Advertisement
১৬ মে ২০২৪
Jadavpur University Student Death

যাদবপুরের ধৃত ছাত্রদের মোবাইলের সব তথ্য উদ্ধার, ‘প্রামাণ্য’ কিছু মিলল? আদালতে জানাবে পুলিশ?

মঙ্গলবার আদালতে হাজির করানো হবে তিন অভিযুক্তকে। তাঁদের জেরা করে কি উঠে এসেছে নতুন কোনও তথ্য? অভিযুক্তদের মোবাইল থেকে যে তথ্য উদ্ধার হয়েছে, এ বার সে দিকেও নজর তদন্তকারীদের।

Graphical representation

গ্রাফিক: সনৎ সিংহ।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ অগস্ট ২০২৩ ২৩:৪২
Share: Save:

যাদবপুরকাণ্ডে ধৃতদের মোবাইল থেকে সব ‘তথ্য’ উদ্ধার করা গিয়েছে। তদন্তকারীদের একাংশ এমনটাই জানিয়েছেন। এই তথ্য থেকেই ছাত্রমৃত্যুর রহস্যের জট অনেকটাই স্পষ্ট হবে বলে মনে করা হচ্ছে। শুধু তাই নয়, ধৃতদের পরস্পরবিরোধী বয়ানে যে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছিল বলে তদন্তকারীদের একাংশ দাবি করেছিলেন, এ বার তা-ও অনেকটা কাটবে বলে মনে করছেন তাঁরা। ছাত্রমৃত্যুর মামলায় পুলিশি হেফাজতে থাকা তিন অভিযুক্ত সৌরভ চৌধুরী, দীপশেখর দত্ত, মনোতোষ ঘোষকে মঙ্গলবার আলিপুর আদালতে হাজির করানো হবে। সৌরভকে এই ঘটনায় প্রথম গ্রেফতার করা হয়েছিল। মঙ্গলেই কি ধৃতদের মোবাইল থেকে উদ্ধার হওয়া সব ‘তথ্য’ আদালতে জমা দেবে পুলিশ? এ প্রশ্নের জবাব যদিও তদন্তকারীদের তরফে মেলেনি।

যাদবপুরকাণ্ডে এখন পর্যন্ত ১৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে অনেকেই প্রাক্তনী। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই রাতে কী ঘটেছিল, তা নিয়ে পরস্পরবিরোধী বয়ান দিয়েছেন অভিযুক্তেরা। বার বার তদন্তকারীদের ভুল পথে চালনা করার চেষ্টা করেছেন বলে তদন্তকারীদের একাংশের দাবি। অভিযুক্তদের সকলেই প্রায় দাবি করেছেন, তাঁরা কিছু জানেন না। নিজেদের নির্দোষ দাবি করে বলেছেন, ঘটনার সময় ছিলেন না। তাতেই বেড়েছে ধন্দ। এমনকি, ৯ অগস্ট রাতে ঠিক ক’টার সময় ওই ছাত্রটি পড়ে গিয়েছিলেন হস্টেলের তিন তলা থেকে, তা-ও এখনও স্পষ্ট হয়নি পুলিশের কাছে। এই পরিস্থিতিতে ধৃতদের ফোন থেকে উদ্ধার হওয়া ‘তথ্য’ তদন্তে অনেকটাই সাহায্য করবে বলে মনে করছেন তদন্তকারীদের একাংশ। ওই অংশ জানিয়েছেন, ফোন থেকে উদ্ধার হওয়া তথ্যের সঙ্গে ধৃতদের বয়ান মিলিয়ে দেখা হচ্ছে। কোনও অভিযুক্ত ফোন থেকে কিছু মুছেছেন (ডিলিট) কি না, তা-ও দেখা হচ্ছে খতিয়ে। এই আবহে সোমবার হস্টেলে একটি কুশপুতুল নিয়ে গিয়ে ঘটনার পুনর্নির্মাণ করাল কলকাতা পুলিশ। পুলিশ সূত্রে খবর, জামা-প্যান্ট পরা সেই কুশপুতুলকে হস্টেলের তিন তলা থেকে নীচে ফেলে দেওয়া হয়। দেখা হয়, কী ভাবে পড়ছে সেই পুতুল। এ ভাবেই সেই রাতের ঘটনার একটা আঁচ পেতে চাইছে পুলিশ।

অন্য দিকে, ছাত্রমৃত্যুর ঘটনায় ক্রমেই কোণঠাসা যাদবপুর কর্তৃপক্ষ। তাঁদের পাঠানো ১২টি প্রশ্নের জবাবেও এ বার ‘অসন্তোষ’ প্রকাশ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। কমিশনের চেয়ারম্যান এম জগদেশ কুমার এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, দ্বিতীয় দফার জবাবেও ‘সন্তুষ্ট নন’ তাঁরা। তাই এ বিষয়ে ব্যাখ্যা চেয়ে আবার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়কে চিঠি লিখতে চলেছে কমিশন।

হাই কোর্টে ছাত্রমৃত্যু নিয়ে তৃণমূলের দায়ের করা জনস্বার্থ মামলাতেও ধাক্কা। হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতির বেঞ্চের প্রশ্ন, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে পুলিশ ঢুকতে পারেনি কেন? এই মামলায় যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদকে যুক্ত করার নির্দেশ দিয়েছে বেঞ্চ। পাশাপাশি, সোমবার যাদবপুরকাণ্ডে ডিন অফ স্টুডেন্টস রজত রায়কে তলব করেছে রাজ্য মানবাধিকার কমিশন। পড়ুয়ার পড়ে যাওয়ার ঘণ্টা দেড়েক আগে ফোন পেয়েছিলেন তিনি। সূত্রের খবর, ফোন পেয়ে কী পদেক্ষপ করেছেন, তা জানতে চাইতে পারে কমিশন।

এই পরিস্থিতিতে র‌্যাগিং রুখতে আরও সক্রিয় হলেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। অ্যান্টি র‌্যাগিং কমিটির বৈঠকে কুইক রেসপন্স টিম তৈরির সিদ্ধান্ত নিল যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের দু’কিলোমিটার এলাকার মধ্যে থাকবে এই দল। ক্যাম্পাস এবং হস্টেলে কোনও রকম অপ্রীতিকর কিছু ঘটলে দ্রুত পদক্ষেপ করবে তারা। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ছাত্রের রহস্যমৃত্যুতে সরাসরি আঙুল তুলেছেন সিপিএমের দিকে। যদিও শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু স্পষ্ট জানিয়েছে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে র‌্যাগিং রুখতে পারবেন পড়ুয়ারাই। রাষ্ট্র বা কর্তৃপক্ষ নন।

হাই কোর্টের নির্দেশ

যাদবপুরে পড়ুয়ামৃত্যু এবং তার পরবর্তী অচলাবস্থা নিয়ে একটি জনস্বার্থ মামলা রুজু হয়েছিল হাই কোর্টে। সেই মামলাতেই হাই কোর্ট জানতে চায়, ঘটনার রাতে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে পুলিশ ঢুকতে পারেনি কেন? হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম এবং বিচারপতি হিরণ্ময় ভট্টাচার্যের ডিভিশন বেঞ্চে। প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ এই মামলায় যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদকে যুক্ত করার নির্দেশ দিয়েছে। এর পাশাপাশি পড়ুয়াদের হস্টেলে থাকার কী নিয়ম রয়েছে, তা-ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে জানানোর নির্দেশ দিয়েছে আদালত। জনস্বার্থ মামলাটি করেছিলেন তৃণমূল ছাত্র পরিষদের রাজ্য সহ-সভাপতি সুদীপ রাহা। সোমবার মামলাকারীর হয়ে সওয়াল করেন আইনজীবী তথা তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। কল্যাণ আদালতে সওয়াল পর্বে জানান, প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে মেধাবী ছাত্রেরা যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার স্বপ্ন দেখেন। অনেক বাবা-মা ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে সন্তানদের ভর্তি করে গর্ব বোধ করেন। কিন্তু সেখানে র‍্যাগিং বড় সমস্যা। সওয়াল শুনে প্রধান বিচারপতি কল্যাণের উদ্দেশে বলেন, “আপনাদের অনেক অভিযোগ দেখছি ছাত্রদের প্রতি। ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদকে নোটিস দেওয়া হোক। তাদের বক্তব্য ছাড়া শুনানি সম্ভব নয়।”

ফের ইউজিসির প্রশ্নমালা

র‌্যাগিং নিয়ে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছ থেকে আবার ব্যাখ্যা চাইবে ইউজিসি। গত শুক্রবারই ইউজিসির ১২টি প্রশ্নের জবাব দিয়েছিলেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। ৩১টি ফাইলে সেই জবাব পাঠানো হয়েছিল বলে জানিয়েছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার স্নেহমঞ্জু বসু। কিন্তু সোমবার ইউজিসির চেয়ারম্যান এম জগদেশ কুমার এক সাক্ষাৎকারে একটি টিভি চ্যানেলকে জানিয়েছেন, দ্বিতীয় দফার জবাবেও ‘সন্তুষ্ট নন’ তাঁরা। তাই এ বিষয়ে ব্যাখ্যা চেয়ে আবার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়কে চিঠি লিখতে চলেছে কমিশন। সে ক্ষেত্রে যাদবপুরের ছাত্রমৃত্যুর ঘটনায় তৃতীয় বার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে পৌঁছবে ইউজিসির ‘প্রশ্নমালা’। ১৩ অগস্ট প্রথম বার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে রিপোর্ট তলব করেছিল ইউজিসি। পরের দিন, ১৪ অগস্ট সেই রিপোর্ট পাঠিয়েছিলেন কর্তৃপক্ষ। তাঁরা দাবি করেছিলেন, ওই রিপোর্টে ‘সন্তুষ্ট’ ইউজিসি। সে কারণে বিশ্বিবদ্যালয়ে প্রতিনিধি দল পাঠাচ্ছে না ইউজিসি। যদিও গত বৃহস্পতিবার ইউজিসি ওই রিপোর্ট নিয়ে ‘অসন্তোষ’ প্রকাশ করে। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ১২টি প্রশ্নের জবাব চায়। না-দিলে কড়া ব্যবস্থার হুঁশিয়ারি দেয়। তার পরেই তথ্য-সহ জবাব পাঠিয়েছিলেন কর্তৃপক্ষ। তাতেও ‘অসন্তোষ’ প্রকাশ ইউজিসির।

পুতুল নিয়ে ফরেন্সিক দল

প্রথম বর্ষের এক ছাত্র গত ৯ অগস্ট রাতে কী ভাবে হস্টেলের বারান্দা থেকে পড়ে গিয়েছিলেন, সেই ঘটনার পুনর্নির্মাণ করতে সোমবার একটি পুতুল নিয়ে হস্টেলে হাজির হয় ফরেন্সিক দল। পুলিশের উচ্চপদস্থ আধিকারিকেরাও সঙ্গে ছিলেন। পুতুলটিকে পরানো ছিল জামাকাপড়। সূত্রের খবর, তার ওজন ওই ছাত্রের ওজনের সমতুল। ওই পুতুলের মাধ্যমেই সে দিনের ঘটনাপ্রবাহ নতুন করে সাজানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন তদন্তকারীদের একাংশ। মেন হস্টেলের এ-২ ব্লকের যে তিন তলার বারান্দা থেকে ওই ছাত্র পড়ে গিয়েছিলেন, সেখানে পুতুলটিকে নিয়ে যাওয়া হয়। উপর থেকে নীচে ফেলে হয় পুতুলটিকে। তা থেকেই তদন্তকারীরা আঁচ পাওয়ার চেষ্টা করেন, কেমন করে পড়ে গিয়েছিলেন সেই পড়ুয়া। ঘটনার পুনর্নির্মাণের সময় হস্টেলে উপস্থিত ছিলেন বহু পুলিশকর্মী। এর আগে ছাত্রমৃত্যুর ঘটনার পুনর্নির্মাণের জন্য ধৃত ছাত্র সপ্তক কামিল্যাকে নিয়ে হস্টেলে গিয়েছিল পুলিশ।

কুইক রেসপন্স টিম

র‌্যাগিং রুখতে এ বার কুইক রেসপন্স টিম তৈরির সিদ্ধান্ত নিল যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের দু’কিলোমিটার এলাকার মধ্যে থাকবে এই দল। ক্যাম্পাস এবং হস্টেলে কোনও রকম অপ্রীতিকর কিছু ঘটলে দ্রুত পদক্ষেপ করবে তারা। সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যান্টি র‌্যাগিং কমিটির বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। প্রথম বর্ষের ছাত্রের মৃত্যুর নেপথ্যে র‌্যাগিংয়ের অভিযোগ উঠেছে। তার পরেই প্রশ্নের মুখে বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যান্টি র‌্যাগিং কমিটির ভূমিকা। এর মধ্যেই নতুন উপাচার্য বুদ্ধদেব সাউয়ের নির্দেশে সোমবার বৈঠকে বসেছে কমিটি। সূত্রের খবর, বৈঠকে সিসি ক্যামেরা বসানো নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বৈঠকে ছিলেন বিভাগীয় প্রধানরা। ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার স্নেহমঞ্জু। র‌্যাগিংয়ের মতো কোনও ঘটনা ঘটছে কি না, তা নিয়ে পড়ুয়াদের অভিভাবকদের সঙ্গেও কথা বলবে ওই কমিটি।

মানবাধিকার কমিশনের তলব

যাদবপুরকাণ্ডে ডিন অফ স্টুডেন্টস রজতকে তলব করল রাজ্য মানবাধিকার কমিশন। কমিশন সূত্রে খবর, সোমবার বেলা ১২টা নাগাদ তাঁকে সল্টলেকের অফিসে ডেকে পাঠানো হয়। পড়ুয়ার মৃত্যুর ঘটনায় গত ১৪ অগস্ট রাজ্য সরকার এবং যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারকে নোটিস পাঠিয়েছিল রাজ্য মানবাধিকার কমিশন। স্বতঃপ্রণোদিত ওই নোটিসে কমিশন জানিয়েছিল, বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের রিপোর্টে যে তথ্য উঠে এসেছে, তাতে দেখা যাচ্ছে যে, ঘটনার আগে ডিনের সঙ্গে কথা বলেছিলেন মৃত ছাত্রের সহ-আবাসিকেরা। তার পরেও কী করে প্রথম বর্ষের ওই ছাত্রের মৃত্যুর ঘটনা ঘটল, তা নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। কমিশন নোটিসে জানিয়েছিল, সংবাদমাধ্যম থেকে পাওয়া তথ্যেই কর্তৃপক্ষের কর্তব্যে অবহেলার কথা উঠে এসেছে। নোটিসে লেখা হয়েছে, সংবাদমাধ্যমের রিপোর্ট যদি সত্যি হয়, তা হলে গোটা ঘটনায় মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়েছে। কমিশন সূত্রে খবর, এই বিষয়টি সবিস্তারে জানতে ডিনকে ডেকে পাঠানো হয়। তাঁর কাছে জানতে চাওয়া হয়, গত ৯ অগস্ট রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেন হস্টেলের এ২ ব্লকের তিন তলার বারান্দা থেকে নবাগত পড়ুয়ার পড়ে যাওয়ার ঘটনার প্রায় ঘণ্টা দেড়েক আগে হস্টেল থেকে ফোন পেয়ে তিনি কী পদক্ষেপ করেছিলেন?

মমতার নিশানায় বামেরা

যাদবপুরকাণ্ডে ফের মুখ খুললেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা। এ বারও সরাসরি নিশানা করলেন সিপিএমকে। সোমবার নেতাজি ইন্ডোরে একটি সভা থেকে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘আগে যাদবপুর নিয়ে আমরা গর্ববোধ করতাম। অথচ সিপিএমের ইউনিয়ন একটা ছেলেকে মেরে ফেলল।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘এরা জীবনে বদলাবে না। বছরের পর বছর রক্ত নিয়ে খেলেও এদের শান্তি নেই।’’ যাদবপুরে ছাত্রমৃত্যুর পরেই মুখ খুলেছিলেন মমতা। তখন তাঁর নিশানায় ছিল বিশ্ববিদ্যালয়। তিনি জানিয়েছিলেন, যাদবপুরের ছেলেটিকে ‘অত্যাচার’ করতে করতে মেরেছে। ওঁর বাবার সঙ্গে তিনি ফোনে কথা বলেছেন। ওঁর বাবা বলেছেন, বিচার চান। ওঁর বাবা ফোনে বলেছেন ছেলে (মৃত পড়ুয়া) খুব কাঁদতেন। বলতেন, খুব অত্যাচার হচ্ছে। তিনি যাবেন বলেও স্থির করেছিলেন। তবে শেষ পর্যন্ত যাননি। এই প্রসঙ্গে মমতা বলেছিলেন, ‘‘ওটা আতঙ্কপুর হয়ে গেছে। আমি এতে মর্মাহত এবং দুঃখিত। আমি যাদবপুরে যেতে চাই না। কারণ, ওখানে পড়াশোনা ভাল হতে পারে। শুধু পড়াশোনায় ভাল হলে মানুষ হয় না। যদি বিবেক না থাকে।”

ব্রাত্যের পরামর্শ

রাষ্ট্র বা কর্তৃপক্ষ র‌্যাগিং রুখতে পারে না। র‌্যাগিং রুখতে হবে উচু ক্লাসের পড়ুয়াদেরই। সোমবার বিধানসভার বাইরে দাঁড়িয়ে এমনটাই জানিয়েছেন ব্রাত্য। তাঁর কথায়, ‘‘র‌্যাগিং সারা ভারতের বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানে হয়। র‌্যাগিং যদি শারীরিক নিগ্রহ হয়, নির্মম হয়, তাতে যদি কোনও মায়ের কোল খালি হয়, মৃত্যুর মতো মর্মান্তিক হয়, তা হলে মানুষ এর প্রতিবাদ করবে। এটা কর্তৃপক্ষ বা রাষ্ট্র আটকাতে পারে না।’’ এর পরেই ব্রাত্য র‌্যাগিং রোখার দায় ছাত্রদের কাঁধে দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘যখন সিনিয়র ছেলেরা জুনিয়রদের ভালবাসতে শিখবেন, বলবেন, ‘মজা করছি বটে, তোকে ভালওবাসছি! জড়িয়ে ধরছি তোকে!’ তখন র‌্যাগিং বন্ধ হবে। ছাত্রদের সদিচ্ছা, ভালবাসাই পারে এটা বন্ধ করতে। এই পদক্ষেপ কানুন নিরপেক্ষ। রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ নিরপেক্ষ। একমাত্র ছাত্রেরাই পারে।’’ প্রথম বর্ষের ছাত্রের মৃত্যুর পর থেকে হস্টেল এবং বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরের গুরুত্বপূর্ণ অংশে সিসি ক্যামেরা বসানোর দাবি উঠেছে। ব্রাত্য যদিও জানিয়েছেন, এই নিয়ে ২৫ রকমের মতামত রয়েছে। ২৬ রকমের মতামত দিয়ে বিষয়টিকে জটিল করার তিনি পক্ষপাতী নন। আপাতত তাঁর একটাই দাবি, বিশ্ববিদ্যালয়ে পঠনপাঠনের পরিস্থিতি ফিরে আসুক। এর পরেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে স্বাধীন ভাবে চলার পক্ষেও সওয়াল করেছেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘স্বাধীন ভাবে চলুক, তবে স্বেচ্ছাচারী ভাবে নয়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE