Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

স্বামীহারাকেও কাছে টেনে সিঁদুরখেলা

ঘরোয়া ওই মুহূর্তে বৃদ্ধা হিরণদেবী গালে সিঁদুর দেওয়ার পরে তাঁকে প্রণাম করেন রাজকুমার, লোনা, সানি, রিনিরা। বৃদ্ধা জানান, ১২ বছর আগে তাঁর স্বামী সদানন্দ ঘোষাল মারা যান।

একসঙ্গে: বৃদ্ধার সঙ্গে সিঁদুরখেলায় রূপান্তরকামীরা। মঙ্গলবার, নিউ টাউনের একটি আবাসনে। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক

একসঙ্গে: বৃদ্ধার সঙ্গে সিঁদুরখেলায় রূপান্তরকামীরা। মঙ্গলবার, নিউ টাউনের একটি আবাসনে। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক

সৌরভ দত্ত
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ অক্টোবর ২০১৯ ০০:২৯
Share: Save:

দশমীতে প্রথা ভাঙার শুভ বিজয়া। ৮৪ বছরের স্বামীহারা বৃদ্ধা হিরণ ঘোষাল মধ্যমণি হয়ে রয়েছেন। সিঁদুরের থালা হাতে তাঁকে ঘিরে রূপান্তরকামীরা। ঢাকে কাঠি পড়তেই শুরু হল সিঁদুরখেলা। মঙ্গলবার এ ভাবেই বিসর্জনের বিষাদ ভুলিয়ে প্রথা ভাঙার আবাহনে মাতলেন নিউ টাউনের থাকদাঁড়ির মানিকপাড়ার একটি আবাসনের বাসিন্দারা।

সেই আবাহনের এক প্রান্তে রূপান্তরকামী রাজকুমার দাস, লোনা সাহা ভট্টাচার্য, সানি মুখোপাধ্যায়েরা। অন্য প্রান্তে পরিবর্তনকামী হিরণ ঘোষালেরা। সিঁদুরখেলায় রূপান্তরকামীদের আমন্ত্রণ নতুন নয়। কিন্তু এ দিনের অনুষ্ঠান প্রসঙ্গে রাজকুমার বললেন, ‘‘খুব কম মানুষই আমাদের কাছে টেনে নেন। সেখানে শহর কলকাতার বাইরে এমন এলাকা থেকে আমন্ত্রণ অনেক বড় পাওয়া।’’ এ দিন আবাসনে পৌঁছনো মাত্র রূপান্তরকামীদের বরণ করে নেন মহিলারা। রীতি মেনে শুরু হয় সিঁদুরখেলা, মিষ্টিমুখ, ঢাকের তালে নাচ এবং সব শেষে কোলাকুলি। রাজকুমারের কথায়, ‘‘এখানে ঘরোয়া পরিবেশে যে ভাবে বিজয়া হল, কোনও দিন ভুলব না।’’

ঘরোয়া ওই মুহূর্তে বৃদ্ধা হিরণদেবী গালে সিঁদুর দেওয়ার পরে তাঁকে প্রণাম করেন রাজকুমার, লোনা, সানি, রিনিরা। বৃদ্ধা জানান, ১২ বছর আগে তাঁর স্বামী সদানন্দ ঘোষাল মারা যান। সেই থেকে মণ্ডপে উপস্থিত থাকলেও উপচারের সঙ্গে যুক্ত হতেন না। কিন্তু এ বছর আক্ষরিক অর্থেই অন্য পুজো তাঁর। হিরণদেবীর কথায়, ‘‘আমার স্বামী বলতেন, যা ইচ্ছে হবে করো। মনে কুসংস্কার জন্মাতে দিও না। এ ভাবে বহু দিন সিঁদুর খেলিনি। ছোট ছোট চেষ্টাই তো মানুষের মনকে উদার করে।’’ পাশে বসা মেয়ে শুক্লা চক্রবর্তী বললেন, ‘‘আমরা আনন্দ করব। আর মা উপরে থাকবেন। কোন মা বা মেয়ের এটা ভাল লাগে? যাঁর আরাধনা করছি, তিনিও তো মা।’’

বছর তিনেক আগে আবাসনের মহিলারা মিলে এই পুজো শুরু করেন। সেই পুজোর কোষাধ্যক্ষ ছিলেন এ বছরের সম্পাদক তনিমা বন্দ্যোপাধ্যায়। পাঁচ বছর আগে প্রয়াত হয়েছেন তাঁর স্বামী। তাঁর মতো অন্য স্বামীহারারাও যাতে আনন্দের শরিক হতে পারেন, সে জন্য তৎপর হয়েছিলেন তনিমা। হিরণদেবীর পাশাপাশি আশপাশের এলাকা থেকে আরও কয়েক জন মহিলাকে আমন্ত্রণ জানান। তনিমার কথায়, ‘‘মিলনের উৎসবে তো ভেদাভেদ থাকা উচিত নয়। সেই ভাবনা থেকেই এমন উদ্যোগ। বছরে একটা দিন কয়েক ঘণ্টার জন্য যদি সিঁদুর পরি, ক্ষতি কী! এর জন্য কথা শুনতে হবে জানি। তবুও এগিয়েছি। কারণ, না এগোলে কিছু বদলাবে না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Durga Puja 2019 Transgender Widow
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE