Advertisement
০৫ মে ২০২৪
Eye Replacement

মরণোত্তর চক্ষুদান বালকের, দৃষ্টি ফিরল দুই খুদে গ্রহীতার

ওড়িশার রৌরকেলার হার্দিক রায়ের (১০) মরণোত্তর চক্ষুদানে আবার চোখে আলো ফুটল দুর্ঘটনায় দৃষ্টি হারানো দুই কিশোর-কিশোরীর।

hardik roy.

হার্দিক রায়। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ অগস্ট ২০২৩ ০৬:১৬
Share: Save:

বাবা দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছেন আগেই। তাই দৃষ্টিহীনদের প্রতি বরাবরই সহানুভূতিশীল ছিল তাঁর দশ বছরের ছেলে। আচমকা স্ক্রাব টাইফাসে সেই বালকের মৃত্যুর পরে, সন্তানশোক বুকে চেপে তার চোখ দু’টি দান করলেন বাবা-মা। ওড়িশার রৌরকেলার হার্দিক রায়ের (১০) মরণোত্তর চক্ষুদানে আবার চোখে আলো ফুটল দুর্ঘটনায় দৃষ্টি হারানো দুই কিশোর-কিশোরীর।

একমাত্র সন্তানকে হারিয়েও হার্দিকের মা-বাবার এমন সিদ্ধান্তকে কুর্নিশ জানাচ্ছেন চিকিৎসকেরা। আর তার বাবা-মা বলছেন, ‘‘আমাদের হার্দিক বেঁচে থাকুক অন্যদের মধ্যে। তারা এখন সুস্থ থাকুক, এটাই চাই।’’ রিজিয়োনাল ইনস্টিটিউট অব অপথ্যালমোলজিতে (আরআইও) কর্নিয়া প্রতিস্থাপনের পরে আপাতত সুস্থ আছে ওই দুই গ্রহীতা। কয়েক দিনের মধ্যে তাদের ছুটিও দিয়ে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা।

দিনকয়েক আগে লেক টাউনে মামার বাড়িতে বেড়াতে এসেছিল হার্দিক। আচমকাই অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে বাইপাসের ধারে একটি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। পরীক্ষায় জানা যায়, হার্দিক স্ক্রাব টাইফাসে আক্রান্ত। গত রবিবার তার মৃত্যু হয়। হার্দিকের মা দীপাশ্রী রায় বলেন, ‘‘মরণোত্তর অঙ্গদান করতে চাইলেও তা সম্ভব ছিল না। তাই শেষে একমাত্র ছেলের চোখ দু’টি দান করার সিদ্ধান্ত নিই।’’ হার্দিকের বাবা হরপ্রসাদ রৌরকেলার একটি কলেজে শিক্ষকতা করেন। রেটিনার দুরারোগ্য অসুখে আক্রান্ত হয়ে তিনি দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘‘চোখে না দেখার যন্ত্রণা আমি বুঝি। ছেলেও এ বিষয়ে সহানুভূতিশীল ছিল। তাই ওর চোখ দু’টি দান করার সিদ্ধান্ত নিই।’’ গত মঙ্গলবার আরআইও-তে হয়েছে সেই প্রতিস্থাপন।

প্রতিস্থাপন করা চক্ষু চিকিৎসক আশিস মজুমদার জানাচ্ছেন, মালদহের বৈষ্ণবনগরের সপ্তম শ্রেণির এক কিশোরী এবং বীরভূমের পাড়ুইয়ের চতুর্থ শ্রেণির এক বালক— দুজনেই প্রায় বছর দেড়েক ধরে দৃষ্টিহীন। হাসপাতাল সূত্রের খবর, আম গাছে উঠতে গিয়ে ভুল করে মৌমাছির চাকে হাত দিয়ে ফেলেছিল ওই কিশোরী। তখনই ডান চোখে মৌমাছি হুল ফুটিয়ে দেয়। সঙ্গে সঙ্গে গাছ থেকে পড়ে যায় ওই কিশোরী। ধীরে ধীরে দৃষ্টিশক্তিও হারিয়ে ফেলে সে। বীরভূমের ওই বালক আবার খেলা করছিল একটি ব্যাটারি নিয়ে। কোনও ভাবে তাতে বিদ্যুৎ সংযোগ হয়ে বিকট শব্দে ফেটে যায় ব্যাটারিটি। তার টুকরো গেঁথে যায় বালকের বাঁ চোখে। সেটি বার করা হলেও ওই চোখের দৃষ্টিশক্তি চলে যায়। আশিস বলেন, ‘‘হার্দিকের কর্নিয়া ওই দু’জনের চোখে প্রতিস্থাপনের পরে ওরা ভাল আছে। দু’জনেই আবার দেখতে পাচ্ছে।’’ আরআইও-র অধিকর্তা অসীম ঘোষ বলেন, ‘‘একমাত্র সন্তানকে হারানোর পরে তার চোখ দান করার মতো মানসিক অবস্থা সকলের থাকে না। ওই দম্পতি যে ভাবে সন্তানের ইচ্ছাকে মর্যাদা দিতে অবিচল থেকেছেন, তা খুবই বিরল।’’

আর হার্দিকের চোখ দিয়ে আরও দুই কিশোর-কিশোরী দৃষ্টিশক্তি ফিরে পেয়েছে শুনে কান্নায় ভেঙে পড়েছেন হরপ্রসাদ ও দীপাশ্রী। বলছেন, ‘‘ওদের চোখের আলোতেই আমাদের ছেলেটা বেঁচে থাকুক।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Eye Vision Kolkata
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE