমাদের এখানেও স্বাস্থ্য দফতর যদি শিশুদের মুখ চেয়ে একটি সুনির্দিষ্ট নীতি প্রণয়ন করে, খুব ভাল হয়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Awareness Deafness Health
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE