Advertisement
১৮ মে ২০২৪
Kali Puja 2021

kali Puja 2021: ‘ওই একটা বাজিতেই শেষ আমার গোটা পরিবার’

দেড় বছর তালাবন্ধ থাকার পরে বেহালার ঢালিপাড়ার সেই ঘরে নতুন ভাড়াটেরা এসেছেন। পাড়ায় দেখা মেলে না আদির পরিবারের কারও।

চম্পা দাস।

চম্পা দাস। ছবি: রণজিৎ নন্দী।

নীলোৎপল বিশ্বাস
কলকাতা শেষ আপডেট: ৩১ অক্টোবর ২০২১ ০৬:৫৬
Share: Save:

দু’বছর আগের ঘটনা। কালীপুজোর রাতে জ্বলন্ত তুবড়ির খোল ফেটে ঢুকে গিয়েছিল গলায়। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয়েছিল পাঁচ বছরের আদি দাসের। সন্তান হারানোর শোকে বেশ কিছু দিন কাজে ফেরার মতো অবস্থায় ছিলেন না একটি সংস্থার নিরাপত্তাকর্মী কাজল দাস। ওই ঘটনার কয়েক মাসের মধ্যেই শুরু হয় লকডাউন। তখন কাজলবাবুকে আর কাজে নিতে চায়নি ওই সংস্থা। সন্তান হারিয়ে আর স্বামীর সঙ্গে থাকতে চাননি আদির মা, চন্দ্রা। অন্যত্র চলে যান। এর দিনকয়েক পরে ভাড়ার ঘরে আত্মঘাতী হন কাজলবাবু!

দেড় বছর তালাবন্ধ থাকার পরে বেহালার ঢালিপাড়ার সেই ঘরে নতুন ভাড়াটেরা এসেছেন। পাড়ায় দেখা মেলে না আদির পরিবারের কারও। এলাকাবাসীর স্মৃতিতে আতঙ্কের অধ্যায় হিসাবে থেকে গিয়েছেন তাঁরা। পাড়ার কেউ কেউ বলেন, ‘‘একটা বাজির জন্য শেষ হয়ে গেল গোটা পরিবার!’’ এই শেষ হয়ে যাওয়ার গল্প শুধু আদিরই নয়। ওই দিনই তুবড়ির খোল ফেটে কসবায় মৃত্যু হয়েছিল দীপকুমার কোলে নামে বছর চল্লিশের এক ব্যক্তির। কসবার উত্তরপাড়ায় নিজেই তুবড়ি ফাটাচ্ছিলেন দীপ। হঠাৎ খোলের একটি অংশ এসে তাঁর গলায় লাগে। হাসপাতালে নিয়ে গেলে তাঁকে মৃত ঘোষণা করা হয়। দীপেরা তিন ভাই। দীপ বিয়ে করেননি। বৃদ্ধা মা রয়েছেন। পরিবারের আক্ষেপ, ‘‘বাজি ফাটানোর ক্ষণিকের আনন্দের চেয়ে জীবন যে আগে, তা বুঝেছি পরিবারের ছেলেটা চলে যাওয়ার পরে। আদালত কড়া হাতে বাজি বন্ধ করার কথা বললেও অনেকে ফাটাবেন। তাঁদের অনুরোধ, পরে আক্ষেপ করার বদলে আমাদের দেখে সতর্ক হোন।’’

এই আক্ষেপই তাড়া করে আদির ঠাকুরমা চম্পা দাস এবং অবিবাহিতা পিসি সুজাতাকে। বৃদ্ধা মাকে নিয়ে সুজাতা এখন বেহালার অন্য এক পাড়ায় ভাড়া থাকেন। তিনি বললেন, ‘‘কালীপুজো এলেই ভয় করে। এই ক’দিন একটা আলোও দেখি না। ঘরের দরজা-জানলা বন্ধ করে আমি আর মা বসে থাকি। তবু বাজির শব্দ আসে। আতঙ্কে দু’হাত কানে চেপে রাখি। কেন যে বাবুকে (আদি) সে বার শেষ মুহূর্তে বাজি কিনে দিয়েছিলাম!’’ গলা বুজে আসে মহিলার। কিছুটা সামলে জানান, আদির জন্য বাঁধাধরা এক মাছওয়ালা ছিলেন। কিছু বাজি তুলেছেন জানিয়ে তিনিই বাজি কিনতে অনুরোধ করেন। মাছওয়ালার থেকে কেনা সেই বাজিই ফাটাতে গিয়ে প্রাণ যায় ছোট্ট আদির। সুজাতা বলেন, ‘‘পুলিশ ওই মাছওয়ালার বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। এ বার অন্তত আদালতের রায় কড়া হাতে পালন করুক পুলিশ।’’

এ সব কথায় যেন মনই নেই আদির ঠাকুরমার। কাঁদতে কাঁদতে বলে চলেন, ‘‘আমার ছেলের ১৭ বছরের বিবাহিত জীবন। অনেকটা দেরি করেই নাতি এসেছিল। এত ভাল ছেলে যে, কোনও বায়না নেই। কালীপুজোর দিন ছেলে-বৌমা নাতিকে আমার কাছে রেখে পুজো দিতে গিয়েছিল। নাতি চায়নি, আমিই ওকে ওই তুবড়ি কিনে দিয়েছিলাম। তুবড়িতে আগুন দিয়ে দূরে দাঁড়িয়ে ছিল সে। হঠাৎ জোরে শব্দ। দেখলাম, গলা দিয়ে রক্ত ঝরছে, আমার নাতি আর কথা বলে না।’’ কোনও মতে বললেন, ‘‘ওই একটা বাজিতেই শেষ আমার গোটা পরিবার। ছেলেটা সারাক্ষণ ‘আদি আদি’ করত। কেমন যেন হয়ে গেল। ওর কাজটা চলে গেল। বৌমাও আর থাকতে চাইল না। এর পরে আমার ছেলে নিজেকে শেষ করে দিল।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Kali Puja 2021
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE