Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
Prosthetic

পা হারিয়েও হারাননি আশা, ‘নিজের পা’ নিয়ে বাড়ি ফিরলেন বধূ

তাঁকে আবার ‘নিজের পা’-এ দাঁড় করানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন চিকিৎসকেরা। জার্মানি থেকে আনানো কৃত্রিম পা গত ৪ মে লাগানো হয় রিমার হাঁটুর নীচে।

অপরাজিতা: বাড়ি ফেরার পথে রিমা। সোমবার, এসএসকেএমে।

অপরাজিতা: বাড়ি ফেরার পথে রিমা। সোমবার, এসএসকেএমে। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য

শান্তনু ঘোষ
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৭ মে ২০২২ ০৬:২০
Share: Save:

‘নিজের পা’-এ দাঁড়িয়েই বাড়ির পথে পা বাড়ালেন রিমা নন্দী দত্ত। সোমবার দুপুরে, এসএসকেএম থেকে।

করোনায় আক্রান্ত হয়ে হাঁটুর একটু নীচ থেকে দু’টি পা হারিয়ে বছরখানেক ওই হাসপাতালেই ছিলেন দমদমের জ’পুর রোডের বছর বিয়াল্লিশের বধূ। তাঁকে আবার ‘নিজের পা’-এ দাঁড় করানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন চিকিৎসকেরা। জার্মানি থেকে আনানো কৃত্রিম পা গত ৪ মে লাগানো হয় রিমার হাঁটুর নীচে। ১২ দিন নানা প্রশিক্ষণ ও ওয়াকারে ভর দিয়ে হাঁটাচলার পরে এ দিন রিমাকে ছাড়েন চিকিৎসকেরা।

অস্ত্রোপচারের পরে গত জুন থেকে ‘ফিজ়িক্যাল মেডিসিন অ্যান্ড রিহ্যাবিলিটেশন’ (পিএমআর) বিভাগের মহিলা ওয়ার্ডের শয্যাই ছিল তাঁর ঠিকানা। এ দিন রিমা বললেন, ‘‘মেয়ে অপেক্ষায় রয়েছে। কত ক্ষণে বাড়ি ফিরে দাঁড়িয়ে ওকে জড়িয়ে ধরব, তা-ই ভাবছি।’’

করোনার তৃতীয় ঢেউয়ে গত ডিসেম্বরে মাসখানেকের জন্য বাড়ি ফিরেছিলেন সাড়ে সাত বছরের ঋদ্ধিমার মা রিমা। মায়ের পা নেই দেখে খুব কেঁদেছিল মেয়ে। সে কোলে উঠতে বা বসতে চাইলে কেঁদে ফেলতেন রিমা। এ দিন বললেন, ‘‘মনের ভিতরটা ফাঁকা লাগত। শাশুড়ি বলতেন, কান্নাকাটি কোরো না। তুমি আবার দাঁড়াবে। মনকে সাহস জোগাতাম।’’ কৃত্রিম পায়ের মাঝের স্টিলের রডটি দেখা যাচ্ছিল। মায়ের হাঁটার ভিডিয়ো দেখে খুশি হলেও ঋদ্ধিমার প্রশ্ন, ‘‘কেন ওটা দেখা যাচ্ছে?’’ ওই অংশটি ত্বকের রঙের ফোমে ঢেকে দেওয়া হয়েছে। ‘‘মেয়ে দেখে খুব খুশি হবে,’’ বললেন রিমা।

এ দিন পিএমআর-এর বিভাগীয় প্রধান, চিকিৎসক রাজেশ প্রামাণিকের সঙ্গে দেখা করেন রিমা। চার সপ্তাহ পরে চেক-আপে আসতে হবে। রাজেশ বলেন, ‘‘ওয়াকার ছেড়ে ক্রাচ নিয়ে হাঁটাচলা ও ব্যায়ামগুলি করতে বলা হয়েছে। পরে ক্রাচও লাগবে না। মনের জোরই দ্রুত সাফল্য এনে দেবে।’’ এসএসকেএমের অধিকর্তা মণিময় বন্দ্যোপাধ্যায়কে কৃতজ্ঞতা জানান রিমার স্বামী বিশ্বরূপ দত্ত ও দাদা শঙ্কর নন্দী। বাড়ি ফিরে মেয়েকে বেশি করে সময় দিতে চান রিমা। যেতে চান টালিগঞ্জে বাবা-মায়ের বাড়িতেও। আর বিশ্বরূপ চাইছেন, স্ত্রী-মেয়েকে নিয়ে কাছাকাছি বেড়াতে যেতে। রিমা বললেন, ‘‘মেয়ে সমুদ্রে নামতে খুব ভালবাসে। আমি তো নামতে পারব না। কিন্তু আবার ওকে নিয়ে বেড়াতে যাব, এটাই অনেক।’’

নীচে দাঁড়ানো ট্যাক্সিতে উঠতে দীর্ঘদিনের ঠিকানা ‘পিএমআর এফ-৪’ শয্যা ছেড়ে পা বাড়ালেন রিমা। সঙ্গী ওই ওয়ার্ডেই দীর্ঘদিন চিকিৎসাধীন ১৮ বছরের এক তরুণীর মা মৌমিতা মান্না এবং দুই আয়া, নমিতা নায়েক ও তারানা বিবি। রিমাকে জড়িয়ে কেঁদে ফেললেন সকলেই। চোখে জল নিয়ে রিমা বললেন, ‘‘ডাক্তার, নার্স-সহ এঁদের সকলকে নিয়েও তো একটা পরিবার হয়ে গিয়েছিল। ছেড়ে যেতে খুব কষ্ট হচ্ছে।’’ নমিতা ও তারানা জানান, ওয়ার্ডের সকলের কাছে রিমা অনুপ্রেরণা। মৌমিতা বললেন, ‘‘কিডনির অসুখে ভুগে আমার মেয়ে ঠিক মতো হাঁটতে পারত না। রিমাদি নিজেকে দেখিয়ে ওকে সাহস জোগাতেন। মেয়ে এ বার উচ্চ মাধ্যমিক দিল।’’

হলুদ ট্যাক্সির সামনের আসনে পা ঝুলিয়ে বসে রিমা বললেন, ‘‘হাল ছেড়ো না বন্ধু।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Prosthetic Coronavirus in Kolkata COVID-19
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE