Advertisement
১৮ মে ২০২৪

ভিড়ের সুযোগে বাতিল নোটই পকেটমারি

বাজারের ব্যাগে হাজার পঞ্চাশেক টাকা ভরে ডালহৌসি চত্বরের একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে জমা দিতে এসেছিলেন হাওড়ার বাসিন্দা এক বৃদ্ধ। ব্যাঙ্কের লাইনে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে একটু অন্যমনস্ক হয়ে গিয়েছিলেন।

শিবাজী দে সরকার ও কুন্তক চট্টোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ১৫ নভেম্বর ২০১৬ ০১:২৯
Share: Save:

বাজারের ব্যাগে হাজার পঞ্চাশেক টাকা ভরে ডালহৌসি চত্বরের একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে জমা দিতে এসেছিলেন হাওড়ার বাসিন্দা এক বৃদ্ধ। ব্যাঙ্কের লাইনে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে একটু অন্যমনস্ক হয়ে গিয়েছিলেন। সম্বিৎ ফিরতেই টের পেলেন, ব্যাগটা হাল্কা হাল্কা ঠেকছে! দেখলেন, ব্যাগের ভিতরে প্লাস্টিকে মোড়ানো টাকার বান্ডিলটাই পুরো উধাও।

শুক্রবার এমন ঘটনার পরেই হেয়ার স্ট্রিট থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন তিনি। লালবাজারের খবর, ব্যাঙ্কে ব্যাঙ্কে নোট বদলানোর জন্য ভিড় বাড়তেই শহরে সক্রিয় হয়ে উঠেছে পকেটমারেরা। শনিবারও ডালহৌসি চত্বরের ব্যাঙ্কে আসা এক ব্যক্তির ব্যাগ কেটে ৫০ হাজার টাকা উধাও হয়ে গিয়েছে। রবিবার একই কায়দায় টাকা লোপাট হয়েছে বড়বাজার এলাকাতেও। পুলিশের একাংশের সন্দেহ, গত কয়েক দিনে দু’-পাঁচ হাজার টাকা পকেটমারির ঘটনা আরও ঘটেছে। ঝঞ্ঝাট এড়াতে এমন পকেটমারির ঘটনা নিয়ে অনেকেই তো পুলিশে অভিযোগ জানায় না। ফলে সেগুলি এখনও সরকারি খাতায় নথিবদ্ধ হয়নি।

এমনিতে মহানগরের পথেঘাটে, বাসে, মেট্রোয় পকেটমারেরা সক্রিয়। নিত্য দিনই কারও না কারও মোবাইল, মানিব্যাগ খোয়া যায়। তার উপরে এই নোট বদলের ভিড়ে পকেটমারেরা মিশে যাওয়ায় চিন্তা বেড়েছে লালবাজারের। পুলিশ অফিসারদের অনেকেই বলছেন, এ সময়ে ব্যাঙ্কে প্রচুর বয়স্ক মানুষ লাইন দিচ্ছেন। পকেটমারদের সহজ ‘শিকার’ তো ওঁরাই। সাহায্যের ছুতোয় বা গালগল্পে ভুলিয়ে ওঁদের টাকা হাতিয়ে নিতে ওত পেতে রয়েছে পকেটমার-কেপমারেরা। গোয়েন্দা সূত্রের দাবি, এমনিতেই ভিড় সামলাতে ব্যাঙ্কে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। ‘চোর’ ধরতে আজ, মঙ্গলবার ব্যাঙ্কের ভিড়ে থাকবে সাদা পোশাকের পুলিশও।

ব্যাঙ্কে এখন তো ৫০০ এবং ১০০০ টাকার নোটই বেশি জমা পড়ছে। সেগুলি চুরি করে অপরাধীরা করবে কী? ভাঙাবেই বা কোথায়?

লালবাজারের এক কর্তার ব্যাখ্যা, লোকে টাকা ব্যাঙ্কে জমা দিতে আসছে। সেই টাকা হাতিয়ে নিয়ে পকেটমারেরাও ব্যাঙ্কেই জমা দেবে। ‘‘পকেটমার কি আর গায়ে লেখা থাকে! তাই ওরাও এখন ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খুলে ফেলেছে’’— রসিক মন্তব্য ওই পুলিশকর্তার।

পকেটমার ধরতে ওস্তাদ কলকাতা পুলিশের অফিসারদের অনেকেই বলছেন, ভিড়ের মধ্যে টাকা লুটতে এক-একটি জায়গায় তিন-চার জন পকেটমার ওত পেতে থাকে। প্রথমে পকেট বা ব্যাগ থেকে টাকা হাতায় এক জন। তার পর সেই টাকা চোখের পলকে হাত বদল হয়ে যায়। লোকজন কিছু বুঝে ওঠার আগে টাকা হাপিস! এমনও হয় যে, আসল পকেটমার টাকা পাচারের পরে ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়েই টাকা খোয়া যাওয়া লোকটিকে সান্ত্বনা দিয়ে চলেছেন। আর সেই ফাঁকে বাকিরা টাকা নিয়ে হাওয়া।

পুলিশ অফিসারেরা বলছেন, এই দল হিসেবে কাজ করার ফলে টাকার ভাগ-বাঁটোয়ারা হয় পকেটমারদের মধ্যে। ফলে ৫০ হাজার টাকা হাতালে এক-এক জনের ভাগে হয়তো হাজার দশেক জোটে। সেই টাকা নিজে কিংবা বৌ, ভাই-বোনের অ্যাকাউন্টে ফেলে দিলেই হল। ‘‘পকেটমার গ্যাংয়ের এজেন্ট এবং চাঁইয়ের সংখ্যাও তো কম নয়। তাঁরা হয়তো এর মধ্যেই টাকা ভাঙানোর নতুন কোনও ফিকির বের করে ফেলেছে’’, বলছেন এক গোয়েন্দা অফিসার।

কোন কোন পকেটমার গ্যাং এই ব্যাঙ্কের ভিড়ে হানা দিচ্ছে, সে ব্যাপারে খোঁজখবর শুরু করেছেন গোয়েন্দারা। কিছু কিছু সূত্রও মিলেছে। পুলিশের একাংশ জানাচ্ছে, নোট বদলের বাজারে মধ্য কলকাতার অফিস ও বাজার এলাকাই মূলত পকেটমারদের ‘মৃগয়া ক্ষেত্র’। এই এলাকায় গত কয়েক দিনে দক্ষিণ ২৪ পরগনার মল্লিকপুর, ঘুঁটিয়ারি শরিফের কিছু দাগি পকেটমারকে ঘোরাঘুরি করতে দেখা গিয়েছে। এই এলাকায় সক্রিয় রয়েছে পূর্ব কলকাতার কিছু ‘দাগি এলাকার’ যুবকেরাও।

লালবাজারের এক কর্তা জানিয়েছেন, ইতিমধ্যেই কিছু বাছাই করা ব্যাঙ্কের সামনে সাদা পোশাকের পুলিশকর্মীদের মোতায়েন করা হয়েছে। রয়েছেন গোয়েন্দা বিভাগের ‘ওয়াচ’ শাখার কর্মী-অফিসারেরাও। আজ, মঙ্গলবার থেকে আরও কিছু ব্যাঙ্কের শাখায়, ফুটপাথেও অতিরিক্ত দল নামানো হচ্ছে।

অঙ্কন: সুমিত্র বসাক

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

theft banned notes
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE