Advertisement
E-Paper

রোগ ঠেকাতে মাসে চাই ২৮ লক্ষ

বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবসে স্লোগান দেওয়া হয়েছে, সকলের জন্য স্বাস্থ্য। সেই সকলের মধ্যে নৈহাটির গরিফার বাসিন্দা অর্নেশ সাউ নেই কেন? প্রশ্ন বিরল রোগে আক্রান্ত ছ’বছরের ওই শিশুর বাবা ইন্দ্রজিৎ সাউর।

সৌরভ দত্ত

শেষ আপডেট: ০৭ এপ্রিল ২০১৯ ০০:২৫
অর্নেশ সাউ

অর্নেশ সাউ

বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবসে স্লোগান দেওয়া হয়েছে, সকলের জন্য স্বাস্থ্য। সেই সকলের মধ্যে নৈহাটির গরিফার বাসিন্দা অর্নেশ সাউ নেই কেন? প্রশ্ন বিরল রোগে আক্রান্ত ছ’বছরের ওই শিশুর বাবা ইন্দ্রজিৎ সাউর।

আজ, রবিবার, ৭ এপ্রিল বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস। এ বছরের থিম হল, ‘হেল্‌থ ফর অল— এভরিওয়ান, এভরিহোয়্যার’। গত ১০ মাস ধরে বিরল রোগে আক্রান্ত সন্তানের চিকিৎসার জন্য কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের কাছে বারবার আর্জি জানিয়েও সুরাহা হয়নি। যার প্রেক্ষিতে বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবসের থিমের কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন তুললেন ইন্দ্রজিৎবাবু। পেশায় বেসরকারি স্কুলের অশিক্ষক কর্মী ইন্দ্রজিৎবাবুর ছেলে অর্নেশ বিরল রোগ ‘ডুশেন মাসকুলার ডিস্ট্রফি’ (ডিএমডি) রোগে আক্রান্ত। ইন্দ্রজিৎবাবু জানান, ২০১৮ সালের জানুয়ারি মাসে আচমকা অর্নেশের হাঁটতে সমস্যা হতে শুরু করে। সিঁড়ি দিয়ে ওঠার সময়ে যন্ত্রণায় হাঁটু ধরে দাঁড়িয়ে পড়ত সে। চেন্নাই এবং ভেলোরের দু’টি বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক অর্নেশকে দেখে জিনের পরীক্ষা করানোর পরামর্শ দেন। দু’টি হাসপাতালের রিপোর্টেই ডিএমডি ধরা পড়ে।

ইনস্টিটিউট অব চাইল্ড হেল্‌থ-এর ডিরেক্টর, চিকিৎসক অপূর্ব ঘোষ বলেন, ‘‘ডিএমডি জিনঘটিত মাংসপেশীর রোগ। এর অনেকগুলি ভাগ রয়েছে। সাধারণত ছেলেদেরই এই রোগ হয়। প্রথমে হাঁটার সমস্যা দেখা দেয়। সিঁড়ি দিয়ে উঠতে কষ্ট হয়। ১০-১২ বছরের মাথায় আক্রান্ত হুইলচেয়ারের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। এই রোগে আক্রান্তদের আয়ু সাধারণত ২০ বছরের বেশি হয় না।’’

ইন্দ্রজিতের কথায়, ‘‘আমার ছেলের যে রোগ, তার ওষুধ অবিষ্কার করেছে আমেরিকার একটি সংস্থা। এক্সনডিস ৫১ নামে সেই ইঞ্জেকশন ব্রিটেনের একটি সংস্থা সারা দেশে সরবরাহ করে। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, ডিএমডিতে আক্রান্ত মাত্র ১৩ শতাংশ রোগী ওই ওষুধ পেলে সুস্থ হতে পারে। আমার ছেলে ওই ১৩ শতাংশের মধ্যে পড়ে। কিন্তু অর্থের অভাবে ছেলের ওষুধ কিনতে পারছি না।’’ ইন্দ্রজিৎ জানান, এক মাসের ওষুধের দামই ২৮ লক্ষ টাকা! তাঁর সেই সামর্থ্য নেই। ছোট ছেলের চিকিৎসার চিন্তায় জর্জরিত বাবা বলেন, ‘‘ছেলের শরীর বাঁকতে শুরু করেছে। দ্রুত চিকিৎসা শুরু না হলে অবস্থার আরও অবনতি হবে। বিরল রোগে আক্রান্ত রোগীদের বাবাদের একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ আছে। প্রায়ই শুনি কারও না কারও সন্তান মারা গেল! এক জন বাবার ভিতরে সে সময়ে কী চলে ভাবুন।’’

জাতীয় বিরল রোগের চিকিৎসা নীতি (২০১৭) মেনে গত জুনে ছেলের চিকিৎসার জন্য আর্থিক সাহায্য চেয়ে প্রধানমন্ত্রী, মুখ্যমন্ত্রীর দফতর, কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রক ও রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরে চিঠি দেন ইন্দ্রজিৎবাবু। তাতে কাজ না হওয়ায় তিনি কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন। জরুরি ভিত্তিতে শুনানি করে ১২ অক্টোবর হাইকোর্ট স্বাস্থ্য ভবনকে আট সপ্তাহের মধ্যে প্রয়োজনীয় ওষুধ আনিয়ে চিকিৎসা শুরু করার নির্দেশ দেয়। এই নির্দেশের প্রেক্ষিতে রোগীর বাবাকে ডেকে স্বাস্থ্য ভবনে একটি শুনানি হয়েছে। সেই শুনানির প্রেক্ষিতে অর্নেশের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করে স্বাস্থ্য ভবন জানিয়েছে, এই মুহূর্তে রোগীকে আর্থিক সাহায্য করার মতো কোনও ড্রাগ নীতি রাজ্যের নেই! যার প্রেক্ষিতে পাল্টা আদালত অবমাননার মামলা করেছেন ইন্দ্রজিৎ। আগামী ২৯ এপ্রিল মামলার পরবর্তী শুনানি।

আজ, রবিবার যে বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস তা অজানা নয় ইন্দ্রজিতের। বাবার প্রশ্ন, ‘‘দেশ জুড়ে আজ কত সেমিনার, আলোচনা সভা, অনুষ্ঠান হবে। সেখানে স্বাস্থ্য দফতরের প্রতিনিধিরাও

হাজির হন। সকলের জন্য স্বাস্থ্য নিয়ে বক্তৃতাও করবেন। আমার ছেলেটার কথা কেউ ভাববে না!’’

রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তী এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘আমাদের পর্যবেক্ষণ হল, এই রোগ সারে না। ওষুধ দিলে রোগ হয়তো ধীরে বাড়বে। কিন্তু রোগী পুরো সুস্থ হয়ে উঠবে না। আক্রান্ত যত দিন বাঁচবে তত দিন মাসে ২৮ লক্ষ টাকা দিতে হবে। ওষুধ দেওয়ার পরে রোগী যদি সুস্থ হয়ে ওঠেন তাহলে এক রকম, সেই সম্ভাবনা তো নেই। বাঁচার অধিকার সকলের আছে অস্বীকার করছি না। এখানে তো ওষুধ দিয়েও বাঁচানোর জায়গা নেই। রোগকে কেবল ঠেকিয়ে রাখা। তা ছাড়া এই ওষুধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া কী, তা এখনও জানা যায়নি।’’ তবে তিনি জানান, অর্নেশের বিষয়টি নিয়ে বিশেষজ্ঞ কমিটি আবার বসবে। কেন্দ্রও বিরল রোগে নতুন জাতীয় নীতির খসড়া তৈরি নিয়ে পর্যালোচনা করছে।

অর্নেশের আইনজীবী কলিমুদ্দিন মণ্ডল বলেন, ‘‘আমার মক্কেলের দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থা করার জন্য আদালত বলেছিল। এর মধ্যে নীতি থাকা না থাকার প্রশ্ন আসছে কোথা থেকে? নাগরিকের স্বাস্থ্য পরিষেবা পাওয়ার অধিকার সংবিধান আরোপিত দায়িত্ব। তা রাজ্য ও কেন্দ্র, কেউই এ ভাবে অস্বীকার করতে পারে না।’’

বিরল রোগে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার অধিকার নিয়ে কাজ করা ‘অর্গানাইজেশন ফর রেয়ার ডিজিসেস ইন্ডিয়া’-র কর্ণধার প্রসন্ন সিরোল বলেন, ‘‘কেন্দ্র নতুন খসড়া নীতি তৈরির জন্য ন’মাস সময় নিলেও স্বাস্থ্য যে রাজ্যের তালিকাভুক্ত, তা ভুললে চলবে না। খরচ যতই হোক, সকলে যাতে চিকিৎসা পান তা দেখা রাজ্যের কর্তব্য।’’ তিনি জানান, কর্নাটকে রাজ্য সরকারই এ ধরনের রোগীর খরচ বহন করছে।

Duchenne muscular dystrophy World Health Day
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy