প্রতীকী ছবি।
বয়স মাত্র তিন বছর আট মাস। কিন্তু এর মধ্যেই দু’-দু’বার ‘অনাথ’ হতে হল ফুটফুটে শিশুকন্যাটিকে।
সাড়ে তিন বছর আগে কেউ বা কারা বজবজের এক নার্সিংহোমের সামনে ফেলে গিয়েছিল সদ্যোজাত এক শিশুকন্যাকে। মেয়েটিকে কুড়িয়ে পান ওই নার্সিংহোমের আয়া নমিতা বেরা। তখনই আইন না জানা, সন্তানহীন নমিতা শিশুটিকে নিজের ঘরে নিয়ে যান এবং মেয়ে হিসেবে বড় করতে থাকেন তাকে। কিন্তু পুলিশে কিছু জানাননি তিনি।
কিন্তু বছর তিনেকের মধ্যেই অসুস্থ হয়ে পড়েন বজবজ রেল গেটের বাসিন্দা নমিতা। তিনি ভর্তি হন এম আর বাঙুর হাসপাতালে। কিন্তু সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরতে পারেননি তিনি। চিকিৎসা চলাকালীন গত ৫ জানুয়ারি হাসপাতালেই মৃত্যু হয় নমিতার। কিন্তু তখনও বছর সাড়ে তিনের শিশুটি জানতে পারেনি যে মায়ের মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে বাবাকেও ছেড়ে পুলিশের সঙ্গে হোমে যেতে হবে তাকে।
নমিতার মৃত্যুর পরে তাঁর স্বামী দিলীপ হাসপাতালে এলে তাঁকে দেখে সন্দেহ হয় কর্মীদের। নেশাগ্রস্ত চেহারার, পঞ্চাশোর্ধ্ব ব্যক্তির কোলে কী করে এত ছোট ফুটফুটে শিশুকন্যা এল? কিন্তু বার বার জিজ্ঞাসা করলেও দিলীপ বলতে থাকেন ‘‘ও আমারই মেয়ে!’’ কিন্তু মেয়েটি কবে জন্মেছে তা জানতে চাইলে স্পষ্ট করে কিছু বলতে পারেননি নেশাগ্রস্ত দিলীপ। অসংলগ্ন উত্তর দিতে শুরু করেন তিনি। এর পরেই হাসপাতালের কর্মীরা পুলিশে খবর দিলে তারা এসে জেরা শুরু করে দিলীপকে।
পুলিশের জেরার মুখে ভেঙে পড়ে দিলীপ স্বীকার করেন যে শিশুকন্যাটি তাঁদের নয়। তিনি
জানান, মেদিনীপুরের বাসিন্দা হলেও তিনি ও তাঁর স্ত্রী মহেশতলা থানার ১৪ নম্বর বজবজ রেল গেটের কাছে থাকেন। তিনি তেমন কিছু কাজ করেন না। কিন্তু তাঁর স্ত্রী নমিতা বজবজের একটি হাসপাতালে আয়ার কাজ করতেন। শিশুটিকে কুড়িয়ে পাওয়ার পর থেকে নিজেদের কাছে রেখে মানুষ করেছেন তাঁরা।
দিলীপের কাছ থেকে সব জানার পরে পুলিশ সিদ্ধান্ত নেয়, শিশুটিকে তুলে দেওয়া হবে কলকাতা চাইল্ডলাইনের হাতে। সেই মতো শিশুটিকে চাইল্ডলাইন নিজেদের হেফাজতে নেয় এবং রবিবার কলকাতা শিশু কল্যাণ সমিতির নির্দেশ অনুযায়ী তাকে পাঠানো হয় হোমে।
কলকাতা শিশু কল্যাণ সমিতি জানায়, মেয়েটিকে কেউ বা কারা ফেলে দিয়ে গিয়েছিল বলে পুলিশের কাছে দিলীপ দাবি করেছেন। সে অর্থে মেয়েটি অনাথ। কিন্তু তাও আইন মেনে কয়েক মাসের মধ্যে শিশুটির ছবি দিয়ে সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপন দেওয়া হবে। কেউ দাবিদার থাকলে উপযুক্ত প্রমাণ দেখিয়ে তাঁরা শিশুটিকে নিয়ে যেতে পারবেন। কেউ এগিয়ে না এলে শিশুটিকে দত্তকের জন্য পাঠানো হবে নির্দিষ্ট হোমে। পরে আইন অনুযায়ী কেউ দত্তক নিতে চাইলে তখন হয়তো আবার বাবা-মা পাবে দ্বিতীয়বার মা হারানো শিশুকন্যা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy