অলঙ্করণ: ওঙ্কারনাথ ভট্টাচার্য।
চারটি তালা ভেঙে, রীতিমতো কার্ড পাঞ্চ করে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ঢুকে চুরি। সেই সঙ্গে ভেঙে দেওয়া একমাত্র চালু সিসিটিভিটিও। শুধু তা-ই নয়, অনায়াসে কাজ হাসিল করে চম্পট দেওয়ার আগে সাঙ্কেতিক চিহ্নে নিজের পরিচয় দিয়ে সটান চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেওয়া পুলিশ এবং প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষকে। অনেকটা বলিউডি ছবি ‘ধুম’-এ কায়দায় বৃহস্পতিবার রাতের এই দুঃসাহসিক চুরির ঘটনাটি ঘটেছে সল্টলেকের বিডি ব্লকে। যা আলোড়ন ফেলে গিয়েছে বিধাননগরের দুঁদে পুলিশকর্তাদের মধ্যেও।
পুলিশ সূত্রে খবর, বি ডি ব্লকের একটি তিনতলা বাড়ির দু’টি তলা ওই বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে ভাড়া দেওয়া হয়েছে। শুক্রবার বাড়িওয়ালা দেখতে পান, বাড়ির বাইরে পাঁচিলের গেটের তালা ভাঙা। এর পরেই প্রতিষ্ঠানের কর্তাদের খবর দেওয়া হয়।
বিধাননগর উত্তর থানায় প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষের দায়ের করা অভিযোগ অনুসারে, দুষ্কৃতী মূল ফটক ছাড়াও বাড়ির প্রবেশপথ, করিডরের কোল্যাপসিব্ল এবং মূল অফিসঘর মিলিয়ে মোট চারটি তালা ভেঙেছে। প্রতিষ্ঠানের ভিতরে দরজায় কার্ড পাঞ্চ করা ও তালা লাগানো দু’রকম ব্যবস্থাই ছিল। চোর তালা ভাঙার পরে কার্ড পাঞ্চ করে ভিতরে ঢুকে কম্পিউটার রুম ও ল্যাব থেকে ৭টি সিপিইউ, ১১টি মাউস, ৩টি ইউপিএস, ৭টি ওয়াইফাই অ্যাডাপ্টার, ডেটা কার্ড, কার্ট্রিজ ও নগদ ৪০০ টাকা নিয়ে চম্পট দেয়।
অভিযোগে আরও জানানো হয়েছে, গত কয়েক সপ্তাহ ধরে খারাপ থাকা তিনটি সিসিটিভি নষ্ট করেনি চোর। যেটি একমাত্র চালু সিসিটিভি, শুধু সেটিই ভাঙচুর করে নষ্ট করেছে সে। যাওয়ার সময়ে লণ্ডভণ্ড করেছে ঘরে রাখা কিছু পুরস্কারও । প্রতিষ্ঠানের ডিরেক্টর ছাড়া সবক’টি ঘরেই তার গতিবিধির প্রমাণও পেয়েছেন তদন্তকারীরা।
তবে যে বিষয়টায় রীতিমতো নড়েচড়ে বসেছে পুলিশ, তা হল— এত কিছুর পরে রীতিমতো চ্যালেঞ্জ জানানোর ভঙ্গীতে সাঙ্কেতিক ভাষায় সে নিজের অস্তিত্বের প্রমাণ দিয়ে গিয়েছে চোর। কোথাও কাঠের ডেস্কের উপরে, কোথাও কিছু ছবির উপরে কালো মার্কার জাতীয় পেন দিয়ে সে লিখে গিয়েছে ‘সিকেআইকে০০৪ চোর’। এখানেই শেষ নয়, দুটি ফ্লেক্সের উপরেও লিখেছে ‘এসএইচওডিআই’ এবং ‘এসএইচওআই’।
এমন দুঃসাহসিক দুষ্কৃতীর নমুনা আগে কখনও মিলেছে কি না, তা মনে করতে পারছেন না সল্টলেকের পুলিশকর্তারা। তবে তদন্তকারীদের একাংশের বক্তব্য, চোর বা এই ঘটনায় সঙ্গে জড়িত থাকা লোকেদের এই চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করলেন তাঁরা। তাঁদের দাবি, দ্রুত দুষ্কৃতীরা ধরা পড়বে। তদন্তকারীদের একাংশের আবার বক্তব্য, অনেক দিন পরে মগজাস্ত্রের এমন ব্যবহার দেখা গেল।
ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কর্তারা জানিয়েছেন, ভর্তির প্রক্রিয়া চলার কারণে বেশ কয়েক হাজার টাকাও জমা হয়েছিল। তবে তা ব্যাঙ্কে জমা করা হয়েছে। সেই কারণে চুরি হয়ে থাকতে পারে বলে মনে করছেন ওই কর্তারা।
চুরির রাতে প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা রক্ষী ডিউটিতে ছিলেন না বলে জেনেছে পুলিশ। সেই রক্ষীর অবশ্য দাবি, বৃহস্পতিবার রাতের অঝোর বৃষ্টিতে জল ঢুকে যাওয়ার আশঙ্কায় নিজের বাড়িতে চলে গিয়েছিলেন তিনি।
পাশাপাশি, ওই রাতেই বিডি ব্লকের ঠিক উল্টো দিকে বিসি ব্লকের একটি মার্বেলের দোকানেও গ্রিল কেটে নগদ ২০ হাজার টাকা নিয়ে গিয়েছে চোরেরা। দু’দিন পরপর তিনটি চুরির ঘটনায় সল্টলেকে পুলিশি নজরদারি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বাসিন্দারা। বিধাননগরের গোয়েন্দাপ্রধান কঙ্করপ্রসাদ বারুই বলেন, ‘‘দু’টি ঘটনার চরিত্র আলাদা। তবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ঘটনাটি কিছুটা ভিন্ন ধরনের। আশা করছি দুষ্কৃতীরা দ্রুত ধরা পড়বে।’’ তবে নজরদারির নিয়ে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করে এক পুলিশকর্তা বলেন, ‘‘নজরদারি কমেনি, বরং বেড়েছে। তবে নিশ্চিত ভাবে তিনটি ঘটনাই গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে। নতুন কোনও চক্র সক্রিয় হচ্ছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy