Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪
New Market

প্রায় দেড়শো বছরের পুরনো নিউ মার্কেটের সংস্কার শুরু

পুর ইতিহাস বলছে, নিউ মার্কেট তৈরি হওয়ার পর থেকে সেখানে আমূল সংস্কারের কাজ এই প্রথম হচ্ছে।

পরীক্ষা: নিউ মার্কেটের (পুরনো কমপ্লেক্স) কাঠামোর জ্যামিতিক  পরীক্ষা-নিরীক্ষার কাজ চলছে।

পরীক্ষা: নিউ মার্কেটের (পুরনো কমপ্লেক্স) কাঠামোর জ্যামিতিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার কাজ চলছে। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৩ জুন ২০২১ ০৫:৫১
Share: Save:

এত দিন তাপ্পি মেরে কাজ চালানো হচ্ছিল। কিন্তু ১৪৭ বছরের পুরনো কাঠামো দ্রুত সংস্কারের কাজ শুরু করার পক্ষেই মত দিয়েছিলেন বিশেষজ্ঞেরা। না-হলে কাঠামোর ‘বিপজ্জনক’ অংশ ভেঙে কোনও দুর্ঘটনার আশঙ্কাও উড়িয়ে দিচ্ছিলেন না তাঁরা। তাই শেষ পর্যন্ত তাঁদের পরামর্শ মেনে নিউ মার্কেট সংস্কারের প্রাথমিক পর্ব শুরু হল।

পুরসভা সূত্রের খবর, নিউ মার্কেটের পুরনো হেরিটেজ কমপ্লেক্সের (যাকে বলা হয় এসএস হগ মার্কেট) জ্যামিতিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার কাজ শুরু হয়েছে। যাকে আভিধানিক ভাষায় বলা হয় ‘ডিফর্মেশন সার্ভে’। এই পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমেই দেওয়ালগুলির অবস্থা বা মার্কেটের আর্চগুলির জ্যামিতিক চরিত্র সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। যার উপরে ভিত্তি করে কাঠামো কতটা সুসংহত অবস্থায় রয়েছে বা প্রায় দেড়শো বছরের পুরনো ভিতের কোনও স্থানচ্যুতি হয়েছে কি না, তা নির্ধারণ করা যাবে। অপটিক্যাল যন্ত্র টিএস-এর (টোটাল স্টেশন) লেজ়ার রশ্মির সাহায্যে দূর থেকেই এই সূক্ষ্ম পরিমাপের কাজ চলছে।

পুর ইতিহাস বলছে, নিউ মার্কেট তৈরি হওয়ার পর থেকে সেখানে আমূল সংস্কারের কাজ এই প্রথম হচ্ছে। অবশ্য শুধু নিউ মার্কেটই নয়, কলকাতা পুরভবন লাগোয়া এবং ‘বিপজ্জনক’ হয়ে পড়া আরও একটি গ্রেড ‘ওয়ান’ তালিকাভুক্ত ফুটনানি চেম্বারেও সংস্কারের কাজ হবে বলে পুরসভা সূত্রের খবর। পুরসভার এক পদস্থ কর্তার কথায়, ‘‘সংস্কারের কাজে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞদের পরামর্শদাতা হিসেবে নিয়োগ করেছে পুরসভা। তাঁরা নিজেদের মতো করে কাজও শুরু করেছেন।’’ পুর আধিকারিকদের একাংশ জানাচ্ছেন, পরিকল্পনামাফিকই সংস্কারের জন্য এই সময় বেছে নেওয়া হয়েছে। যাতে সরকারি বিধিনিষেধের কারণে মার্কেট বন্ধ থাকার সুযোগে কাজটা কিছুটা হলেও এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায়। সরকারি কড়াকড়ি শিথিল হলে প্রয়োজনের ভিত্তিতে মার্কেটের একাংশ বন্ধ রেখে সংস্কারের কাজ করা হবে কি না, তা সে সময়েই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানাচ্ছেন পুর কর্তৃপক্ষ।

পুরসভা সূত্রের খবর, এত দিন নিউ মার্কেটের পুরনো অংশে মূলত ‘প্যাচ ওয়ার্ক’ বা তাপ্পি দেওয়ার কাজ হয়েছে। কিন্তু মার্কেট ঘুরে বিশেষজ্ঞেরা দ্রুত সংস্কার কাজ শুরু করতে সুপারিশ করেছিলেন। কাঠামো বিশ্লেষণ করে তাঁরা জানিয়েছিলেন, নিউ মার্কেট তৈরির সময়ে ‘ফ্ল্যাট রুফ’ বা এখনকার মতো ছাদ তৈরির রীতি ছিল না। কারণ তার জন্য কংক্রিট, বিম, টাইলসের প্রয়োজন পড়ত। ফলে কংক্রিট না থাকায় সম্ভবত চুন-সুরকি দিয়েই নিউ মার্কেটের ‘সিলিন্ড্রিকাল ভল্ট রুফ’ বা নলাকৃতি কাঠামোর ছাদ তৈরি করা হয়। সেই ছাদেরই বিভিন্ন অংশ সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে প্রাথমিক পরীক্ষায় ধরা পড়েছিল।

ঘটনা প্রবাহ বলছে, ১৮৭১ সাল থেকে কলকাতার ব্রিটিশরা দাবি তুলেছিলেন, তাঁদের জন্য একটা পৃথক মার্কেট তৈরি করা হোক। সেই দাবি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছিল যে, তাকে বাস্তবায়িত করতে উঠেপড়ে লেগেছিলেন কলকাতা পুরসভার (তখন নাম ছিল ‘ক্যালকাটা কর্পোরেশন’) তৎকালীন চেয়ারম্যান স্যর স্টুয়ার্ট হগ। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিকে দায়িত্ব দেওয়া হয় নতুন মার্কেটের নকশা তৈরির। শেষ পর্যন্ত ১৮৭৪ সালের ১ জানুয়ারি নতুন মার্কেট শুরু হয়। আর হগের উদ্যোগকে সম্মান জানিয়ে ১৯০৩ সালে এর নামকরণ হয়েছিল ‘স্যর স্টুয়ার্ট হগ মার্কেট’।

সদ্য শুরু হওয়া আমূল সংস্কারের কাজে এই হগ মার্কেটের কাঠামোর হেরিটেজ শৈলী অক্ষুণ্ণ রাখা হবে। এক পুরকর্তার কথায়, ‘‘একে বলা হয় স্ট্রাকচারাল প্রিজার্ভেশন বা কাঠামো সংরক্ষণ। প্রায় দেড়শো বছর হতে চলা নিউ মার্কেটের ওল্ড কমপ্লেক্সের সংরক্ষণের কাজটা ভীষণই চ্যালেঞ্জিং।’’ পুরসভার মার্কেট দফতরের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রাক্তন মেয়র পারিষদ তথা পুর প্রশাসকমণ্ডলীর সদস্য আমিরুদ্দিন ববি বলেন, ‘‘সোমবার সংস্কারের বিষয়ে একটি বৈঠক করা হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

New Market
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE