E-Paper

বাড়ি হেলে পড়ার পরিণতি এড়াতে ভরসা কি সেই ক্রেতা সচেতনতাই?

কোথাও কোথাও আবার প্রোমোটার বা সংশ্লিষ্ট প্রোমোটিং সংস্থার নামে ‘রিয়েল এস্টেট রেগুলেশন অথরিটি’ বা রেরা-তে অভিযোগ করে ক্ষতিপূরণ চাওয়ার উপায়ও থাকছে না।

নীলোৎপল বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ০৮:০৫
মানিকতলা রোডের হেলে পড়া বাড়ি।

মানিকতলা রোডের হেলে পড়া বাড়ি। —নিজস্ব চিত্র।

কোথাও নির্মীয়মাণ একটি ফ্ল্যাট দেখিয়েই অগ্রিম নেওয়া হচ্ছে একাধিক জনের কাছ থেকে। কিন্তু নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার পরে বিক্রি হয়তো করা হচ্ছে চতুর্থ কাউকে! অভিযোগ, প্রতিবাদ করে লাভ হচ্ছে না, পুলিশে গিয়েও সুরাহা মিলছে না। কোথাও ফ্ল্যাট কেনার ১০ বছর পরেও রেজিস্ট্রেশন করানো যাচ্ছে না, সংশ্লিষ্ট ফ্ল্যাটের ‘কমপ্লিশন সার্টিফিকেট’ বা সিসি না থাকায়। খোঁজ করে তখন জানা যাচ্ছে, প্রোমোটার পুরসভা থেকে সিসি-র কাগজ সংগ্রহই করেননি। যত দিনে বিষয়টি জানা গিয়েছে, তত দিনে ফ্ল্যাট হস্তান্তরিত হয়ে গিয়েছে। কোথাও কোথাও আবার প্রোমোটার বা সংশ্লিষ্ট প্রোমোটিং সংস্থার নামে ‘রিয়েল এস্টেট রেগুলেশন অথরিটি’ বা রেরা-তে অভিযোগ করে ক্ষতিপূরণ চাওয়ার উপায়ও থাকছে না। জানা যাচ্ছে, সংশ্লিষ্ট প্রোমোটার বিশাল নির্মাণকাজ চালালেও নির্মাণ প্রকল্পটি ‘রেরা’-তে নথিভুক্তই করেননি।

এই পরিস্থিতিতে কোনটা বেআইনি, কোনটা নিয়ম-বহির্ভূত ভাবে তৈরি, তা বুঝতে না পেরে, আবার কোনও কোনও ক্ষেত্রে বুঝেও সারা জীবনের সঞ্চিত অর্থ অনেকেই ঢেলে দিচ্ছেন মাথা গোঁজার নিশ্চিত ঠাঁই একটি ‘ভাল বাসা’র খোঁজে। তার পরেই দেখা যাচ্ছে, সেই মাথা গোঁজার ঠাঁই-ই হয়ে উঠছে গলার কাঁটা। কোথাও নির্মাণ হেলে পড়ছে, কোথাও রাতারাতি ভেঙে পড়ে প্রাণহানির ঘটনা ঘটাচ্ছে। বহু ক্ষেত্রে আবার পুলিশ-প্রশাসনের তরফে বেআইনি নির্মাণ বলে চিঠি আসছে। এর পরে না দায় নিতে চাইছেন বাড়ির মালিক, না প্রোমোটার! ভুগছেন ফ্ল্যাট কিনে ফেলা সেই সাধারণ মানুষ। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, সাধারণ মানুষের ভোগান্তি হচ্ছে বুঝেও কেন প্রশাসন কড়া হচ্ছে না? কেন জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হেলমেট পরানোর মতো প্রথম থেকেই কড়া পদক্ষেপ করা হচ্ছে না?

এই প্রশ্নের উত্তর তো মিলছেই না, উল্টে ক্রেতাদের সচেতনতার উপরেই জোর দিচ্ছেন পুলিশ-প্রশাসনের শীর্ষ কর্তারা। ঠিক কী কী দেখে নিয়ে নতুন বাসস্থান বা ফ্ল্যাট কেনা উচিত, সে ব্যাপারে সচেতন করার জন্য শহরের বড় বড় নির্মাণ সংস্থার কর্তাদের উদ্যোগী হতে বলছে পুলিশ। নির্মাণ সংস্থাগুলির সংগঠন সূত্রে জানা যাচ্ছে, তিন কাঠা জমিতে ছ’টি বা তার বেশি ফ্ল্যাট তৈরি করতে হলেই সংশ্লিষ্ট প্রোমোটারকে ‘রেরা’-তে প্রকল্পটি নথিভুক্ত করাতে হয়। নথিভুক্ত থাকা কোনও ফ্ল্যাটে গলদ থাকলে এবং ক্রেতা ‘রেরা’র দ্বারস্থ হলে সংশ্লিষ্ট প্রোমোটারের বিরুদ্ধে ক্ষতিপূরণের নির্দেশ দেওয়ার বিধান রয়েছে। সে ক্ষেত্রে প্রকল্পের খরচের ১০ শতাং‌শ সর্বোচ্চ ক্ষতিপূরণ হিসাবে দিতে হতে পারে। যদিও হাজরার বাসিন্দা স্বর্ণাভ ঘোষ নামে এক ব্যক্তির অভিযোগ, ‘‘বাড়ির বিভিন্ন অংশ ভেঙে পড়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। কিন্তু রেরা-র দ্বারস্থ হয়েও সুরাহা হচ্ছে না, নির্মাণ প্রকল্পটি তাদের অধীনে নথিভুক্ত না থাকায়।’’

অভিযোগ, বেশির ভাগ ছোট এবং মাঝারি প্রোমোটার ‘রেরা’-তে প্রকল্প নথিভুক্ত করান না। লোকবলের অভাবে কোথায়, কোন নির্মাণকাজ চলছে, তা খতিয়ে দেখে প্রোমোটারের বিরুদ্ধে পদক্ষেপও করতে পারে না রেরা। নির্মাণ ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত একটি সংস্থার কর্তা আবার বলছেন, ‘‘যে কোনও নির্মাণকাজ শুরুর আগে পুরসভা থেকে আবাসনের কাঠামোর অনুমোদিত নকশা নিতে হয়। নির্মাণকাজ শেষ হলে সিসি নেওয়ার আগে একটি সংশোধিত নকশা তৈরি করে পুরসভায় জমা দিতে হয়। এই নকশাতেই ধরা পড়ে, কতটা অংশ বাড়তি নির্মাণ করা হয়েছে। এর পরে সব ঠিক থাকলে সিসি পাওয়া যায়। কিন্তু ভুক্তভোগীদের দাবি, বিধাননগর, দমদমের মতো বিভিন্ন জায়গায় নিয়ম শিথিল হওয়ায় সিসি তো বটেই, অনুমোদিত নকশারও প্রয়োজন পড়ছে না। মাটি পরীক্ষা থেকে শুরু করে ইঞ্জিনিয়ারকে দিয়ে অনুমোদন— কোনও কাজই হচ্ছে না।’’

শ্যামবাজার এলাকার এক বাসিন্দার আবার অভিযোগ, ‘‘সিসি নেওয়ার আগেই আবাসন কমিটির হাতে ফ্ল্যাট হস্তান্তরিত করে চলে গিয়েছেন প্রোমোটার। এখন সমস্যায় পড়লেও দায়িত্ব নিতে চাইছে না আবাসন কমিটি।’’ ভুগছেন সেই সাধারণ মানুষই। তা হলে উপায়? প্রশাসনিক কোনও স্তর থেকে স্পষ্ট উত্তর মিলছে না। নির্মাণ সংস্থাগুলির সংগঠন ‘ক্রেডাই’-এর পশ্চিমবঙ্গ শাখার সভাপতি সুশীল মেহতা বললেন, ‘‘কষ্টার্জিত অর্থ ব্যয় করার আগে ক্রেতাকেই সচেতন হতে হবে। কিছু ঘটে গেলে তখন প্রশাসন দেখবে। তত ক্ষণে নিজে সতর্ক না হয়ে এগোলে কিন্তু মুশকিল।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Tilted Building RERA

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy