Advertisement
E-Paper

প্রশিক্ষণই তো নেই, ডুবন্তকে বাঁচাবেন কারা

দিন পনেরো আগে সাঁতার শিখতে শুরু করা এক শিক্ষানবিশ এখন সহজেই নজর এড়িয়ে ডুবে যান অতলে। প্রশ্ন উঠে যায়, যাঁদের নজর রাখার কথা, যাঁদের সজাগ থাকার কথা, সেই প্রশিক্ষকদের আন্তরিকতা নিয়ে।

সুনন্দ ঘোষ ও অনুপ চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০১ জুন ২০১৬ ০১:০০
কোনি ও ক্ষিদ্দা (ছবির পোস্টার থেকে)

কোনি ও ক্ষিদ্দা (ছবির পোস্টার থেকে)

‘ক্ষিদ্দা’রা কি ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছেন?

দিন পনেরো আগে সাঁতার শিখতে শুরু করা এক শিক্ষানবিশ এখন সহজেই নজর এড়িয়ে ডুবে যান অতলে। প্রশ্ন উঠে যায়, যাঁদের নজর রাখার কথা, যাঁদের সজাগ থাকার কথা, সেই প্রশিক্ষকদের আন্তরিকতা নিয়ে। আর তখনই উঠে আসে ‘ক্ষিদ্দা’র প্রসঙ্গ। এখন পাড়ায় পাড়ায় গজিয়ে ওঠা সুইমিং পুলের প্রশিক্ষকদের মাঝে ‘কোনি’র ক্ষিদ্দা অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়েন।

টালা থেকে টালিগঞ্জে ব্যাঙের ছাতার মতো তৈরি হচ্ছে সুইমিং পুল। কয়েক বিঘত জায়গা বার করতে পারলেই নীল জলের টলটলে পুল তৈরি করে প্রশিক্ষণ দেওয়ার হিড়িক পড়ে যাচ্ছে। অ্যান্ডারসন ক্লাবের সঙ্গে ২০ বছরের বেশি সময় ধরে যুক্ত উদয় ভট্টাচার্যের কথায়, ‘‘কয়েক বছর সুইমার হিসেবে সাঁতার কাটার পরেই অনেকে এখন প্রশিক্ষক হয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু, তার জন্য প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ তাঁদের নেই।’’ এর ফলে, জলে লাফিয়ে-ঝাঁপিয়ে, বাচ্চাদের হাত-পা ছোঁড়া শেখানো পর্যন্ত আটকে থাকছে প্রশিক্ষকের কাজ। কিন্তু, ক্ষিদ্দা হয়ে উঠছেন না তাঁদের বেশির ভাগই।

মঙ্গলবার যে জলাশয় কেড়ে নিয়েছে সঙ্গীতা দাসের প্রাণ, সেই হেদুয়াতেই সাঁতার শিখতে এসে ২০০২ সালে ডুবে মারা গিয়েছিলেন পূজা জায়সবাল। ন্যাশনাল নামে যে ক্লাবের সদস্য ছিলেন পূজা, তার সম্পাদককে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। সে বার কলকাতা পুরসভা সমস্ত সাঁতার প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলির জন্য একটি নির্দেশিকা জারি করে। ক্লাবে ডুবুরি রাখা, যন্ত্রপাতি রাখা এবং প্রশিক্ষকদের ‘লাইফ সেভিং’ বা ডুবন্ত মানুষকে বাঁচানোর প্রশিক্ষণ থাকাটা জরুরি বলেও নির্দেশ জারি করা হয়েছিল তাতে। ক্লাবগুলি তখনই জানিয়েছিল যে, ডুবুরি রাখা সম্ভব না হলেও বাকি নির্দেশ মেনে নেওয়া হবে। কিন্তু ১৪ বছর পরে সঙ্গীতার মৃত্যু ফের জানিয়ে দিল, সে নিয়ম মানা হয়নি।

সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়

হেদুয়ার ঘটনার প্রেক্ষিতে মেয়র পারিষদ (পার্ক ও উদ্যান) দেবাশিস কুমার জানান, কলকাতা পুরসভার যে সব পার্কে সাঁতার শেখানো হয়, সেগুলিতে সব নির্দেশিকা মানা হচ্ছে কি না, তা দেখতে আগামী সপ্তাহ থেকেই পরিদর্শন শুরু করা হবে।

জানা গিয়েছে, লাইফ সেভিং এই প্রশিক্ষণ অ্যান্ডারসন-সহ কয়েকটি সাঁতার ক্লাবে দেওয়া হয়। অ্যান্ডারসনে ২১ দিনের প্রশিক্ষণ শেষে পরীক্ষা নেওয়া হয়। সেই প্রশিক্ষণের অঙ্গ হিসেবে জলের তলায় টানা ৯০ সেকেন্ড থাকতে হবে, জলের তলায় ২৫ মিটার সাঁতার কাটার ক্ষমতা থাকতে হবে এবং ২২ সেকেন্ডের মধ্যে জামা-জুতো খুলে জলে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। উদয়বাবু জানান, ইদানীং প্রশিক্ষণ নেওয়ার পরে ১০ শতাংশও পাশ করতে পারেন না। অভিযোগ, এখন গজিয়ে ওঠা বেশির ভাগ পুলের প্রশিক্ষকদের এই সার্টিফিকেট নেই।

এখানেই সাঁতার শিখতে গিয়ে তলিয়ে যান সঙ্গীতা। — নিজস্ব চিত্র

হেদুয়ারই সেন্ট্রাল সাঁতার ক্লাবের প্রশিক্ষক তাপস ভট্টাচার্য জানান, অতীতে বেশির ভাগ প্রশিক্ষকই নিখরচায় ভালবেসে প্রশিক্ষণ দিতে আসতেন। ফলে তাঁদের আন্তরিকতা নিয়ে কোনও প্রশ্ন তুলতে পারেননি কেউই। সাম্প্রতিক কালে সেখানেই ক্ষিদ্দারা প্রাসঙ্গিক। কিন্তু ইদানীং লক্ষ করা যাচ্ছে কিছু দিন ‘সুইমার’ হিসেবে সাঁতার কাটার পরে অতিরিক্ত রোজগারের আশায় অনেকে প্রশিক্ষক হয়ে যাচ্ছেন। দেখা গিয়েছে, সাধারণ চাকরি করা যুবক-যুবতী ভোরে এবং অফিস থেকে ফিরে বিকেলে প্রশিক্ষণ দিয়ে রোজগার করছেন। অভিযোগ, এঁদের বেশির ভাগেরই ওই লাইফ সেভিং প্রশিক্ষণ নেই।

কলকাতার অন্যতম পুরনো সুইমিং পুল সল্টলেকের বিসি ব্লকে। সেখানে ৩৭ বছর ধরে সাঁতার শেখাচ্ছেন স্মরজিৎ পাল। ৬৩ বছরের প্রৌঢ় টুলুদা নামেই জনপ্রিয়। তাঁর কথায়, ‘‘জলে নেমে সাঁতার শেখানোর পাশাপাশি প্রশিক্ষণ চলাকালীন পাড়েও কয়েক জনের নজর রাখার কথা। একসঙ্গে এত বাচ্চা শেখে যে, জলে নামা প্রশিক্ষকের পক্ষে সকলের উপরে নজর রাখা সম্ভব নয়। যাঁরা পাড়ে থাকেন, তাঁদেরই বিশেষত ওই লাইফ সেভিং প্রশিক্ষণ থাকা উচিত। আমার আছে। তা না থাকলে ডুবন্ত মানুষকে বাঁচাব কী করে?’’

কয়েক জন ক্ষিদ্দা তা হলে আজও বেঁচে আছেন!

training Swimming
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy