ভিড়াক্কার: মেট্রোয় উঠতে হুড়োহুড়ি। মঙ্গলবার, এসপ্লানেডে। নিজস্ব চিত্র
ভিড় সামলানোর যাবতীয় প্রস্তুতি রাখার কথা বললেও বাস্তবে তা করতে গিয়ে হিমশিম খেলেন মেট্রো কর্তৃপক্ষ। সোমবার, বড়দিনের আগের সন্ধ্যাতেই তা টের পেয়েছিলেন যাত্রীরা। মঙ্গলবারও দেখা গেল, পরিস্থিতির কোনও উন্নতি হয়নি। এ দিন দুপুর থেকেই মেট্রোয় ভিড় উপচে পড়ে। যার জেরে পার্ক স্ট্রিট, ময়দান, এসপ্লানেড বা দমদম— সর্বত্রই একই রকম সমস্যা চোখে পড়েছে। ট্রেন চলেছে দেরিতে। পাশাপাশি, যাত্রীদের ভুগতে হয়েছে টোকেন পরীক্ষার গেট নিয়েও। দমদম এবং কবি সুভাষ স্টেশনের কয়েকটি গেট বেশ কিছু দিন আগে থেকেই বিকল বলে অভিযোগ। এ দিন ভিড়ের চাপে ময়দান, পার্ক স্ট্রিট এবং রবীন্দ্র সদনেও গেটের সমস্যা দেখা দেয়। মেট্রো কর্তৃপক্ষ ভিড়ের কথা স্বীকার করলেও গেট নিয়ে সমস্যার কথা এড়িয়ে গিয়েছেন।
মেট্রোর গেট নিয়ে সমস্যা অবশ্য চলছিলই। নন-এসি রেকের দরজা বন্ধ হওয়া নিয়ে সমস্যা আগেই ছিল। তারই দোসর হয়ে দাঁড়িয়েছে গেট-বিভ্রাট। প্রবেশপথে থাকা অটোম্যাটিক ফেয়ার কালেকশন (এএফসি) সিস্টেমের টার্মিনাল বা গেট যাত্রীদের ভোগান্তির অন্যতম কারণ হয়ে দেখা দিয়েছে বলে অভিযোগ।
প্রায়ই ঢোকা–বেরোনোর পথে স্মার্ট কার্ড বা টোকেন ছোঁয়ালে ওই ‘ফ্ল্যাপ গেট’ ঠিকমতো খুলছে না বলে যাত্রীদের অভিযোগ। রেডি়য়ো ফ্রিকোয়েন্সি আইডেন্টিফিকেশন (আর এফ আই ডি) প্রযুক্তিতে চলা ওই প্রবেশপথগুলির নির্দিষ্ট টার্মিনালে কার্ড বা টোকেন ছোঁয়ালে দেরিতে গেট খোলা ছাড়াও অহরহ কার্ড বা টোকেন প্রত্যাখানের ঘটনাও ঘটছে বলে যাত্রীদের অভিযোগ। আরও অভিযোগ, বেশ কিছু স্টেশনে একাধিক টার্মিনাল সম্পূর্ণ বিকল থাকছে। কোনও টার্মিনাল স্মার্ট কার্ডে সাড়া দিলেও টোকেনে সাড়া দিচ্ছে না, আবার কোনও টার্মিনাল শুধুমাত্র টোকেনেই সচল। অতিরিক্ত ব্যস্ত স্টেশনগুলিতে গন্তব্য শেষে বেরোনোর গেট অচল থাকায় প্রায়ই ভিড় জমে যাচ্ছে প্ল্যাটফর্মের প্রবেশপথে। যার জেরে চরম ভোগান্তি হচ্ছে বলে অভিযোগ।
যাত্রীদের অভিযোগ, নির্দিষ্ট টার্মিনালে স্মার্ট কার্ড বা টোকেন ছোঁয়ালে প্রায়ই এএফসি গেট খামখেয়ালি আচরণ করছে। কখনও গেট স্বাভাবিক ভাবে খুলছে, কখনও দেরিতে বা আচমকা খুলছে। কখনও আবার যন্ত্র একেবারেই সাড়া দিচ্ছে না। আর এফ আই ডি টোকেন নিয়ে যাতায়াত করা যাত্রীদের ভোগান্তির মাত্রা অনেক সময়ে কিঞ্চিত বেশি। জমা দেওয়া টোকেনের সঙ্কেত বুঝতে না পেরে যন্ত্র তা বারবার ফিরিয়ে দিচ্ছে বলে অভিযোগ। বহু টার্মিনালের আবার ডিসপ্লে খারাপ থাকায় স্মার্ট কার্ড থেকে ভাড়া হিসেবে কত টাকা কাটা হল, তা-ও জানা যাচ্ছে না। যার ফলেও হয়রানি বাড়চ্ছে যাত্রীদের।
মেট্রো সূত্রের খবর, স্টেশন থেকে বেরোনোর সময়ে টার্মিনাল বিকল থাকলে একাধিক মেট্রোকর্মীকে পরিস্থিতি সামলাতে ছুটে আসতে হচ্ছে। ভিড় হাল্কা করতে কাগজের বাক্সে যাত্রীদের থেকে টোকেন সংগ্রহ করছেন তাঁরা। যন্ত্র ঠিকমতো কাজ না করার ফলে যাত্রীরা কেউ ভাড়া ফাঁকি দিতে কম মূল্যের টোকেন কিনলেও তা ধরা সম্ভব হচ্ছে না। এমনকি, কেউ টোকেন নিয়ে বেরিয়ে গেলেও ধরা পড়ছেন না। মেট্রো সূত্রের খবর, পুজোর সময়ে প্রায় ৩০ হাজার টোকেন খোয়া গিয়েছে। প্রতিদিন প্রতিটি মেট্রোযাত্রায় গড়ে তিনটি করে টোকেন খোয়া যায় বলে দাবি মেট্রোকর্তাদের। ফলে দিনে ৯০০টি টোকেন বা প্রায় ১৮ হাজার টাকা মূল্যের টোকেন খোয়া যাচ্ছে বলে মেট্রো সূত্রের দাবি। টোকেন জমা দিতে যাত্রীদের উৎসাহিত করতে অডিয়ো-বার্তা চালু করেছেন মেট্রো কর্তৃপক্ষ।
কিন্তু এত সবের পরেও আর এফ আই ডি টার্মিনালের সমস্যা মেটানো হচ্ছে না কেন?
মেট্রো সূত্রের খবর, ২৪টি মেট্রো স্টেশনে কমবেশি ২৮০টি এএফসি গেট বা টার্মিনাল রয়েছে। অতীতে চুক্তির ভিত্তিতে ওই টার্মিনাল রক্ষণাবেক্ষণ করতেন ৫২ জন কর্মী। তাঁদের সঙ্গে চুক্তির মেয়াদ ফুরিয়ে যাওয়ার পরে ওই কাজের ভার দেওয়া হয় হাতে গোনা কয়েক জনকে। টার্মিনালের সংখ্যার তুলনায় কর্মী কম হওয়ায় প্রায়ই রক্ষণাবেক্ষণের কাজ ব্যাহত হচ্ছে বলে মেট্রোকর্মীদের অভিযোগ। বহু টার্মিনালেই যন্ত্রের ভিতরে জমা ধুলোটুকুও সময়মতো পরিষ্কার করা সম্ভব হয় না বলে অভিযোগ মেট্রোকর্মীদের একাংশের।
টোকেন খোয়া যাওয়ার সমস্যার কথা স্বীকার করেন মেট্রো রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক ইন্দ্রাণী বন্দ্যোপাধ্যায়ও। তবে টার্মিনাল বিকল থাকা বা রক্ষণাবেক্ষণে ত্রুটির কথা তিনি মানতে নারাজ। তাঁর বক্তব্য, ‘‘কোথাও কোনও সমস্যা হলেই দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মীরা ছুটে গিয়ে দ্রুত মেরামতির কাজ করেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy