Advertisement
০৫ মে ২০২৪

এ বার কী হবে? বন্ধ এটিএমের সামনে উদ্বিগ্ন প্রশ্ন

চার দিন পরেও এটিএমে পর্যাপ্ত টাকার জোগান না পেয়ে ধৈর্যের বাঁধ ভাঙতে শুরু করল সাধারণ মানুষের। তা থেকে কোথাও শুরু হল বচসা, কোথাও আবার কথা কাটাকাটি গড়াল হাতাহাতিতে।

লিঙ্ক নেই এটিএমের। শনিবার, কালিকাপুরে। — দেশকল্যাণ চৌধুরী

লিঙ্ক নেই এটিএমের। শনিবার, কালিকাপুরে। — দেশকল্যাণ চৌধুরী

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১৩ নভেম্বর ২০১৬ ০০:৩৩
Share: Save:

চার দিন পরেও এটিএমে পর্যাপ্ত টাকার জোগান না পেয়ে ধৈর্যের বাঁধ ভাঙতে শুরু করল সাধারণ মানুষের। তা থেকে কোথাও শুরু হল বচসা, কোথাও আবার কথা কাটাকাটি গড়াল হাতাহাতিতে।

শনিবার ডালহৌসিতে একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের এটিএমে টাকা ফেলতে এসে শাটার নামানোর সময়ে বিক্ষোভের মুখে পড়েন ব্যাঙ্ককর্মীরা। বচসায় শুরু হয়ে হাতাহাতি পর্যন্ত গড়ায় সেই ক্ষোভ। লাইনে দাঁড়িয়ে ক্ষুব্ধ এক ব্যক্তি বলেন, ‘‘অসুবিধা তো মেনে নিয়েছিলাম। ধৈর্য ধরেছিলাম। কিন্তু তার দাম তো দিল না প্রশাসন। ন্যূনতম প্রস্তুতি না-নিয়ে এই পদক্ষেপ করা আমাদের বিপদে ফেলা ছাড়া কিছু নয়।’’ ব্যাঙ্ককর্মীরা অসুবিধার কথা বোঝাতে চাইলে আরও খেপে যায় জনতা। পুলিশ এসে পরিস্থিতি সামাল দেয়। চৌরঙ্গি এলাকায় আর একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের এটিএমে টাকা তোলার আশায় সকাল থেকে ভিড় জমিয়েছিলেন কয়েকশো মানুষ। দীর্ঘ অপেক্ষার সময়ে ধৈর্য হারায় জনতা। শুরু হয় ধাক্কাধাক্কি। সেই ভিড়ের চাপে ভেঙে যায় কাউন্টারের কাচের দরজা।

ধৈর্যের পরীক্ষায় শুক্রবার পর্যন্ত ফার্স্ট ডিভিশনে পাশ করে গিয়েছিলেন সাধারণ মানুষ। পরিষেবার দিক থেকে অবশ্য আশানুরূপ ফল করতে পারেনি ব্যাঙ্ক-এটিএম। শনিবার ছবিটা আরও ভয়াবহ হয়েছে। এক দিকে পরিষেবা দিতে গিয়ে ডাহা ফেল করল ব্যাঙ্কগুলি, অন্য দিকে গত কাল পর্যন্তও যাঁরা টাকা না পেয়ে বলেছিলেন চালিয়ে নেবেন কয়েক দিন, তাঁরাও এ বার বলছেন, আর এক দিনও নয়!

শুক্রবার সকাল থেকে রাত পর্যন্ত এটিএমে টাকা তোলার জন্যে হন্যে হয়ে ঘুরেছেন দমদমের মানুষ। রাত ১২টাতেও বহু মানুষকে দেখা গিয়েছে এলাকায় টাকার জন্য ঘুরতে। কোনও এটিএমে টাকা আছে শুনলেই ছুটেছে ভিড়। একই অবস্থা শনিবার সকাল থেকেও। অধিকাংশ এটিএমে টাকা নেই। দু’-একটি এটিএমে সকালের দিকে টাকা ভরা হলেও নিমেষে শেষ হয়ে গিয়েছে। অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, বাজারে জিনিসের যা দাম, তাতে হাতে হাজার পাঁচেক টাকা না থাকলে স্বস্তি পাওয়া যায় না। দু’হাজারে কত দিন চলবে! এ দিন সন্ধ্যা পর্যন্ত যাঁরা টাকা তুলতে পারেননি, দুশ্চিন্তায় তাঁরা। যেমন দমদমের কিংশুক ঘোষ মঙ্গলবার সন্ধ্যার সময়েই এটিএম থেকে ২০ হাজার টাকা তুলেছিলেন। সবই ব়ড় নোটে। কিন্তু কে জানবে, ওই দিনই আর ঘণ্টাখানেক পরে ৫০০, ১০০০-এর নোটগুলি সব বাতিল হবে! গত দু’দিন বাড়িতে যা খুচরো টাকা ছিল, তাতে চলেছে। তিনি বলেন, ‘‘আজ কোথাও টাকা না পেলে বন্ধুদের কাছে হাত পাততে হবে। তা ছাড়া আর কোনও উপায় নেই।’’

মঙ্গলবার রাতে আচমকা নোট বাতিলের খবর শুনে পরের দু’দিন ধরে সকাল সকাল ব্যাঙ্কে গিয়ে বাড়িতে থাকা ‘অচল’ নোটগুলো জমা করে এসেছিলেন বেহালার গৌতম রায়। কিন্তু দীর্ঘ লাইনে টাকা বদলানো সম্ভব হয়নি। পাড়ার চারটে এটিএম কাউন্টারের মধ্যে তিনটেয় টাকা নেই। যে বেসরকারি ব্যাঙ্কের এটিএমে টাকা আছে, তার লাইনে দাঁড়ানো মানে রাত কাবার। ফলে শনিবার সকালে কার্যত তাঁর হাতে রইল শূন্য।

‘‘নিশ্চিত ছিলাম, দু’-তিন দিনের মধ্যে টাকার ব্যবস্থা হবে। আজ চার দিন হয়ে গেল, টাকা নেই। এত দিন ভাবছিলাম ছেলের স্কুলের মাইনে আটকে আছে, আজ তো মনে হচ্ছে হাঁড়ি চড়বে কী করে!’’ উৎকণ্ঠার ছায়া স্পষ্ট গৌতমের গলায়।

কান পাতলে একই কথা শোনা যাচ্ছে টালিগঞ্জ থেকে সল্টলেক, অধিকাংশ এটিএমের লাইনে। শুক্রবার থেকে বেশ কিছু এটিএম খুললেও এক-একটি এটিএম মেশিনের সর্বাধিক ধারণ ক্ষমতা দু’লক্ষ টাকা ছিল চাহিদার সমুদ্রে এক ঘটি জোগান মাত্র। এক-এক জন দু’হাজার টাকা করে তুলতে শুরু করলে, ১০০ জনের মাথায় টাকা ফুরোচ্ছে। তখনও কাউন্টারের বাইরে দীর্ঘ লাইন। টাকা শেষের খবর পেয়েই আরও অসহায় সেই ভিড়ের সব মুখ।

কালিকাপুরের ই-কর্নারে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ঠায় লাইনে দাঁড়িয়ে থেকেও টাকা তুলতে পারেননি সত্তরোর্ধ্ব সুবিমল সরকার। তাঁর বক্তব্য, ‘‘শুনেছিলাম কালো টাকার মালিকেরা অসুবিধায় পড়বেন এই ঘোষণায়। কিন্তু আমরা, সাদা টাকার মানুষেরা যে বিপদে পড়েছি, তা কি ওঁদের থেকে কিছু কম?’’

এনএসসি বসু রোডে আবার টাকা তোলার ভিড়ের ঠেলার যানজটেও পড়তে হল অনেককে। মালঞ্চ সিনেমার চত্বরে দু’টি এটিএমে সকাল থেকে ছিল ভিড়। লাইন গড়িয়েছে বড় রাস্তা পেরিেয়। ফলে রাস্তার একটা বড় অংশ বন্ধ হয়ে সকালের ব্যস্ত সময়ে থমকে যায় যান চলাচল। পুলিশ গিয়ে রাস্তা ফাঁকা করলে গাড়ি ছাড়তে শুরু করে। এটিএমে টাকা থাকলেও ভরসা পাচ্ছেন না সাধারণ মানুষ। লাইনের শেষের দিকে দাঁড়িয়ে থাকা এক ব্যক্তি বললেন, ‘‘এত লম্বা লাইন ঠেলে পৌঁছনোর আগেই হয়তো টাকা শেষ হয়ে যাবে। সারা দিন ধরে লাইনে দাঁড়িয়ে নষ্ট করেও হয়তো টাকা পাব না হাতে। জানি না কী করব!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Unrest ATM No money
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE