Advertisement
E-Paper

গিরিশ পার্ক কাণ্ডে ধৃত আরও ৩, গোপাল তবু অধরাই

পুরভোটের দিন গিরিশ পার্কে সাব-ইনস্পেক্টরের গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনায় আরও তিন যুবককে গ্রেফতার করল লালবাজার। পুলিশ জানিয়েছে, প্রথমে শনিবার দুপুরে মধ্য কলকাতার মেছুয়া এলাকা থেকে পাকড়াও করা হয় দুই যুবককে। তাদের নাম মহম্মদ কামাল এবং কলিম খান ওরফে চিনা।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৩ মে ২০১৫ ০২:৩৯
বিতর্কিত সেই ছবি। তৃণমূল বিধায়ক স্মিতা বক্সির সঙ্গে ধৃত দুই যুবক কামাল (নীল দিয়ে চিহ্নিত) ও চিনা (লাল দিয়ে চিহ্নিত)। এরা ছাড়াও পুলিশ গ্রেফতার করেছে তারক কোটালকে (ইনসেটে)। — নিজস্ব চিত্র।

বিতর্কিত সেই ছবি। তৃণমূল বিধায়ক স্মিতা বক্সির সঙ্গে ধৃত দুই যুবক কামাল (নীল দিয়ে চিহ্নিত) ও চিনা (লাল দিয়ে চিহ্নিত)। এরা ছাড়াও পুলিশ গ্রেফতার করেছে তারক কোটালকে (ইনসেটে)। — নিজস্ব চিত্র।

পুরভোটের দিন গিরিশ পার্কে সাব-ইনস্পেক্টরের গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনায় আরও তিন যুবককে গ্রেফতার করল লালবাজার। পুলিশ জানিয়েছে, প্রথমে শনিবার দুপুরে মধ্য কলকাতার মেছুয়া এলাকা থেকে পাকড়াও করা হয় দুই যুবককে। তাদের নাম মহম্মদ কামাল এবং কলিম খান ওরফে চিনা। সন্ধের দিকে এসপ্ল্যানেড বাস গুমটি থেকে ধরা হয় তারক কোটাল ওরফে বাবলি নামে আরও এক জনকে। পুলিশের দাবি, কলকাতায় ভোটের দিন পুলিশকে লক্ষ্য করে বোমা মেরেছিল বাবলি। সে মূল অভিযুক্ত গোপাল তিওয়ারির অন্যতম ঘনিষ্ঠ। সে দিন পুলিশের উপর হামলার ঘটনায় কামাল ও চিনাও জড়িত ছিল বলে অভিযোগ।

গত ১৮ এপ্রিল বিকেলে গিরিশ পার্ক এলাকার সিংহিবাগানে হাঙ্গামা থামাতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হন জগন্নাথ মণ্ডল নামে কলকাতা পুলিশের এক সাব-ইনস্পেক্টর। সেই ঘটনার ঘণ্টা খানেকের মধ্যেই গিরিশ পার্কে শাসক দলের একটি অফিস থেকে অশোক শাহ ও দীপক সিংহ নামে দুই তৃণমূলকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়। তার পরের দিন ধরা পড়ে এই ঘটনার মূল চক্রী গোপাল তিওয়ারির ঘনিষ্ঠ চার দুষ্কৃতী। তার পর বৃহস্পতিবার রাতে বীরভূমের নলহাটির বরাগ্রাম থেকে গ্রেফতার করা হয় গোপাল ঘনিষ্ঠ আর এক দুষ্কৃতী সমীর দাস ওরফে ছোট্টুকে। এ দিন আরও তিন জনের গ্রেফতারের পর এই ঘটনায় মোট ধৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ১০।

পুলিশ সূত্রের খবর, মেছুয়ার বাসিন্দা কামাল ও চিনা এলাকায় তৃণমূল কর্মী বলে পরিচিত। এ দিন ফের একটি ছবি প্রকাশ্যে এসেছে। তাতে জোড়াসাঁকোর তৃণমূল বিধায়ক স্মিতা বক্সীর পাশে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গিয়েছে কামাল ও চিনাকে। এই দু’জনের সঙ্গে গিরিশ পার্ক কাণ্ডে অন্যতম অভিযুক্ত রাজা শর্মারও যোগাযোগ রয়েছে বলে লালবাজার সূত্রের খবর। এ দিন ওই ছবি নিয়ে প্রশ্ন করা হলে স্মিতাদেবী বলেন, ‘‘জনপ্রতিনিধি হিসেবে আমাকে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যেতে হয়। সেই সময় অনেকেই ছবি তোলে। আমার সঙ্গে ছবি থাকলেই তাকে আমি চিনব এমন তো হতে পারে না।’’ প্রসঙ্গত, এর আগে এই ঘটনার মূল চক্রী গোপাল তিওয়ারির সঙ্গেও রাজ্যের মন্ত্রী শশী পাঁজা ও মধ্য কলকাতার তৃণমূল নেতা সঞ্জয় বক্সীর (স্মিতাদেবীর স্বামী) ছবি প্রকাশ্যে এসেছিল। তখনও শশীদেবী ও সঞ্জয়বাবু কার্যত একই কারণ দেখিয়ে গোপালকে চেনেন না বলে দাবি করেছিলেন।

ছোট্টুকে জেরা করে শুক্রবারই গোপালের বাড়িতে রীতিমতো এক অস্ত্রাগারের হদিস পেয়েছিলেন গোয়েন্দারা। সিসিটিভির নিরাপত্তায় মোড়া ওই অস্ত্রাগার থেকে প্রায় সাড়ে ৬ কিলোগ্রাম বোমার মশলা-সহ দু’টি ৭এমএম পিস্তল, একটি ৯এমএম পিস্তল, একটি দেশি ওয়ান শটার পিস্তল, পাঁচটি ম্যাগাজিন এবং ১০১ রাউন্ড কার্তুজ বাজেয়াপ্ত করেছে পুলিশ। গোয়েন্দা সূত্রের খবর, গোপালের বাড়িতে অস্ত্র ভাণ্ডারের খোঁজ পাওয়ার পরেই উঠে এসেছে বন্দর এলাকার এক অস্ত্র ব্যবসায়ীর নাম। ভোটে ব্যবহারের জন্য ওই ব্যবসায়ীর কাছ থেকেই বোমা-গুলি-বিস্ফোরক কিনে এনেছিল মধ্য কলকাতার দুষ্কৃতী গোপাল। তার বাড়ির ছাদে বসেই বোমা বেঁধেছিল তার শাগরেদরা। সেই সূত্রে ওই ব্যবসায়ীকেও গ্রেফতার করা হতে পারে বলে লালবাজার সূত্রের খবর।

ছোট্টুকে জেরা করে পুরভোটের দিন মধ্য কলকাতায় গোপালের ভোট নিয়ন্ত্রণ নিয়েও তথ্য পেয়েছেন লালবাজারের গোয়েন্দারা। কী রকম সে তথ্য? পুলিশের দাবি, ভোটের দিন মধ্য কলকাতা দাপিয়ে বেড়়ানো দুষ্কৃতীদের কন্ট্রোল রুমও ছিল গোপালের বাড়ি। ভোটের কাজে নামার আগে গোপালের বাড়িতে বসে অস্ত্র-বোমা ভাগ করার দায়িত্ব ছিল তার তিন শাগরেদ বাপ্পা, বাবলি ও ইফতিকারের উপরে। এর মধ্যে ইফতিকার আর বাবলিকে গোয়েন্দারা গ্রেফতার করতে পেরেছেন। বাপ্পা পলাতক। শুক্রবার রাতে ছোট্টুকে নিয়ে বাবলির বাড়িতে হানা দিয়েছিল লালবাজারের একটি দল। তখন সেখানে বাবলিকে না পেলেও তার স্ত্রী ও মাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।

প্রশ্ন উঠেছে, ঘটনার দু’দিন পরেও এত অস্ত্র আর বিস্ফোরক না সরিয়ে গোপাল কলকাতা ছাড়ল কেন? লালবাজারের গোয়েন্দাদের ব্যাখ্যা, ১৮ এপ্রিলের ঘটনার পরেই গোপাল বুঝতে পেরেছিল, বিষয়টি নিয়ে হইচই হতে পারে। তাই নিজেকে বাঁচাতে কয়েক জন নেতা এবং লালবাজারে তার ঘনিষ্ঠ অফিসারদের ফোন করেছিল সে। তার পর কিছুটা আশ্বস্ত হয়েই ১৯ এপ্রিল তারাপীঠে ঘনিষ্ঠ শাগরেদদের নিয়ে পুজো দিতে গিয়েছিল সে। ২০ এপ্রিল শহরে ফিরে গোপাল বুঝতে পারে, লালবাজারে তার ঘনিষ্ঠরা তাকে বাঁচাতে পারবে না। এর পরেই ঘনিষ্ঠদের নিয়ে শহর ছাড়ে সে। ‘‘তড়িঘড়ি পালানোর ফলেই গোপাল ও তার ঘনিষ্ঠরা এই অস্ত্রাগার সরাতে পারেনি,’’ মন্তব্য এক গোয়েন্দা অফিসারের। এর মধ্যে লাগাতার বাইরে থাকার সময় এলাকার খোঁজ নিতে কলকাতার কয়েক জন দুষ্কৃতীর সঙ্গে যোগাযোগ করে ছোট্টু। সেই সূত্রেই তার হদিস পান গোয়েন্দারা। ছোট্টু ধরা পড়ার পরে গোপালের হদিস আরও নিশ্চিত ভাবে মিলতে পারে বলে মনে করছেন গোয়েন্দারা। কেন?

পুলিশ সূত্রের খবর, তোলাবাজির পাশাপাশি গোপাল তিনটি রিয়েল এস্টেট সংস্থা খুলেছিল। গোপালের ব্যবসা দেখভাল করত ছোট্টু, ইফতিকার এবং বাবলি। ঘটনার পরেই ইফতিকারকে গ্রেফতার করেছিল লালবাজার। ছোট্টু আর বাবলিকেও পাকড়াও করা হয়েছে। ইফতিকার গ্রেফতার হওয়ার পরে ছোট্টুর সঙ্গে গোপাল যোগাযোগ রাখছিল। তার কিছু প্রমাণও পেয়েছেন গোয়েন্দারা। সেই সূত্র ধরেই এ বার গোপালের কাছে পৌঁছনো যাবে বলে তদন্তকারীদের আশা। যদিও গোপাল আদৌ গ্রেফতার হবে কি না, তা নিয়ে এ দিন সংশয় প্রকাশ করেছেন বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসু। গোপাল ঘনিষ্ঠ কয়েক জনকে ইতিমধ্যেই গ্রেফতার করেছে পুলিশ। সাংবাদিকদের প্রশ্ন ছিল, এর পরেও কি তিনি বলবেন যে, পুলিশ দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে না? জবাবে বিমানবাবু পাল্টা বলেন, ‘‘কিছু ক্ষেত্রে দুষ্কৃতীরা গ্রেফতার হলেও, তারা শাস্তি পেয়েছে, এমন দৃষ্টান্ত খুঁজে দেখান।’’

এ দিকে এই ঘটনায় প্রথম পর্যায়ে ধৃত ৬ জনকে এ দিন ব্যাঙ্কশাল কোর্টে হাজির করানো হয়। সরকারি আইনজীবী জানান, ধৃতদের টিআই (টেস্ট আইডেনটিফিকেশন) প্যারেড বাকি। তাদের জেল হাজতে পাঠানোর আর্জি জানান। বিচারক ছ’জনকেই ১৬ মে পর্যন্ত জেল হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। আজ, রবিবার কামাল, চিনা আর বাবলিকে ব্যাঙ্কশাল কোর্টে তোলা হবে।

post-civic poll clash policeman injured police Girish park gopal tiwari Lalbazar
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy