Advertisement
E-Paper

বিসর্জনের কাঠামো তুলেই খুশির আবাহন

প্রতিমা জলে পড়া মাত্রই শুরু হয়ে যায় কাজ। কোমরে গামছা বাঁধা মানুষগুলি ঝুপ-ঝাপ করে জলে দাপিয়ে তুলে আনেন মাটি গলে যাওয়া খড়ের কাঠামো। যাঁর হাত প্রথমে পড়বে, কাঠামো তাঁরই। এমনই বোঝাপড়া নিয়ে চলে ব্যবসা।

মেহবুব কাদের চৌধুরী

শেষ আপডেট: ০৫ অক্টোবর ২০১৭ ০০:৪৫
অসচেতন: বিসর্জনের পরে ঘাটের ছবি তুলতে ব্যস্ত এক পুলিশকর্মী। তখনও গঙ্গায় ভাসছে প্রতিমার কাঠামো। বুধবার, বাগবাজারে। ছবি: শৌভিক দে

অসচেতন: বিসর্জনের পরে ঘাটের ছবি তুলতে ব্যস্ত এক পুলিশকর্মী। তখনও গঙ্গায় ভাসছে প্রতিমার কাঠামো। বুধবার, বাগবাজারে। ছবি: শৌভিক দে

সবার আনন্দ পুজো ঘিরে। ওঁদের খুশি কিন্তু বিসর্জনেই। সারা বছরের প্রতীক্ষার শেষে দুর্গাপুজোর বিসর্জন থেকে তাই ওঁদের উৎসবের সূচনা। ভাসানের পর্ব শুরু হতেই ঘাটে ঘাটে ভিড় জমান ওঁরা।

প্রতিমা জলে পড়া মাত্রই শুরু হয়ে যায় কাজ। কোমরে গামছা বাঁধা মানুষগুলি ঝুপ-ঝাপ করে জলে দাপিয়ে তুলে আনেন মাটি গলে যাওয়া খড়ের কাঠামো। যাঁর হাত প্রথমে পড়বে, কাঠামো তাঁরই। এমনই বোঝাপড়া নিয়ে চলে ব্যবসা।

প্রতি বছর বিসর্জনের পরে কাঠামো গঙ্গা থেকে তুলে এনে তা কুমোরটুলিতে বিক্রি করেন ওঁরা। বাগবাজারের মনোহর বিশ্বাস, কুমোরটুলির পরিমল ঘোষ বা আহিরীটোলার কার্তিক মণ্ডল— গত দশ বছর ধরে কাঠামো তুলে এ ভাবেই বিক্রি করছেন। এ কাজে জড়িয়ে আছে পনেরো-ষোলো
বছরের ছেলেরাও।

তবে আগের সে দিন আর নেই—বলছেন কুমোরটুলির শিল্পীরাই। তাঁরা জানাচ্ছেন, আদালতের নির্দেশ মেনে প্রশাসনের তরফে গত কয়েক বছর ধরেই বাবুঘাট, বাজেকদমতলা এবং নিমতলা-সহ বেশ কয়েকটি বড় ঘাট থেকে বিসর্জনের সঙ্গে সঙ্গে কাঠামো তুলে ধাপায় ফেলে দেওয়া হয়। ফলে বেশিরভাগ কাঠামো চলে যাচ্ছে শিল্পীদের হাতের বাইরে। খুব কম কাঠামোই ফিরে আসছে কুমোরটুলির শিল্পীদের কাছে। মৃৎশিল্পী মিন্টু পালের কথায়, ‘‘এখন মূলত ছোট ঘাটগুলি থেকে কাঠামো তুলে এনে আমাদের কাছে বিক্রি করেন ওঁরা। কালীপুজোর সময়ে এবং জগদ্ধাত্রী প্রতিমা
গ়ড়তে ওই কাঠামোগুলি খুব কাজে লাগে শিল্পীদের।’’

কুমোরটুলি সূত্রের খবর, বছর তিনেক আগে এক একটি কাঠামো বিক্রি হতো ৫০ থেকে ১০০ টাকায়। এখন কাঠামোর সংখ্যা কমে যাওয়ায় দাম বেড়ে গিয়েছে। উচ্চতার উপর নির্ভর করে কাঠামোর দাম ওঠা-নামা করে দু’শো থেকে তিনশো টাকার মধ্যে।

কুমোরটুলির ঘাটের কাছেই দরমার এক চিলতে ঘরে স্ত্রী, সন্তান নিয়ে অভাবের সংসার পরিমলের। সারা বছর দিনমজুর খেটে সংসার চালান তিনি। লাভের মুখ দেখার অপেক্ষায় থাকেন এই সময়ে। পুজোর আগে পরিবারের জন্য নতুন জামাকাপড় কিনতে পারেননি। তাঁর কথায়, ‘‘বিসর্জনের পরে কাঠামো বিক্রি করে তিন থেকে চার হাজার টাকা রোজগার করি। ভাল টাকা মিললে বাড়ির লোকের জন্যে নতুন কাপড় কিনে থাকি। পুজো শেষ তো কী হয়েছে? ওই তিন দিনের রোজগারই তো আমাদের বড় পাওনা।’’

দুর্গাপুজো মিটতেই শুরু হয়ে যায় কালী, জগদ্ধাত্রী পুজোর তোড়জোড়। এর মধ্যে নতুন করে কাঠামো তৈরি করা পটুয়াপাড়ার শিল্পীদের কাছে বেশ সময়সাপেক্ষ। শিল্পীদের কথায়, ওঁরা আছেন বলেই ভরসা অনেকটা। এ বছরের বাড়তি চাপ জিএসটি-র জেরে দাম বেড়েছে বাঁশ ও কাঠে। ফলে নতুন করে কাঠামো গড়তে সেই প্রভাব পড়বেই। এই অবস্থায় পুরনো কাঠামো হাতে পেলে চাপ কমবে অনেকখানি।

Immersion Durga Idol Business Structure
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy