বর্ষা এসে গিয়েছে। পরিষ্কার জলও জমছে এখানে-ওখানে, বাড়ির ভিতরে ও বাইরে। অর্থাৎ, ডেঙ্গি-ম্যালেরিয়ার মরসুম হাজির। আর দক্ষিণ দমদম পুরসভার মধুগড়ে ছড়াচ্ছে জ্বর। ইতিমধ্যেই স্বল্প দিনের জ্বরে ভুগে মৃত্যু হয়েছে তিন জনের। ওই মৃত্যুর খবর তাদের কাছে আসেনি বলে দায় এড়াচ্ছেন পুর-কর্তৃপক্ষ। যদিও মৃতদের পরিবারের দাবি, আক্রান্তদের ডেঙ্গির উপসর্গ ছিল পুরো মাত্রায়।
গত বছরে ওই জ্বর ছড়িয়েছিল পুরসভার ৮টি ওয়ার্ডে। প্রায় ২০০ জন জ্বরে আক্রান্ত হয়েছিলেন। ২২ জনের মৃত্যু হয়েছিল। অনেকের ডেথ সার্টিফিকেটে মৃত্যুর কারণ ডেঙ্গি লেখা হলেও পুরসভা সব ক্ষেত্রে তা স্বীকার করেনি। ৩৫টি ওয়ার্ডের এই পুরসভায় এ বার মশা নিধন কর্মসূচি এখনও জোরদার না হওয়ায় আতঙ্ক ছড়াচ্ছে। সোমবারেও পুষ্প সাহা নামে মধুগড়ের এক বাসিন্দা জ্বরে মারা গিয়েছেন বলে স্থানীয় সূত্রের দাবি। তবে সেই মৃত্যুর কারণও যে ডেঙ্গি হতে পারে, সে কথা মানতে নারাজ পুরসভা।
মানুষের চোখে পুরসভার তৎপরতা সে ভাবে ধরা না পড়লেও পুরসভার দাবি, গত বছরের অভিজ্ঞতাকে মাথায় রেখে এ বছর শুরু থেকেই জোর কদমে কাজ চলছে। যেখানে জ্বর ফিরে এসেছে, সেই মধুগড় এলাকার ছবিটা তবে কেমন?
এলাকায় ঢুকলেই চোখে পড়ে, বহু বাড়ির বারান্দা, ছাদের টবে জমে আছে জল। বেশ কিছু নির্মীয়মাণ বাড়ির অসমান মেঝেতে জল জমে, সেখানে অস্থায়ী কুয়োর মুখ খোলা, ডাবের খোলা-পরিত্যক্ত টায়ারেও জমেছে জল। তাতেই কিলবিল করছে মশার লার্ভা। পুরো এলাকাই মশার আঁতুড়ঘর। সোমবার সকাল থেকে মধুগড়ে গিয়ে এমন বেশ কিছু ছবি প্রত্যক্ষ করলেন স্বাস্থ্য দফতরের প্রতিনিধি থেকে দক্ষিণ দমদম পুরসভার প্রতিনিধিরাও।
তা হলে কি সচেতনতার প্রচার কিছুই হয়নি? পুরসভার চেয়ারম্যান পারিষদ (স্বাস্থ্য) গোপা পাণ্ডের দাবি, বছরের শুরু থেকেই জোর দেওয়া হয়েছে সচেতনতার প্রচারে। মাইকিং, হোর্ডিং, ব্যানার থেকে বাসিন্দাদের নিয়ে পদযাত্রা— সবই হয়েছে। এলাকায় নিয়মিত ব্লিচিং ছড়ানো, মশার তেল স্প্রে, ফগিং করা হয়েছে।
তবে এলাকার চেহারা এমন কেন? পুরকর্মীদের একাংশের অভিযোগ, অনেক ক্ষেত্রে বাড়িতে ঢুকতে দেন না বাসিন্দারা। ফলে পুরকর্মীদের কিছু করার থাকছে না। পুরসভার অভিযোগ, আবাসিকদের একাংশের সহযোগিতার অভাবেই এই অবস্থা। চেয়ারম্যান পারিষদ (জনস্বাস্থ্য ও নিকাশি) দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বাসিন্দারা সচেতন না হলে সমস্যা মিটবে না।’’
অথচ মানুষ সচেতন না হলে কী করা যেতে পারে তা ইতিমধ্যেই করে দেখিয়েছে কলকাতা পুরসভা। তারা প্রথমে নোটিস পাঠাচ্ছে। তাতেও সাড়া না পাওয়া গেলে পুরকর্মীরা নোটিস নিয়ে গিয়ে বাড়িতে ঢুকে জীবাণু ধ্বংসের কাজ করেছেন। তবে দক্ষিণ দমদম পুরসভা কেন তা পারছে না?
দক্ষিণ দমদম পুরসভা বলছে, কয়েক লক্ষ মানুষের বসবাস এই পুর এলাকায়। প্রতিটি ওয়ার্ডে কয়েক হাজার বাড়ি। পুরসভার যা পরিকাঠামো তাতে বাড়ি চিহ্নিত করে নোটিস পৌঁছে মশা তাড়ানোর কাজ করতে বহু সময় লেগে যাবে। উত্তর ২৪ পরগনা জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, এই নিয়ে ৫ বার দক্ষিণ দমদম পুর এলাকায় স্বাস্থ্য দফতরের প্রতিনিধিরা পরিদর্শন করেছেন। দক্ষিণ দমদম পুরকর্মীদের কাজে এখনও সন্তুষ্ট নন তাঁরা। এমনকী, পুরকর্মীদের প্রশিক্ষণের অভাব রয়েছে বলেও মনে হচ্ছে তাঁদের।
সমস্যার এখানেই শেষ নয়। ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে শুরু করে বেসরকারি হাসপাতাল, জ্বরে আক্রান্ত হয়ে কেউ ভর্তি হলেও তথ্য পুরসভার কাছে পৌঁছয় না বলে অভিযোগ। ফলে রোগের প্রকোপ কতটা, তা বুঝতে দেরি হচ্ছে পুরসভার। ততক্ষণে ছড়িয়ে পড়ছে রোগ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy