E-Paper

ময়না তদন্তের রিপোর্ট পেতে ছ’হাজার টাকা, এফআইআরেও এক মাস

স্বামী যত দিন নেশামুক্তি কেন্দ্রে থাকবেন, তত দিন প্রতি মাসে দিতে হবে তিরিশ হাজার টাকা! অভিযোগ, টাকা নিলেও কোনও চিকিৎসক বা মনোবিদ স্বামীকে নিতে যাননি।

নীলোৎপল বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ১৪ মে ২০২৩ ০৬:৪৮
A lady with the post mortem report

স্বামীর ময়না তদন্তের রিপোর্ট নিয়ে ফামিদা শঙ্কর। শনিবার, বেনিয়াপুকুরে। নিজস্ব চিত্র।

কথা ছিল, স্বামীকে নিয়ে যেতে এক জন চিকিৎসক, এক জন মনোবিদ পাঠানো হবে নেশামুক্তি কেন্দ্র থেকে। তার জন্য দিতে হবে ছ’হাজার টাকা। স্বামী যত দিন নেশামুক্তি কেন্দ্রে থাকবেন, তত দিন প্রতি মাসে দিতে হবে তিরিশ হাজার টাকা! অভিযোগ, টাকা নিলেও কোনও চিকিৎসক বা মনোবিদ স্বামীকে নিতে যাননি। উল্টে জোর করে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে গিয়েছেন কয়েক জন ব্যায়ামবীর! এর পরেই এসেছে স্বামীর মৃত্যুর খবর।

‘বাঁশদ্রোণী ফ্রিডম ফর ওয়েলফেয়ার সোসাইটি’ নামে একটি নেশামুক্তি কেন্দ্রে বিদ্যানাথন শঙ্কর অমরনাথ নামে বছর চল্লিশের এক ব্যক্তির মৃত্যুর ঘটনায় শনিবার এমনই অভিযোগ করলেন মৃতের স্ত্রী ফামিদা শঙ্কর। সেই সঙ্গে পুলিশের বিরুদ্ধেও অভিযোগ করেছেন ওই মহিলা। তাঁর দাবি, ‘‘স্বামীর মৃত্যুর পরে প্রায় এক মাস বাঁশদ্রোণী থানার পুলিশ আমায় ঘুরিয়েছে। এফআইআর রুজু তো দূর, অভিযোগও নেওয়া হয়নি। এমনকি, ময়না তদন্তের রিপোর্ট পেতেও ভুগতে হয়েছে। পুলিশ অফিসারকে ছ’হাজার টাকা দিয়ে ওই রিপোর্ট পেয়েছি।’’ মহিলার দাবি, বাঁশদ্রোণী থানা যে পুলিশ এলাকায় পড়ে, সেই দক্ষিণ সাবার্বান ডিভিশনের ডিসি বিদিশা কলিতা দাশগুপ্তের দফতরে অভিযোগ জানালে তাঁর হস্তক্ষেপে এক মাসের মাথায় এফআইআর হয়।

মহিলা জানান, ভবানীপুরের কলেজে পড়াকালীন তাঁর সঙ্গে বিদ্যানাথনের সম্পর্ক তৈরি হয়। ২০০৭ সালে তাঁরা বিয়ে করেন। তাঁদের দু’টি ছেলেমেয়ে রয়েছে। ফামিদার কথায়, ‘‘প্রথমে বিয়ে মেনে নেননি পরিবারের লোকজন। দু’জনে জিম খুলি। আমার শ্বশুরের মৃত্যুর পরে পারিবারিক নস্যির ব্যবসার ভার বিদ্যানাথনের উপরে পড়ে। জিম করতে করতে স্টেরয়েডে আসক্ত হয় বিদ্যানাথন। কিছুতেই ছাড়ানো যাচ্ছিল না। কোনও সেন্টারে ভর্তি করিয়ে চিকিৎসার কথা ভাবি।’’ বেঙ্গালুরুর একটি সেন্টারে ভর্তি করানোর কথা হয়। কিন্তু, সেখান থেকে বলা হয়, আগে কলকাতায় ভর্তি করাতে। সেই মতোই বাঁশদ্রোণীর ওই নেশামুক্তি কেন্দ্রে যোগাযোগ করা হয়।

মহিলার কথায়, ‘‘সেই সময়ে বিদ্যানাথন কসবায় আমাদের কারখানায় ছিল। কথা ছিল, নেশামুক্তি কেন্দ্রের চিকিৎসক গিয়ে প্রথমে কথা বলে বোঝাবেন। তার পরে আমি যাব। কিন্তু কারখানায় যাওয়ার মিনিট কয়েকের মধ্যে দেখি, নেশামুক্তি কেন্দ্রের গাড়ি বেরিয়ে যাচ্ছে! ও অসুস্থ জানিয়ে ঘণ্টাকয়েক বাদেই ফোন করে এম আর বাঙুর হাসপাতালে যেতে বলা হয়।’’ ফামিদা জানান, এক যুবক আঙুলের ইশারায় মৃতদেহটা শুধু দেখিয়ে দেন তাঁকে। আর কাউকে দেখা যায়নি। কী করে এমন হল, জানতে বার বার ফোন করলেও নেশামুক্তি কেন্দ্রের মালিক সন্দীপন বিশ্বাস ফোন তোলেননি বলে তাঁর দাবি।

মহিলার অভিযোগ, ‘‘পরদিনই থানায় গেলে পুলিশ বলে, ময়না তদন্তের রিপোর্ট এলে এফআইআর হবে। কিছুতেই রিপোর্ট পাচ্ছিলাম না। এম আর বাঙুর হাসপাতালে মৃত্যু হওয়ায় নিজেই খোঁজ করে গল্ফ গ্রিন থানা থেকে ময়না তদন্তের রিপোর্ট তুলি। এ জন্য পুলিশ অফিসারকে ছ’হাজার টাকা দিতে হয়েছে। রিপোর্টে স্বামীর শরীরে আঘাতের চিহ্ন মিলেছে। এর পরেও থানা এফআইআর করেনি। লিখিত অভিযোগ চেয়েছিল। লিখে নিয়ে গেলে বলেছে, ‘লেখা ছোট করুন।’ ছোট করে লিখে নিয়ে গেলেও ঘোরানো হয়েছে।’’

বাঁশদ্রোণী থানা সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছে এবং ময়না তদন্তের রিপোর্ট আসার আগে ওই মহিলাই অভিযোগ জানাতে চাননি বলে দাবি করেছে। ডিসি বিদিশা ফোনে বলেন, ‘‘তেমন কিছু নয়। এর মধ্যে আসলে অনেকগুলো ব্যাপার রয়েছে।’’ লালবাজারের এক শীর্ষ কর্তাও বলেন, ‘‘ময়না তদন্তের রিপোর্টে হাত, পা, ঊরু ও মাথায় আঘাতের চিহ্ন মিলেছে। আঘাতের ধরন নিয়ে নিশ্চিত হতে ভিসেরা রিপোর্টের অপেক্ষা করা হচ্ছে। পড়ে গিয়ে বা কারও মারার ফলেও আঘাত হতে পারে।’’ ওই পুলিশকর্তার মন্তব্য, ‘‘এর জন্য এফআইআর আটকে থাকার কথা নয়। গাফিলতি প্রমাণিত হলে কঠোর পদক্ষেপ করা হবে।’’ নেশামুক্তি কেন্দ্রটির মালিক সন্দীপন বিশ্বাসের দাবি, ‘‘সব ক্ষেত্রে নেশাগ্রস্তকে চিকিৎসার জন্য বুঝিয়ে নিয়ে যাওয়া যায় না, জোর করতেই হয়।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Corruption Death Rehabilitation Center FIR post mortem report

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy