প্রতীকী ছবি.
একরত্তি মেয়েটি কখনও জল ভর্তি ড্রাম টানতে টানতে বাড়ি নিয়ে যাচ্ছে, কখনও আবার অসংখ্য বাসন পরিষ্কার করছে। নজরে পড়েছিল তখনই। তার পরে মেয়েটির আর্তনাদে আর স্থির থাকতে পারেননি স্থানীয়েরা। অকথ্য অত্যাচার চলত সাত বছরের ওই মেয়েটির উপরে। অভিযোগ ওঠে মেয়েটির বাবা ও মায়ের বিরুদ্ধেই।
একাধিক বার বোঝানো সত্ত্বেও মেয়েটির বাবা এবং মা কথা শোনেননি। শেষে শনিবার পুলিশের দ্বারস্থ হন বাসিন্দারা। বাবা-মা থানায় গিয়ে রীতিমতো মুচলেকাও দিয়ে আসেন। কিন্তু তাতেও কাজ হয়নি। শনিবার রাত থেকেই ফের বাবা-মা ওই একরত্তি মেয়েটিকে মারধর করতে শুরু করেন বলে অভিযোগ। এর পরেই রবিবার সকালে ক্ষোভে ফেটে পড়েন বাসিন্দারা। এ বার পুলিশ মেয়েটির বাবা-মাকে গ্রেফতার করে।
বিধাননগর পুরসভার ৩৮ নম্বর ওয়ার্ডে দত্তাবাদের সবুজ সঙ্ঘ নামের একটি ক্লাবের কাছের ঘটনা। ধৃতদের নাম শুকদেব দাস এবং দীপালি দাস। রাতে অবশ্য জামিনে মুক্তি পেয়ে যান তাঁরা।
বাসিন্দারা জানান, পাঁচ বছর আগে নামখানার বাসিন্দা শুকদেব দত্তাবাদে ঘর ভাড়া নিয়ে বসবাস করতে শুরু করেন। দিপালী তাঁর দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রী। শুকদেবের প্রথম পক্ষের দুই মেয়ে। ছোট মেয়ের উপরেই এই অত্যাচার চলত বলে অভিযোগ।
পুলিশ সূত্রের খবর, দত্তাবাদের কাছে সল্টলেকের একটি আবাসিক এলাকায় এক ব্যক্তির গাড়ি চালানোর কাজ করেন শুকদেব। মেয়েটিকে মাত্র পাঁচ মাস আগে দত্তাবাদে নিজের কাছে নিয়ে এসেছেন শুকদেব। তাঁর বড় মেয়ে নামখানায় এক আত্মীয়ের কাছে থাকেন বলে জানতে পেরেছে পুলিশ।
বাসিন্দাদের অভিযোগ, গত ৩-৪ মাস ধরেই মেয়েটির উপরে অত্যাচার করতেন বাবা-মা। মেয়েটির গায়ে ছ্যাঁকা দেওয়ার দাগ, মারধরের চিহ্ন রয়েছে। এমনকী শীতের রাতে শুকদেব-দীপালি খাটের উপরে ঘুমোলেও মেয়েটিকে মেঝেতে শুইয়ে রাখত। একাধিক বার নিষেধ করা সত্ত্বেও দীপালি মারধর থামাননি। এর পরেই পড়শিরা পুলিশকে জানান।
প্রশ্ন উঠেছে, মেয়েটির ভবিষ্যৎ নিয়ে। যদিও দত্তাবাদের এক বাসিন্দা তাঁকে নিজের কাছে রাখতে চান। তিনি বলেন, ‘‘আমরা গরিব। আমার ছেলেমেয়ে রয়েছে। তবুও ওঁকে কাছে রাখতে চাই। ওই কষ্ট চোখে দেখা যায় না।’’ যদিও পুলিশ সূত্রের দাবি, জেরায় মেয়েটির বাবা-মা জানিয়েছেন, তাঁরা মাঝেমধ্যে মারধর করতেন। কিন্তু অকথ্য অত্যাচার বলতে যা বলা হচ্ছে, তা ঠিক নয়।
যদিও স্থানীয় কাউন্সিলর তৃণমূলের নির্মল দত্ত বলেন, ‘‘ওয়ার্ড অফিসে শুকদেবকে বোঝানো হয়েছিল। নিজের মেয়েকে বাবা-মা এমন অত্যাচার করতে পারে, ধারণার বাইরে।’’
উত্তর ২৪ পরগনার শিশু কল্যাণ সমিতির নির্দেশে ওই শিশুটিকে একটি হোমে রাখা হয়েছে। আজ, সোমবার সমিতির কাছে শিশুটিকে হাজির করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy