বছর দেড়েক ধরে এক নাবালিকার উপরে যৌন নির্যাতন চালানোর অভিযোগে তার দুই আত্মীয়কে গ্রেফতার করল পুলিশ। ঘটনাটি মহেশতলার। মঙ্গলবারধৃতদের আলিপুর আদালতে হাজির করা হয়।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, স্কুলে এসে মাঝেমধ্যেই মুখ ভার করে বসে থাকত মেয়েটি। কখনও তার চোখে জল দেখতে পেত সহপাঠীরা। কিন্তু জিজ্ঞাসা করলে কিছুই বলত না মহেশতলা থানা এলাকার একটি সরকারি স্কুলের সপ্তম শ্রেণির ওই ছাত্রী। সম্প্রতি মহেশতলা থানার উদ্যোগে স্কুলে নাবালিকাদের বিয়ে, মহিলাদের উপরে যৌন নির্যাতন সংক্রান্ত একটি কর্মশালা হতে দেখে কিছুটা সাহস সঞ্চয় করে বছর তেরোর ছাত্রীটি। নিজেই শিক্ষক-শিক্ষিকাদের কাছে এসে সে জানায়, প্রায় দেড় বছর ধরে তার উপরে যৌন নির্যাতন হয়ে চলেছে। শুনে চমকে ওঠেন শিক্ষক-শিক্ষিকারা।
মহেশতলা থানায় খবর দিলে সোমবার পুলিশ দুই অভিযুক্তকে গ্রেফতার করে। আরও দুই অভিযুক্তের খোঁজ চলছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। সোমবারই মেয়েটিকে জেলা চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটির কাছে হাজির করানো হয়। কমিটির নির্দেশে তাকে হোমে রাখা হয়েছে। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে পকসো আইনে মামলা রুজু করেছে পুলিশ। নির্যাতিতার শারীরিক পরীক্ষা করা হয়েছে।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, জন্মের পর থেকেই মেয়েটি অবহেলার শিকার। তার মা থাকেন হায়দরাবাদে। বাবা থাকেন পূর্ব মেদিনীপুরে। পুলিশের দাবি, দু’জনেই একাধিক বিয়ে করেছেন। কেউই মেয়ের তেমন খোঁজ রাখেন না। ওই ছাত্রী তার মামার বাড়িতে থাকত। অভিযোগ, একলা পেয়ে সেই সুযোগে মাঝেমধ্যেই তার উপরে যৌন নির্যাতন চালাত কয়েক জন আত্মীয়। দুষ্কর্মের কথা কাউকে না জানানোর পরামর্শ দিত তারা। ভয়ে মেয়েটি কাউকে বলতে পারত না। মামার বাড়িতেও কেউ কিছু জানতেন না।
এক পুলিশ আধিকারিক বলেন, ‘‘সম্প্রতি আমরা ওই স্কুলে নানা বিষয়ে সচেতনতা তৈরির জন্য একটি কর্মশালা করি। সেখানে উপস্থিত ছিল মেয়েটি। আলোচনা শুনে সাহস পেয়ে সে নির্যাতনের কথা শিক্ষকদের জানায়। স্কুল থেকে থানায় খবর দেওয়া হয়। সোমবার দুপুরেই অভিযুক্ত দু’জনকে আটক করা হয়। এর পরে মেয়েটির বয়ান যাচাই করে বোঝা যায়, তার অভিযোগে সারবত্তা রয়েছে। তখন ওই দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়।’’
উল্লেখ্য, পুলিশ ও বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা আলোচনাসভা করে খারাপ স্পর্শ এবং ভাল স্পর্শের মধ্যে ফারাক করা শেখাচ্ছে নাবালিকাদের। পাশাপাশি, নাবালিকা বিবাহের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কেও তাদের জানানো হচ্ছে। পুলিশের দাবি, ধারাবাহিক এই প্রচেষ্টার ফল মিলতে শুরু করেছে। জেলা চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটির চেয়ারপার্সন মহুয়া শূররায় বলেন, ‘‘ছাত্রীরা যৌন নির্যাতন সম্পর্কে যে সচেতন হচ্ছে, এই ঘটনা তারই প্রমাণ।’’
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)