Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪
Kolkata news

ফেসবুকের ‘বান্ধবী’র ফাঁদে পড়ে ১৯ লক্ষ টাকা উধাও!

আগাছার বীজ প্যাকেটবন্দি করে ভেষজর বীজ বলে প্রায় ১৯লাখ টাকা প্রতারণা করা হয়েছে ভাস্করকে। আর গোটা পরিকল্পনার গোড়াতে রয়েছে সঞ্চিতা দে নামে বেঙ্গালুরুর বাসিন্দা এক বাঙালি যুবতী।

বিধাননগর পুলিশের হাতে গ্রেফতার সঞ্চিতা। নিজস্ব চিত্র।

বিধাননগর পুলিশের হাতে গ্রেফতার সঞ্চিতা। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০৯ জুন ২০১৮ ১৭:১৬
Share: Save:

ফেসবুকে পরিচয়। তার পর খাস মার্কিন মুলুক থেকে ব্যবসার প্রস্তাব। যিনি প্রস্তাব দিলেন তিনি বেশ কেউকেটা, মার্কিন সেনাবাহিনীর মহিলা অফিসার। আর সেই লোভনীয় ব্যবসার টোপ গিলেই প্রায় ১৯ লাখ টাকা খোয়ালেন বাগুইআটির ভাস্কর ঘোষ, হিন্দুস্তান কেবলের অবসরপ্রাপ্ত কর্মী।

শুরুটা এপ্রিলের গোড়ার দিকে। সদ্য ফেসবুক ব্যবহার করা শুরু করেছেন ভাস্করবাবু। হঠাৎ অ্যানে এলিজাবেথ নামে এক শ্বেতাঙ্গ সুন্দরীর ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট। ‘বন্ধুত্ব’-এর এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করতে পারেননি ভাস্কর। তার পর থেকেই শুরু হয় চ্যাট। আর সেখান থেকেই জানতে পারেন, অ্যানে মার্কিন সেনা অফিসার। কিন্তু বেশিদিন আর চাকরি করতে চাননা। আর সেখান থেকেই ব্যবসার প্রসঙ্গ ওঠে।

ভারতের ভেষজের নাকি মার্কিন মুলুকে ব্যাপক কদর। আর সেই সূ্ত্রেই সেই ভেষজের বীজের ব্যবসার প্রস্তাব ভাস্করকে দেয় অ্যানে। এই মহিলাই ভাস্করকে বিনিতা শর্মা নামে এক জনের খোঁজ দেন। বিনিতাই নাকি ভারতে ওই বিশেষ ভেষজ বীজের সরবরাহকারী। এপ্রিলেই বিনিতার অ্যাকাউন্টে ১৯হাজার টাকা পাঠান ভাস্কর। তার পরিবর্তে ক্যুরিয়ারে আসে কয়েকটি বীজ। এরপর অ্যানের পাঠানো মার্কিন কোম্পানির শীর্ষ আধিকারিকের সঙ্গে বেঙ্গালুরুতে বৈঠক। ভাস্করের কাছ থেকে ওই একটি বীজ একশো ডলার দিয়ে কিনে নেন ওই ‘আধিকারিক’এবং বলেন, বীজ আমেরিকার পরীক্ষাগারে পরীক্ষার পর পরবর্তী বরাত দেওয়া হবে।

আরও পড়ুন: লালবাজারের কাছেই গুন্ডা দিয়ে মার পুলিশকর্মীকে, অভিযুক্ত স্ত্রী

সেই মতো কয়েকদিন পরেই ভাস্কর একশো প্যাকেট বীজের বরাত পান। চুক্তি হয়, প্রতি প্যাকেট ৮১ হাজার টাকায় কিনবে মার্কিন ওই সংস্থা।ভাস্কর বরাত পেয়েই বিনিতাকে ১০০প্যাকেটের বরাত দিয়ে দেন এবং দাম হিসেবে ১৮ লাখ টাকা বিনিতার অ্যাকাউন্টে ট্রান্সফার করে দেন। এরপর সপ্তাহ চলে যায়। কেউ আর সেই বরাতের বীজ নিতে যোগাযোগ করে না। এদিকেঅ্যানে, বিনিতা বা সেই মার্কিন কোম্পানির আধিকারিক, কারও সঙ্গেই যোগাযোগ করতে ব্যর্থ হন ভাস্কর। তখন তাঁর টনক নড়ে। গোটা বিষয়টি বিধাননগর পুলিশের সাইবার ক্রাইম থানাতে জানানোর পর তদন্তে জানা যায় গোটাটাই নাটক। আগাছার বীজ প্যাকেটবন্দি করে ভেষজর বীজ বলে প্রায় ১৯লাখ টাকা প্রতারণা করা হয়েছে ভাস্করকে। আর গোটা পরিকল্পনার গোড়াতে রয়েছে সঞ্চিতা দে নামে বেঙ্গালুরুর বাসিন্দা এক বাঙালি যুবতী। ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের সূত্র ধরেই এই চক্রকে ধরা গিয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।

পুলিশের জালে সঞ্চিতার স্বামী জনসন (ডান দিকে) এবং তার দুই বন্ধু। নিজস্ব চিত্র।

আরও পড়ুন: কলেজ ছাত্র নিগ্রহে অভিযুক্তরাই পুলিশের উপর নজরদারি চালাত!

বেঙ্গালুরুতে ঘাঁটি গেড়ে থাকা ঘানা,নাইজেরিয়া এবং গিনির কয়েকজন যুবকের সঙ্গে পরিকল্পনা করে এই প্রতারণার ফাঁদ পাতে সঞ্চিতা। বিধাননগর পুলিশ সঞ্চিতা-সহ চারজনকে গ্রেফতার করেছে। বেঙ্গালুরুতে তথ্যপ্রযুক্তি নিয়ে পড়তে গিয়ে দু’বছর আগে ঘানার যুবক জনসনকে বিয়ে করে সে। তাদের সাত মাসের কন্যাসন্তানও আছে। শনিবার সঞ্চিতাকে তার শিশুসন্তান-সহ আদালতে তোলা হয় তার স্বামী জনসন ও আরও দুই অভিযুক্তের সঙ্গে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Facebook African fraud case কলকাতা
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE