Advertisement
E-Paper

ক্যুরিয়র সংস্থার অফিসে চুরি, গ্রেফতার দুই কর্মী

পুলিশ কী ভাবে কিনারা করছে, সেটা জেনে এ বার অপরাধের কৌশল বদলে ফেলছে দুষ্কৃতীরা। তারা সতর্ক হচ্ছে সেই মতো। সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ যখন দুষ্কৃতীদের শনাক্ত করতে সাহায্য করছে, তখন তারা মুখ ঢেকে ঢুকছে অথবা বন্ধ করে দিচ্ছে সিসি ক্যামেরা।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৮ অক্টোবর ২০১৬ ০২:৪৭
—নিজস্ব চিত্র।

—নিজস্ব চিত্র।

পুলিশ কী ভাবে কিনারা করছে, সেটা জেনে এ বার অপরাধের কৌশল বদলে ফেলছে দুষ্কৃতীরা। তারা সতর্ক হচ্ছে সেই মতো। সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ যখন দুষ্কৃতীদের শনাক্ত করতে সাহায্য করছে, তখন তারা মুখ ঢেকে ঢুকছে অথবা বন্ধ করে দিচ্ছে সিসি ক্যামেরা। যেমনটা হল রবিবার রাতে নিউ আলিপুরের শীতলা তলার একটি ক্যুরিয়ার সংস্থার অফিসে। কিন্তু এত করেও শেষ রক্ষা হল না। মুখ ঢাকা কাপড়ের নীচ দিয়ে উঁকি দেওয়া ‘ফ্রেঞ্চকাট’ দাড়ি এবং ক্যুরিয়ার সার্ভিসে কাজ করার বিশেষ নীল জুতোই ধরিয়ে দিল দুই চোরকে। সোমবার বিকেলে তাদের গ্রেফতার করা হয়। উদ্ধার করা হয় টাকা। ধৃতদের নাম দিগ্বিজয় সিংহ এবং শশীকান্ত ভকত। ওই অফিসেরই কর্মী দু’জনেই আদতে উত্তরপ্রদেশের বাসিন্দা হলেও দিগ্বিজয় থাকেন একবালপুরে, শশীকান্ত পর্ণশ্রীতে।

গত সপ্তাহেই সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে সাহাপুরের একটি বাড়িতে চুরির ঘটনার কিনারা করেছিলেন নিউ আলিপুর থানার পুলিশকর্মীরা। কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই দুই অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয়। খোয়া যাওয়া হিরে এবং সোনার গয়নাও উদ্ধার করা গিয়েছিল। রবিবার সেখান থেকে প্রায় দু’কিলোমিটার দূরে ফের ওই থানা এলাকারই একটি অফিসে চুরি হল। ওই ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে রবিবার রাতে কালো কাপড়ে মুখ ঢেকে ওই অফিসে ঢোকে দুই যুবক। তার পরেই বন্ধ করে দেয় সিসিটিভি-র ক্যামেরা। কিন্তু অফিসের ভিতরে ঢোকা থেকে ক্যামেরা বন্ধ করার মাঝের কয়েক সেকেন্ডের ফুটেজই শেষ পর্যন্ত কাল হল তাদের।

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, রবিবার রাতে ওই অফিসে নগদ লক্ষাধিক টাকা চুরি হয়। অভিযোগ পাওয়ার পরে পুলিশ তদন্ত শুরু করে। এক তদন্তকারী অফিসার জানান, তদন্ত করতে গিয়ে দেখা যায় অফিসের ভিতরেই একটি সিসিটিভি বসানো রয়েছে। ওই অফিসার ভেবেছিলেন গত সপ্তাহের মতো এ ক্ষেত্রেও সিসিটিভি-র ফুটেজ খতিয়ে দেখে সহজেই চুরির ঘটনার কিনারা করা যাবে। কিন্তু বাস্তবে হল পুরো উল্টো।

কী রকম? পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গিয়েছে ওই অফিসের দরজা খুলে ভিতরে ঢুকছে এক যুবক। তখন কাপড় দিয়ে তার মুখ ঢাকা ছিল। তা সত্ত্বেও গতিবিধি থেকে ওই যুবককে চেনার চেষ্টা করবেন বলে ভেবেছিলেন তদন্তকারী অফিসারেরা। কিন্তু তাঁরা দেখলেন, চুরির কাজ শুরু করার আগেই সিসিটিভি ক্যামেরার সুইচ বন্ধ করে দিল কাপড়ে মুখ ঢাকা ওই যুবক। ফলে সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো থাকলেও মোক্ষম সময়ে তা কাজেই এল না।

এই ঘটনা থেকে অবশ্য পুলিশকর্মীরা অনুমান করতে পেরেছিলেন, ওই ঘরের সমস্ত খুঁটিনাটি জানা ছিল ওই যুবকের। এমনকী কোথায় সিসিটিভি ক্যামেরার সুইচ রয়েছে, সেটাও অজানা ছিল না তার। ফলে অফিসের সঙ্গে জড়িত কেউই যে এই চুরির সঙ্গে যুক্ত তা অনুমান করেছিল পুলিশ। সন্দেহের তালিকায় প্রথমেই ছিলেন ওই অফিসের কর্মীরা। তাই ফের ওই সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখতে শুরু করেন তদন্তকারী অফিসারেরা।

তখনই তাঁরা লক্ষ্য করেন ওই যুবকের পুরো মুখ কাপড়ে ঢাকা থাকলেও বাঁ-দিকে ফ্রেঞ্চকাট দাড়ির এক অংশ দেখা যাচ্ছে। এমনকী, ক্যুরিয়ার সার্ভিসে কাজ করার জন্য যে বিশেষ জুতো দেওয়া হয়, সিসিটিভি-র ছবিতে এক যুবকের পায়ে সেই জুতো দেখতে পান তদন্তরারীরা। এর পরেই অফিসের মালিক অমিত দে-কে ডেকে পাঠানো হয়। কোন কর্মীর ফ্রেঞ্চকাট দাড়ি রয়েছে, তা জানতে চান তদন্তকারী অফিসারেরা। এর পরেই সামনে আসে দিগ্বিজয়ের নাম। বিকেলে একবালপুরে তার ভাড়া বাড়ি থেকে গ্রেফতার করা হয় তাকে। সেই সূত্রেই শশীকান্তকে গ্রেফতার করা হয়।

পুলিশ তদন্তে জানতে পেরেছে, বেশ কয়েক দিন আগে অফিসের তালার একটি নকল চাবি তৈরি করেছিল ধৃত দুই যুবক। ওই অফিসের মালিক অমিত দে বলেন, ‘‘রবিবার সন্ধ্যায় অফিস থেকে বেরোনোর সময়ে আমি তালা দিয়ে গিয়েছিলাম। কে, কী ভাবে তালা খুলে ফেলল, তার কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। তবে এটা সন্দেহ হয়েছিল যে খুব পরিচিত কেউই এই চুরির সঙ্গে যুক্ত।’’

money courier service office
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy