Advertisement
E-Paper

চলছে টিভি, পাশের ঘরে পড়ে স্বামীর দগ্ধ দেহ, অচেতন স্ত্রী

টেলিভিশন চলছে বসার ঘরে। সেখানে অচেতন পড়ে গৃহকর্ত্রী। লাগোয়া শোয়ার ঘর ভিতর থেকে বন্ধ। বাইরে থেকে যে ঘরের আগুন একটু আগেই নিভিয়ে ফেলেছেন দমকলকর্মীরা। দরজা ভেঙে ওই ঘরে ঢুকে পুলিশ ও দমকলকর্মীরা দেখলেন, গৃহকর্তা রঞ্জিত বরাটের (৬৩) দগ্ধ দেহ।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১২ জুন ২০১৬ ০২:০১

টেলিভিশন চলছে বসার ঘরে। সেখানে অচেতন পড়ে গৃহকর্ত্রী। লাগোয়া শোয়ার ঘর ভিতর থেকে বন্ধ। বাইরে থেকে যে ঘরের আগুন একটু আগেই নিভিয়ে ফেলেছেন দমকলকর্মীরা। দরজা ভেঙে ওই ঘরে ঢুকে পুলিশ ও দমকলকর্মীরা দেখলেন, গৃহকর্তা রঞ্জিত বরাটের (৬৩) দগ্ধ দেহ। শুক্রবার রাতে মানিকতলা হাউসিং এস্টেটের জি ব্লকের ঘটনা। তিন তলায় থাকতেন বরাট দম্পতি।

প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান, গায়ে আগুন দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন সিইএসসি-র অবসরপ্রাপ্ত ডেপুটি কমার্শিয়াল ম্যানেজার ওই ব্যক্তি। বসার ঘরে টেলিভিশন দেখতে দেখতে ঘুমিয়ে পড়েছিলেন তাঁর স্ত্রী সুতপা। ধোঁয়ার কার্বন মনোক্সাইড শরীরে ঢুকে তাঁর সংজ্ঞা চলে যায়।

ঠিক কী হয়েছিল ওই রাতে?

পুলিশের একটি সূত্রের খবর, চাকরি সূত্রে গুড়গাঁওয়ে থাকা ওই দম্পতির মেয়ে সুরঞ্জনা শুক্রবার রাতে ফোন করেছিলেন। ফোন ধরেন তাঁর মা। মায়ের সঙ্গে কথা বলার পর সুরঞ্জনা তাঁর বাবার সঙ্গে কথা বলতে চান। কিন্তু তদন্তে পুলিশ জেনেছে, সুতপা দেবী তখন মেয়েকে জানান, তাঁর বাবা এতটাই মদ্যপান করেছেন যে কথা বলার মতো অবস্থায় নেই। এ কথা বলে তিনি ফোন রেখে দেন।

এই নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ফের অশান্তি শুরু হয় বলে পুলিশ জেনেছে। তদন্তকারীদের বক্তব্য, কেন তাঁর স্ত্রী মেয়েকে ও কথা বললেন, সেই অভিমানে শোয়ার ঘরে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দেন। তার পর কী হয়েছিল, তাঁর জানা নেই বলে দাবি সুতপা দেবীর। তাঁর বক্তব্য, টিভি দেখতে দেখতে ঘুমিয়ে পড়েছিলেন।

রাত সাড়ে ১২টা ঘুমোতে যাওয়ার সময়ে নাগাদ পাশের বাড়ির তিন তলা থেকে ধোঁয়া বেরোতে দেখে চমকে যান ওই হাউসিং এস্টেটেরই বাসিন্দা সুদীপ রায়চৌধুরী। নিজের ফ্ল্যাটের জানালা দিয়েই চিৎকার করতে থাকেন, ‘বরাটদা, আপনার ঘরে আগুন লেগেছে! বেরিয়ে আসুন।’ কোনও জবাব আসে না। সুদীপবাবুর চিৎকার শুনে নিজের ফ্ল্যাট থেকে ছুটে বেরিয়ে আসেন জি ব্লকের আর এক বাসিন্দা নির্মাল্য দাশগুপ্ত। তিনিও চিৎকার করে বলেন, ‘‘ধোঁয়া বেরোচ্ছে, তাড়াতা়ড়ি বেরিয়ে আসুন।’’ এই হাঁকডাকের জেরে জি ব্লকের সব বাসিন্দা বেরিয়ে এলেও সাড়া পাওয়া যায়নি বরাট দম্পতির।

আরও পড়ুন: উৎকণ্ঠায় কলকাতা, কাবুলে অপহরণ এই শহরের মেয়ে জুডিথ ডিসুজাকে

প্রথমে ১০০, তার পর ১০১ নম্বর এবং শেষমেশ মানিকতলা থানার ল্যান্ডলাইন নম্বরে ফোন করেও কোনও সাড়া পাননি নির্মাল্যবাবু ও সুদীপবাবু। স্থানীয় বাসিন্দারা তার পর ছুটে যান মানিকতলার দমকলকেন্দ্রে। রাত ১টার একটু আগে দমকলবাহিনী পৌঁছে প্রথমে মই দিয়ে উঠে তিনতলার ওই ফ্ল্যাটের আগুন নেভায়। তখনও ডাকাডাকি করে রঞ্জিতবাবু, সুতপা দেবী কারও সাড়া মেলেনি। ততক্ষণে দমকলের খবর পেয়ে মানিকতলা থানার পুলিশও পৌঁছে গিয়েছে। পুলিশ দরজা ভাঙে। তার পরেও রঞ্জিত বরাটের ঘরে ঢুকে দমকলকর্মীদের আগুন নেভাতে হয়।

সংজ্ঞাহীন সুতপা দেবীকে উদ্ধার করে তাঁকে কিছুটা সুস্থ করে তোলা হয়। প্রথমে মানিকতলা ইএসআই হাসপাতাল ও তার পর আরজিকর হাসপাতালে শুশ্রূষা হয় তাঁর। ওই রাতেই পুলিশ তাঁকে থানায় নিয়ে যায়। এক পুলিশকর্তা জানান, বসবাসের বিকল্প জায়গা না থাকায় সুতপাদেবীকে থানায় বসিয়ে রাখা হয়েছে। তবে তাঁকে আটক বা গ্রেফতার করা হয়নি।

প্রতিবেশীরা জানাচ্ছেন, স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে নিত্য অশান্তি লেগেই থাকত। রঞ্জিতবাবু ও সুতপা দেবী বাইরের কারও সঙ্গে তেমন একটা মিশতেন না। নিজেদের মতোই থাকতে পছন্দ করতেন। একান্ত প্রয়োজন ছাড়া বেশি কথা বলতেন না প্রতিবেশীদের সঙ্গে। প্রতি রাতে দু’জনেই মদ্যপ অবস্থায় চিৎকার করতেন বলেও জানাচ্ছেন তাঁদের প্রতিবেশীরা। এমনকী, মদ্যপ অবস্থায় ওই দম্পতি লালবাজার কন্ট্রোল রুমে ফোন করে একে অপরের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানাতেন বলেও পুলিশের একটি সূত্রের খবর।

রঞ্জিতবাবুর আবাসনের সামনে তাঁদের গাড়ি নিয়ে প্রথমে রহস্য দানা বাঁধে। লাল রঙের ওই গাড়িতে ‘পুলিশ’ স্টিকার সাঁটা ছিল। আবার গাড়ির ভিতর একটি বেতারযন্ত্র বা ম্যানপ্যাক এবং পুলিশের দু’টি হেলমেট পাওয়া যায়।

প্রাথমিক তদন্ত করে পুলিশের বক্তব্য, সিইএসসি-র কর্তা হিসেবে রঞ্জিতবাবু বেআইনি হুকিং কাটার সময়ে পুলিশকে নিয়ে যেতেন। সেই জন্য নিজের গাড়িতে ওই স্টিকার লাগিয়েছিলেন, এমনটা হতে পারে। আবার তাঁর দাদা কলকাতা পুলিশের অবসরপ্রাপ্ত কর্তা। হতে পারে, তিনি ওই গাড়ি ব্যবহার করতেন। আর বেতারযন্ত্রটি সিইএসসি-রই। অবসর নেওয়ার পরেও তিনি সেটি ফেরত দেননি। কিন্তু পুলিশের দু’টি হেলমেট রঞ্জিত বরাটের গাড়িতে কেন, তার উত্তর খুঁজছেন তদন্তকারীরা।

kolkata incident fire husband wife
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy