সঞ্চিতা দত্ত। ছবি সৌজন্য: ফেসবুক।
রটনা অনেক। কিন্তু ঘটনা কী, তা এখনও জানতে পারেনি পুলিশ।
তাই দক্ষিণ দমদম পুরসভার কাউন্সিলর সঞ্চিতা দত্তের মৃত্যু এখনও রহস্যে মোড়া। মৃত্যুর অব্যবহিত পরেই ঘটনাস্থলে পৌঁছতে পারলে তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহে সুবিধা হয় পুলিশের। কিন্তু সঞ্চিতার ক্ষেত্রে মৃত্যুর অন্তত ছ’-সাত ঘণ্টা পরে ওই ফ্ল্যাটে ঢুকতে পেরেছিল তারা। ওই সময়ের মধ্যেই কি কেউ তথ্যপ্রমাণ সরিয়ে ফেলেছে? উত্তর নেই। যেমন উত্তর মেলেনি আরও অনেক প্রশ্নের।
সঞ্চিতার পাড়া এবং ঘনিষ্ঠ বৃত্ত থেকে বারবার উঠে এসেছে পারিবারিক অশান্তির কথা। মৃত্যুর নেপথ্যেও সেই অশান্তির কোনও ভূমিকা আছে কি?
সঞ্চিতার স্বামী, পাতিপুকুর এলাকার তৃণমূল নেতা কৃষ্ণপদ (কেষ্ট) দত্ত অবশ্য বৃহস্পতিবার জোর গলায় দাবি করেছেন, সঞ্চিতার সঙ্গে তাঁর কোনও রকম ঝামেলা ছিল না। তাঁর কথায়, ‘‘আমার স্ত্রী মারা গিয়েছেন। আমাদের উপর দিয়ে এখন ঝড়
বয়ে যাচ্ছে। বাজারে অনেক কথাই রটানো হচ্ছে। ঠিক সময়েই সত্যিটা জানা যাবে।’’
সেই সময় কবে আসবে? কেষ্টবাবুর বক্তব্য, ‘‘ময়না-তদন্তের রিপোর্ট এলেই সবটা জানা যাবে।’’ তা হলে কি ওই রিপোর্টে বিতর্কিত কিছু থাকবে না বলে একেবারে নিশ্চিত কেষ্টবাবু? জবাব মেলেনি।
কেষ্টবাবুর মতো পুলিশও এখন তাকিয়ে ময়না-তদন্তের রিপোর্টের দিকে। প্রাথমিক তদন্তে পারিবারিক অশান্তির সূত্র তাদের হাতেও এসেছে। তবে এখনও তা যাচাই করেনি বিধাননগর কমিশনারেটের পুলিশ। স্থানীয় এবং রাজনৈতিক মহলেও সঞ্চিতার পারিবারিক অশান্তি নিয়ে নানা রকম জল্পনা চলছে। তবে এর মধ্যে কতটা সত্যি, তা বোঝার কোনও উপায় নেই।
স্থানীয় বাসিন্দা ও তৃণমূল কর্মীদের একাংশ জানিয়েছেন, গত ৩ সেপ্টেম্বর ওই কাউন্সিলরের অস্বাভাবিক মৃত্যুর পরে পুলিশ অনেক রাতে ঘটনাস্থলে পৌঁছতে পেরেছিল। বিধাননগর পুলিশ সূত্রের খবর, সঞ্চিতার দেহ পরিবারের লোকজনই হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলেন। সেখান থেকে খবর পেয়ে পুলিশ যায় ঘটনাস্থলে। কিন্তু তখন ওই ফ্ল্যাটে তালা দেওয়া ছিল। ময়না-তদন্ত প্রক্রিয়া শেষ করে শেষকৃত্য হওয়ার পরে রাতে পুলিশ ঘটনাস্থলে ঢুকতে পেরেছিল। পুলিশের একাংশের প্রশ্ন, ওই সময়ের মধ্যে কোনও গুরুত্বপূর্ণ তথ্যপ্রমাণ যে লোপাট হয়ে যায়নি, তার নিশ্চয়তা কোথায়? কারও কারও প্রশ্ন, সঞ্চিতা কি কোনও সুইসাইড নোট লিখে রেখে গিয়েছিলেন, যা পরে সরিয়ে ফেলা হয়েছিল?
প্রশ্ন আরও আছে। সে দিন সঞ্চিতাকে মৃত অবস্থায় প্রথম দেখেছিল ছোট ছেলে। সে চাবি দিয়ে লক খুলে ভিতরে ঢুকেছিল। পুলিশের প্রশ্ন, সঞ্চিতা যদি আত্মহত্যাই করবেন, তা হলে দরজা আরও ভাল করে আটকালেন না কেন, যাতে কেউ চাবি দিয়েও ঢুকতে না পারে? তা হলে কি তালা দেওয়া ফ্ল্যাটের ভিতরে অন্য কেউ ছিলেন, যিনি ফ্ল্যাট থেকে বেরোনোর সময়ে দরজা টেনে লক করে যান? আপাতত সব রকম সম্ভাবনাই খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
এমন একাধিক প্রশ্নের উত্তর মিলছে না। তবে ঘটনার পর থেকে সঞ্চিতার ছোট ছেলে, বছর বারোর সায়ন চরম আতঙ্কে রয়েছে বলে পারিবারিক সূত্রে জানা গিয়েছে। তাকে আগলে রাখা হচ্ছে। শুধু সঞ্চিতার ছেলেরাই নয়, ঘটনার পর থেকে পরিবারের কাউকেই বাড়ির বাইরে বিশেষ দেখা যাচ্ছে না।
দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, শেষকৃত্যের সময়ে সঞ্চিতার বড় ছেলে অঙ্কুশ নাকি এক পুলিশ আধিকারিকের সঙ্গে আলাদা ভাবে কথা বলতে চেয়েছিল। সে কি আদৌও কিছু বলেছে পুলিশকে? জানা যায়নি।
এ দিন ফোনে কেষ্টবাবু প্রথমে বলেন, ‘‘এখন কিছু বলব না। আমরা রাজনীতির লোক। যা বলার দলই বলবে।’’ পারিবারিক অশান্তির কথা তুলতেই তিনি বলেন, ‘‘আমাদের দেখে কি কেউ কখনও বলেছে যে, আমরা অসুখী ছিলাম?’’ কেষ্টবাবুর দাবি, তিনি যেমন হাসিখুশি প্রকৃতির, সঞ্চিতাও তেমনই ছিলেন। সবার সঙ্গে হেসে কথা বলতেন। তাঁর প্রশ্ন, ‘‘এর মধ্যে অশান্তির কথা আসছে কোথা থেকে? যা নয়, তা নিয়েই আলোচনা হচ্ছে। আমার আর কিছু বলার নেই।’’
এলাকাবাসীর প্রশ্ন, পুলিশেরও কি কিছু বলার নেই?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy