Advertisement
০২ মে ২০২৪
Road Accident

Road Accident: পথে রক্তাক্ত দুই তরুণ, ছবি তোলায় ব্যস্ত জমায়েত

দু’জনেই সার্ভে পার্কের ইস্ট রাজাপুর এলাকায় থাকতেন। তদন্তে জানা গিয়েছে, ওই দুই বন্ধু একটি স্কুটিতে চেপে যাচ্ছিলেন।

অঘটন: দুর্ঘটনাস্থলে পড়ে থাকা রক্তাক্ত যুবককে ঘিরে ভিড় জমিয়েছেন স্থানীয়েরা।

অঘটন: দুর্ঘটনাস্থলে পড়ে থাকা রক্তাক্ত যুবককে ঘিরে ভিড় জমিয়েছেন স্থানীয়েরা। তত ক্ষণে পৌঁছে গিয়েছে পুলিশও। বৃহস্পতিবার, সার্ভে পার্কে। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ জুন ২০২২ ০৫:৫৯
Share: Save:

রাস্তায় রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে দুই তরুণ। তাঁদের ঘিরে জমে ওঠা ভিড় থেকে কেউ কেউ মোবাইলে ছবি তুলছেন। অথচ, গুরুতর জখম দুই তরুণকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার কথা ভাবছেন না। যদি কোনও ঝামেলায় জড়িয়ে পড়তে হয়, সেই আতঙ্কে। পরে পুলিশ তাঁদের উদ্ধার করে বাঘা যতীন হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা মৃত ঘোষণা করেন।

বৃহস্পতিবার ভোরে সার্ভে পার্ক থানা এলাকার ক্যানাল নর্থ রোডের এই ঘটনায় মৃত দু’জনের নাম চন্দন রজক (২০) এবং দীপঙ্কর সর্দার (২২)। দু’জনেই সার্ভে পার্কের ইস্ট রাজাপুর এলাকায় থাকতেন। তদন্তে জানা গিয়েছে, ওই দুই বন্ধু একটি স্কুটিতে চেপে যাচ্ছিলেন। স্কুটিটি চন্দন চালাচ্ছিলেন। ভোর ৫টা ২০ মিনিট নাগাদ সেটি একটি বাতিস্তম্ভে ধাক্কা মারে। দু’জনের কারও মাথায় হেলমেট ছিল না বলে জানিয়েছে পুলিশ।

ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, রাস্তায় রক্তের দাগ তখনও স্পষ্ট। স্থানীয়েরাই জানান, দুই বন্ধু স্কুটি নিয়ে যাদবপুরের দিক থেকে সার্ভে পার্কের দিকে যাচ্ছিলেন। দুরন্ত গতিতে এসে স্কুটিটি স্পিড-ব্রেকারে ধাক্কা মেরেই রাস্তার মাঝের বাতিস্তম্ভে ফের ধাক্কা খায়। ছিটকে পড়েন দুই আরোহী। প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, গতি এতই বেশি ছিল যে, স্কুটি বাতিস্তম্ভের অনেকটা উপরে উঠে ধাক্কা মারে। স্থানীয় বাসিন্দা রূপা বাগচী বলেন, ‘‘ধাক্কার চোটে আশপাশ কেঁপে ওঠে।’’

রাস্তার মাঝখানে বাতিস্তম্ভ থাকায় ক্ষোভ রয়েছে এলাকাবাসীর। স্থানীয় বাসিন্দা শৈবাল সাহা রায় জানান, আগে রাস্তার ধারেই বাতিস্তম্ভ ছিল। ১০ বছর আগে রাস্তা চওড়া হওয়ার পরে মাঝখানে চলে আসে। বাতিস্তম্ভের কারণে আগেও দুর্ঘটনা ঘটেছে। সেটি সরানোর জন্য নানা জায়গায় দরবারও করেছেন তাঁরা।

মৃতদের পরিবার সূত্রের খবর, দীপঙ্কর বাইক সারাই করতেন। চন্দন ইস্ট রাজাপুরে থাকলেও আদতে বিহারের গোপালগঞ্জের বাসিন্দা। চন্দনের জেঠতুতো ভাই রাজুকুমার রজক জানান, বাবা কমলেশ রজক, মা সবিতা রজক এবং দুই বোনের সঙ্গে থাকতেন চন্দন। একটি টায়ারের সংস্থায় কাজ করতেন। একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে তাঁর বাবা-মা এবং দুই বোন বিহারে গিয়েছেন। খবর পেয়ে তাঁরা কলকাতায় ফিরছেন।

দীপঙ্করের জেঠতুতো ভাই প্রহ্লাদ সর্দার বলেন, ‘‘বন্ধুর বাড়ি যাচ্ছি বলে কাল রাতে স্কুটি নিয়ে বেরিয়েছিল দু’জন। জানিয়েছিল, রাতে ওখানেই থাকবে।’’ ছেলের মৃত্যুর খবর শোনার পর থেকে কথা বলার অবস্থায় নেই দীপঙ্করের বাবা নিধিরাম এবং তাঁর স্ত্রী রিনা সর্দার। কাঁটাপুকুর মর্গে ময়না-তদন্তের পরে সন্ধ্যায় গড়িয়া শ্মশানে সৎকার হয় দীপঙ্করের। তবে এ দিন চন্দনের দেহের ময়না-তদন্ত হয়নি।

অভিযোগ উঠেছে, দুর্ঘটনার পরে স্থানীয় মানুষ ভিড় করলেও কেউই দীপঙ্কর এবং চন্দনের সাহায্যে এগিয়ে যাননি। চন্দনের বন্ধু অনিরুদ্ধ দাস বলেন, ‘‘খবর পেয়ে গিয়ে দেখি, চন্দন ও দীপঙ্কর রাস্তায় পড়ে রয়েছে। দেখেই মনে হয়েছিল, কেউ বেঁচে নেই।’’ স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশেরও দাবি, দু’জনকেই মৃত বলে মনে হচ্ছিল। তাই ঝুঁকি না নিয়ে পুলিশে খবর দেওয়াই ঠিক মনে করেছিলেন তাঁরা।

তবে দুর্ঘটনাগ্রস্ত মানুষকে দেখেও মুখ ঘুরিয়ে থাকার মানসিকতাকে মনোবিদ গৌতম সাহা আত্মকেন্দ্রিক মনোভাব বলেই ব্যাখ্যা করছেন। তিনি বলেন, ‘‘মানুষ এখন নিজেকে নিয়েই ভাবে। বিপদে জড়াতে চায় না। তখনই সাহায্য করে, যখন দেখে, তাতে নিজের বিপদ নেই।’’সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তেফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE