E-Paper

অনলাইন পুজোর আবহে ভাটা কালীঘাট মন্দিরে, মাথায় হাত ব্যবসায়ীদের

ব্যবসায়ীদের একাংশের মতে, কালীপুজোর দিনে এখন আর দর্শনার্থীদের তেমন ভিড় দেখা যায় না। দূর থেকে দর্শনার্থীরাও আর কালীঘাট মন্দিরে আসতে তেমন ইচ্ছুক নন।

শুভাশিস ঘটক

শেষ আপডেট: ২১ অক্টোবর ২০২৫ ০৮:৪১
কালীঘাটের বিগ্রহ।

কালীঘাটের বিগ্রহ। —ফাইল চিত্র।

অনলাইন পুজোর দাপটে কালীপুজোয় কালীঘাটের প্রসাদ ও ফুল ব্যবসায় মন্দা পরিস্থিতি আরও তীব্র হচ্ছে বলে দাবি ব্যবসায়ীদের। ফলে, কার্যত মাথায় হাত পড়েছে তাঁদের। এমনিতেই গত কয়েক বছর ধরে পয়লা বৈশাখ এবং কালীপুজোয় কালীঘাটে দর্শনার্থীদের ভিড়ের পরিমাণ কমেছে উল্লেখযোগ্য হারে। ওই সব দিনেই ছিল ব্যবসায়ীদের রমরমা। কিন্তু, গত কয়েক বছরে মন্দা বাজারের পরিস্থিতি একই রয়েছে বলে দাবি প্রসাদ ও ফুল ব্যবসায়ীদের। এ বছরে পরিস্থিতি আরও শোচনীয়।

প্রসাদ ও ফুল ব্যবসায়ীদের কথায়, ‘‘সমাজমাধ্যমে কালীঘাটের কালীপুজোর ফুল ও প্রসাদ পাঠানোর জন্য বিজ্ঞাপন দেখা যাচ্ছে। মাত্র ৫০ থেকে ১০০ টাকা অনলাইনে পাঠালেই পুজোর প্রসাদ ও প্রণামী ফুল সরাসরি বাড়ি পৌঁছে দিচ্ছে ওই সব সংস্থা। ফলে আর মন্দিরমুখো হচ্ছেন না দর্শনার্থীদের একটা বড় অংশ। ভিড় ঠেলে পুজো দেওয়ার আগ্রহটাও আর থাকছে না। এখন কালীঘাটে ডিজিটাল পুজোর আবহ।’’

ফুল ও প্রসাদ ব্যবসায়ীদের একাংশে দাবি, মন্দির থেকে অল্প পরিমাণ প্রসাদ ও ফুল-মালা পুজো দিয়ে নিয়ে যাচ্ছে অনলাইনে ব্যবসা করা ওই সব সংস্থা। এর পরে নিজেদের তৈরি প্রসাদ ও ফুল-মালার সঙ্গে ওই পুজোর প্রসাদ ও পুজোর ফুল-মালা মিশিয়ে দেওয়া হচ্ছে। তার পরে সেটাই বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে।’’ আর, এর ফলে মার খাচ্ছে মন্দিরের আশপাশের প্রসাদ ও ফুল ব্যবসায়ীদের কারবার।

কালী টেম্পল কমিটির কোষাধ্যক্ষ কল্যাণ হালদার বলেন, ‘‘অনলাইনে পুজোর প্রসাদ ও প্রণামী ফুল বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে কালী টেম্পল কমিটির কোনও যোগসূত্র নেই। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কালীঘাট মন্দিরের প্রসাদ বিলি করা হয় না বলেই শুনেছি। অনলাইনে টাকা নিয়ে বেসরকারি সংস্থাগুলি নিজেরাই প্রসাদ ও ভোগ তৈরি করে তা কালীঘাটের বলে চালিয়ে দিচ্ছে। এটা দর্শনার্থীদের ঠকানো ছাড়া আর কিছুই নয়।’’

ব্যবসায়ীদের একাংশের মতে, কালীপুজোর দিনে এখন আর দর্শনার্থীদের তেমন ভিড় দেখা যায় না। দূর থেকে দর্শনার্থীরাও আর কালীঘাট মন্দিরে আসতে তেমন ইচ্ছুক নন। অনলাইনে পুজোর প্রসাদ ও ফুল পাওয়ার ব্যবস্থার ফলে সশরীরে মন্দিরে আসার আগ্রহ হারাচ্ছেন অনেকেই। তার ফলে কপাল পুড়ছে মন্দির সংলগ্ন কয়েকশো প্রসাদ ও ফুল ব্যবসায়ী পান্ডার। বহু প্রসাদের দোকান বন্ধ হয়ে গিয়েছে গত কয়েক বছরে।

সোমবার সকালে কালীঘাট মন্দিরের এক সেবায়েত বলেন, ‘‘কালীপুজোর দিন পাঁঠা বলি অন্যতম একটি বড় সংস্কার। অনেকেই তাঁদের কোনও আটকে যাওয়াকাজ ও পারিবারিক অশান্তির কারণে পাঁঠা বলির মানত করে থাকেন। ওই আশা পূর্ণ হওয়ায় কালীপুজোর দিন পাঁঠা বলি দেওয়া হয়। শুধুমাত্র মন্দিরের ওই জায়গায় ভিড় রয়েছে। কারণ অনলাইনে তো আর পাঁঠা বলির ব্যবস্থা করা যায় না!’’ মন্দির চত্বরে হাঁড়িকাঠের কাছে গিয়ে দেখা গেল, একের পর এক পাঁঠা বলি হচ্ছে। পাশে নাটমন্দিরের সিঁড়িতে খাতা নিয়ে বসে কয়েক জন। এক-একটিপাঁঠা বলির জন্য আড়াই থেকে তিন হাজার টাকা শুধু ‘দক্ষিণা’ হিসাবে নেওয়া হচ্ছে। পাঁঠার খরচ আলাদা। এক-একটি পাঁঠা বলি দিতে মোট প্রায় হাজার দশেক টাকা খরচ বলে জানালেন তাঁরা।

ওই ব্যক্তিদের এক জনের কথায়, ‘‘সকাল থেকে বলির পাঁঠার পুজো শুরু হয়েছে। বেলা সাড়ে ১২টা মধ্যে ১০০টিরও বেশি পাঁঠা বলি হয়ে গিয়েছে। সন্ধ্যার পর পর্যন্ত চলবে ওই পুজো এবং পাঁঠা বলি। দুপুরের পরে অমাবস্যা তিথি শুরু হবে। তখন আরও পাঁঠা বলি দেওয়া হবে।’’ সেবায়েতদের একাংশ জানাচ্ছেন, কালীপুজোয়পাঁঠা বলি দেওয়ার খাঁড়া ধোয়ার জলেরও বিপুল চাহিদা। তা বিক্রিও হয় ভাল দামে।

তবে এ দিন সকাল থেকে মন্দিরে দর্শনার্থীদের সংখ্যা হাতে গোনা হলেও আঁটোসাঁটো পুলিশি নিরাপত্তায় খামতি নেই। সকাল থেকেই মন্দিরের চার দিকে পুলিশকর্তাদের গাড়ি দাঁড়িয়ে। মন্দিরের চারপাশে এবং বিভিন্ন গেটে কয়েকশো পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। মন্দির চত্বরে চার নম্বর গেটে পুলিশের তরফে চিকিৎসার জন্য অস্থায়ী শিবির খোলা হয়েছে।

ওই শিবিরে কর্তব্যরত এক পুলিশকর্মী বলেন, ‘‘এ বছর দু’দিন ধরে অমাবস্যা তিথি। প্রায় প্রতি বছরই গরমে এবং ভিড়ে শিশু ও বয়স্ক অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়েন। আশপাশের প্রাথমিক চিকিৎসা কেন্দ্র ও সরকারি হাসপাতালে অসুস্থদের পাঠাতে হত এত দিন। এ বছর থেকে শিবির খোলা হয়েছে। তবে কোনও দর্শনার্থী গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে হাসপাতালে পাঠাতে মন্দিরের আশপাশে অ্যাম্বুল্যান্সও রাখা হয়েছে।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

kalipuja deepabali

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy