Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

চিড়িয়াখানায় না গিয়ে সভায় যান, ঘোষণা মাইকে

দর্শক: চিড়িয়াখানায় ভিড় জমিয়েছেন সমাবেশে আসা তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকেরা। রবিবার। ছবি: রণজিৎ নন্দী

দর্শক: চিড়িয়াখানায় ভিড় জমিয়েছেন সমাবেশে আসা তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকেরা। রবিবার। ছবি: রণজিৎ নন্দী

নীলোৎপল বিশ্বাস
কলকাতা শেষ আপডেট: ২২ জুলাই ২০১৯ ০৩:৪০
Share: Save:

পিটিএস মোড়ে তৃণমূলের শহিদ দিবসের শিবির করা হয়েছে। রবিবার দুপুরে সেখানে থেকে মাইক হাতে চেঁচিয়ে চলেছেন এক ব্যক্তি। বলছেন, ‘‘আপনারা হয়তো জানেন না। আজ রবিবার, চিড়িয়াখানা দুপুর আড়াইটের পরে খোলে। ও দিকে না গিয়ে সভাস্থলের দিকে এগিয়ে চলুন।’’ লাগাতার এই ঘোষণার পরে সেই ব্যক্তি বলেন, ‘‘পুরমাতা পাপিয়া সিংহের উদ্যোগে এই শিবির হয়েছে। টিফিনেরও ব্যবস্থা আছে। চিড়িয়াখানায় না গিয়ে সভায় যান!’’

ধর্মতলা বা তার সংলগ্ন এলাকায় সভা হলেই দেখা যায়, সভাস্থল ছেড়ে শহরের দর্শনীয় স্থানগুলিতে ভিড় জমান অনেকে। পছন্দের তালিকায় উপরের দিকে থাকে চিড়িয়াখানা, ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল বা নিদেনপক্ষে বাবুঘাট! রবিবার তৃণমূলের শহিদ দিবস পালনের অনুষ্ঠানেও এর অন্যথা হয়নি। সকাল ১১টায় সভা শুরু হয়। সাড়ে ১১টা থেকেই দেখা গেল, ধর্মতলার আশপাশের দর্শনীয় স্থানগুলিতে ব্যাপক ভিড়। তাঁদের বেশির ভাগই জানালেন, সভা হয়ে এসেছেন। কারও আবার রোদে বসে নেতাদের কথা শোনার ইচ্ছে ছিল না। তাই বাস বা ট্রেন থেকে নেমেই বুকে তৃণমূলের দেওয়া ব্যাজ লাগিয়ে সোজা ঢুকেছেন চিড়িয়াখানায় বা ভিক্টোরিয়ায়।

যাঁদের সেই পর্যন্ত গিয়ে কসরত করতে ইচ্ছে করেনি, তাঁরা আশ্রয় নিয়েছেন ময়দানে দাঁড় করানো বাসের নীচে চাকার পাশের ছায়ায়। পাশাপাশি, অন্য সভাগুলির মতোই রান্না চাপিয়ে ময়দান জুড়ে কার্যত পিকনিক চলেছে এ বারেও। খেতে বসে আরও এক হাতা মাংস চেয়ে বাঁকুড়া থেকে আসা নিমাই সর্দার বললেন, ‘‘আসার পথে আমাদের বাসে হামলা হয়েছে। আর সভায় যাব না। খেয়ে ঘুমোব।’’ ময়দানেই আরও একটি বাসের সামনে রীতিমতো তাঁবু টাঙিয়ে খেতে ব্যস্ত মুর্শিদাবাদ থেকে আগতদের এক জন বললেন, ‘‘সভার কথা তো এখান থেকেই শোনা যাচ্ছে। খেয়ে নিয়ে যাঁর ইচ্ছে হয় বিশ্রাম করুন, বাকিরা চাইলে ঘুরে আসতে পারেন। কলকাতায় তো রোজ রোজ আসা হয় না!’’

দুপুর একটা নাগাদ তখন বক্তৃতা চলছে তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। আওয়াজ স্বাভাবিক ভাবেই চিড়িয়াখানায় পৌঁছচ্ছে না। বুকে তৃণমূলের ব্যাজ লাগানো কয়েক জনকে দেখা গেল, মোবাইলে ব্যস্ত। দলনেত্রীর বক্তৃতা সেখানে ‘লাইভ’ চলছে। স্বপন হাঁসদা নামে তাঁদেরই এক জন বললেন, ‘‘দিদি বেশি ক্ষণ আজ বলবেন না। ভাগ্যিস বসে না থেকে, এখানে (চিড়িয়াখানা) চলে এসেছিলাম!’’ দুপুর রোদে বাঘের ঘরের সামনে দাঁড়িয়ে জনা পাঁচেক যুবককে দেখা গেল, তার দেখা পাওয়ার আশায় মুখে নানা আওয়াজ করে চলেছেন। শেষে বিরক্ত হয়ে তাঁদেরই এক জন বলেন, ‘‘দিদির কথা না শুনে এখানে এসেছি ভাই। লক্ষ্মীটি বেরিয়ে আয়!’’

সভায় যাওয়ার এমনই কাতর অনুরোধ তো দেখা গিয়েছিল পিটিএস মোড়ের তৃণমূলের শিবিরে। কলকাতা পুরসভার ৭১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পাপিয়া সিংহ বললেন, ‘‘অনেকে চিড়িয়াখানার দিকে গিয়ে হারিয়ে যান। অনেক ভোর থেকে আমাদের শিবির হয়। তার মধ্যে কেউ হারিয়ে গেলে, সন্ধ্যা পর্যন্ত বসে থাকতে হয়। সেই জন্যই সভায় যেতে বলা হয়েছে।’’ কিন্তু চিড়িয়াখানা তো এ দিন সকাল পৌনে আটটা থেকেই খোলা ছিল? ঘোষণাটি যিনি করছিলেন, তাঁর নাম অরূপ সরকার। অরূপের দাবি, ‘‘চিড়িয়াখানা বন্ধ দেখে কয়েক জন ফিরে এসেছেন শুনেছিলাম তখন। এত দূরে গিয়ে কারও যাতে হয়রানি না হয়, তাই ওই

ঘোষণা করছিলাম!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE