Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
App Cab

অ্যাপ-ক্যাবে চেপে বসছে সার্জ প্রাইসের পুরনো ফাঁস

যাত্রীদের একটি বড় অংশের অভিযোগ, গত কয়েক সপ্তাহে শহরের অ্যাপ-ক্যাবে উঠে এ ভাবেই ভুগতে হচ্ছে।

ভোগান্তি: অ্যাপ-ক্যাবে অতিরিক্ত সার্জ প্রাইস নেওয়ার অভিযোগ তুলছেন যাত্রীরা।

ভোগান্তি: অ্যাপ-ক্যাবে অতিরিক্ত সার্জ প্রাইস নেওয়ার অভিযোগ তুলছেন যাত্রীরা। নিজস্ব চিত্র

নীলোৎপল বিশ্বাস
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ০৫:৫৪
Share: Save:

ঘটনা ১: স্কুলের প্রথম দিন জরুরি একটি কাগজ নিয়ে বেরোতে ভুলে গিয়েছিল মেয়ে। মনে পড়েছে রুবি পার্কে স্কুলে পৌঁছে। মেয়ের সমস্যা মেটাতে দ্রুত সেখান থেকে উল্টোডাঙায় বাড়ি যাওয়ার জন্য অ্যাপ-ক্যাব বুক করতে গিয়ে অবাক হয়ে যান সায়ন বন্দ্যোপাধ্যায় নামে এক ব্যক্তি। যে পথ ২৮০ টাকায় এসেছেন, দেড় ঘণ্টা পরে সেই পথই যেতে ভাড়া দেখাচ্ছে ৩৯০ টাকা!

ঘটনা ২: গত সোমবার সন্ধ্যায় বড়বাজারের টি-বোর্ড এলাকা থেকে বাড়ি যাবেন বলে অ্যাপ-ক্যাব বুক করেছিলেন টালিগঞ্জ ফাঁড়ির বাসিন্দা সৈকত হাজরা। ফোন দেখিয়েছিল, ৩২০ টাকা ভাড়া হতে পারে। অনলাইনে ভাড়া মেটানোর পথ বেছে রেখেছিলেন সৈকত। বাড়ির সামনে নেমে তিনি মোবাইলে দেখেন, ৪০০ টাকা কেটে নেওয়া হয়েছে। ৮০ টাকা বাড়তি নেওয়া হল কেন? চালকের দাবি, হয়তো ‘সার্জ প্রাইস’ নেওয়া হয়েছে! কিন্তু কিসের ভিত্তিতে এবং কোন হিসেবে এই বাড়তি ভাড়া, তার কোনও উত্তর নেই।

যাত্রীদের একটি বড় অংশের অভিযোগ, গত কয়েক সপ্তাহে শহরের অ্যাপ-ক্যাবে উঠে এ ভাবেই ভুগতে হচ্ছে। তাঁদের আরও দাবি, হঠাৎ করেই ভাড়া দ্বিগুণ বা তিন গুণ হয়ে যাচ্ছে। ক্যাবটি যে সংস্থার, তাদের দফতরে অভিযোগ জানিয়েও সুরাহা মিলছে না। কোনও সংস্থাই গ্রাহককে জানাচ্ছে না, কত সার্জ প্রাইস নেওয়া হয়েছে! এক ভুক্তভোগী বললেন, ‘‘আনলক-পর্বের শুরুতে কিছু দিন স্বাভাবিক ভাড়ায় ক্যাবে ওঠা গিয়েছিল। এখন পরিস্থিতি জটিল।’’ কখনও সাড়ে তিন কিলোমিটার পথ যাওয়ার জন্য ২৫০ টাকা ভাড়া দেখাচ্ছে। কখনও আবার চার কিলোমিটার যেতে সাড়ে তিনশো টাকারও বেশি ভাড়া হাঁকা হচ্ছে বলে অভিযোগ! ভুক্তভোগীদের দাবি, এ নিয়ে বিন্দুমাত্র হেলদোল নেই প্রশাসনের। বার বার আলোচনা হলেও অ্যাপ-ক্যাবের সর্বাধিক ও সর্বনিম্ন ভাড়া বেঁধে দেওয়ার পথে হাঁটতেই পারেনি সরকার।

এই মুহূর্তে শহরে দু’টি অ্যাপ-ক্যাব সংস্থার রমরমা। তারা চাহিদা এবং জোগানের উপরে ভিত্তি করে সার্জ প্রাইস বসিয়ে ভাড়া নেয়। ওই দুই সংস্থার যুক্তি, শহরের যেখানে হঠাৎ ভাড়া বেড়ে যায়, সেখানে আয়ের আশায় ক্যাবচালকেরা পৌঁছে যান। এতেই ভাড়া কমে আসে। সার্জ প্রাইস লাগে না। অর্থাৎ, জোগান বাড়াতেই সার্জ প্রাইস বসানো হয়। যদিও অ্যাপ-ক্যাব মালিক সংগঠনগুলির দাবি, এই যুক্তিকে হাতিয়ার করেই বাড়তি ভাড়া নেওয়া হচ্ছে। সরকারি হিসেবে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ক্যাবের ক্ষেত্রে প্রতি কিলোমিটারে ভাড়া হওয়ার কথা ১৮.৭৫ টাকা। নন-এসি ক্যাবের ক্ষেত্রে সেটি প্রতি কিলোমিটারে ১৫ টাকা। এক ক্যাবমালিকের প্রশ্ন, ‘‘প্রতি কিলোমিটার ১৮.৭৫ টাকা হিসেবে যেখানে ৭৫ টাকা ভাড়া হওয়ার কথা, সেখানে কী করে ২০০ টাকা ভাড়া হয়?’’

ওয়েস্ট বেঙ্গল অনলাইন ক্যাব অপারেটর্স গিল্ডের সাধারণ সম্পাদক ইন্দ্রনীল বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘সার্জ প্রাইস নিয়ে বলে বলে আমরা ক্লান্ত। ভাড়ার ১০ শতাংশের বেশি সার্জ প্রাইস হতেই পারে না। সরকারের উচিত অবিলম্বে ভাড়ার মাপকাঠি বেঁধে দেওয়া। এই ভাড়া-সহ আরও কিছু বিষয় নিয়ে আমরা মঙ্গলবার পরিবহণ দফতরে চিঠি দিয়েছি।’’

কিন্তু চিঠি বা একাধিক অভিযোগের পরেও সার্জ প্রাইস কমে না কেন? রাজ্যের পরিবহণসচিব রাজেশ সিংহকে ফোন করা হলে তিনি শুধু বলেছেন, ‘‘বৈঠকে ব্যস্ত আছি। দেখছি কী করা যায়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

App Cab
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE