Advertisement
E-Paper

‘কার্গিল লাইনে’ বাড়ছে বিপদ, চিঠি পুলিশকে

সিইএসসি-র এক কর্তা জানিয়েছেন, যে ভাবে ওই এলাকায় ‘হুকিং’-এর তার জড়ানো হয়েছে, তাতে বর্ষাকালে লোহার দরজা, গ্রিল বা রেলিংয়ের মাধ্যমে বিদ্যুৎ পরিবাহিত হয়ে গেলে সেই বাড়ির বাসিন্দারা একসঙ্গে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হতে পারেন।

সুনন্দ ঘোষ

শেষ আপডেট: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০২:০৮
বেআইনি ভাবে বিদ্যুৎ সংযোগের তার কাটার কাজ চলছে। গার্ডেনরিচ-মেটিয়াবুরুজ এলাকায়। নিজস্ব চিত্র

বেআইনি ভাবে বিদ্যুৎ সংযোগের তার কাটার কাজ চলছে। গার্ডেনরিচ-মেটিয়াবুরুজ এলাকায়। নিজস্ব চিত্র

একের পর এক বাড়ির লোহার রেলিং, বারান্দার গ্রিল বা পাঁচিলে পেঁচানো ‘কার্গিল লাইন’। যা আদতে চুরি করা বিদ্যুতের তার। আর তা থেকেই বাড়ছে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হওয়ার আশঙ্কা। গার্ডেনরিচ, মেটিয়াবুরুজ এলাকায় যে কোনও দিন এমন বিপর্যয় হতে পারে, এই আশঙ্কায় কলকাতা বন্দরের দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশের ডেপুটি কমিশনারকে চিঠি দিয়েছেন সিইএসসি কর্তৃপক্ষ। তাঁদের দাবি, এই ভাবে বিদ্যুৎ চুরি বা ‘হুকিং’-এর জন্য শুধু তাঁদের আর্থিক ক্ষতিই নয়, বাড়ছে মানুষের প্রাণহানির আশঙ্কাও।

সিইএসসি-র এক কর্তা জানিয়েছেন, যে ভাবে ওই এলাকায় ‘হুকিং’-এর তার জড়ানো হয়েছে, তাতে বর্ষাকালে লোহার দরজা, গ্রিল বা রেলিংয়ের মাধ্যমে বিদ্যুৎ পরিবাহিত হয়ে গেলে সেই বাড়ির বাসিন্দারা একসঙ্গে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হতে পারেন। মেহেরমঞ্জিল, আটাবাগ, রামনগর লেন এলাকায় এমন ভাবে বিদ্যুৎস্পষ্ট হওয়ার ঘটনা ঘটছে।

যেমন, গত ৮ অগস্ট মেটিয়াবুরুজের ইমামবাড়া চত্বরে বন্ধুদের সঙ্গে খেলছিল বছর চোদ্দোর মহম্মদ ইমরান। বল আনতে ইমামবাড়ার লোহার গেট টপকাতে গেলে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা যায় সে। দেখা যায়, সেখানে সিইএসসি-র বড় বাক্স থেকে বিদ্যুতের লাইন বেআইনি ভাবে টেনে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। অত্যন্ত নিম্ন মানের বিদ্যুতের সেই তার পেঁচানো ছিল ইমামবাড়ার পাঁচিল এবং লোহার দরজায়, যা থেকে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয় ইমরান। গত ১৯ অগস্ট বৃষ্টির পরে রামনগর লেনে জমা জল পেরোতে গিয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যু হয় শেখ সালাউদ্দিনের (৩৫)। সিইএসসি-র দাবি, চুরি করা বিদ্যুতের খোলা তার কোনও ভাবে ওই জমা জলে পড়েছিল বলেই বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হন সালাউদ্দিন। এক কর্তার কথায়, ‘‘সে দিন তৎক্ষণাৎ ব্যবস্থা না নিলে সেই জল পেরিয়ে যেতে গিয়ে আরও মানুষ মারা যেতে পারতেন।’’

অভিযোগ, ওই সমস্ত এলাকায় কম টাকায় চুরি করা বিদ্যুৎ সংযোগ বাড়ি বাড়ি দিচ্ছেন একদল যুবক। স্থানীয় ভাবে যা পরিচিত ‘কার্গিল লাইন’ হিসেবে। এলাকা ভাগাভাগি করে করা হচ্ছে এই কাজ। রাস্তায় সিইএসসি-র পিলার বাক্স থেকে বিদ্যুতের তার বার করে বাড়ি বাড়ি দিচ্ছেন ওই যুবকেরা। কখনও মাথার উপর দিয়ে যাওয়া বিদ্যুতের তার থেকে চলছে অবাধ ‘হুকিং’। পরিবর্তে প্রতিটি বাড়ি থেকে মাসিক টাকা পাচ্ছেন তাঁরা।

সিইএসসি-র এক কর্তার কথায়, ‘‘চুরির জন্য ব্যবহৃত বিদ্যুতের তার নিম্ন মানের। কোথাও ৫০০ মিটার দূর পর্যন্ত সেই তার নিয়ে যেতে গিয়ে বাড়ির দোতলার বারান্দার রেলিং বা দেওয়ালের গায়ে লোহার গজালে তার বেঁধে দেওয়া হচ্ছে। সেই তারে জোড়া লাগানো হচ্ছে, যা নিম্ন মানের টেপ দিয়ে মোড়া থাকছে।’’ এর ফলে যে বিপদ বাড়ছে, তা স্থানীয়দের বুঝিয়েও লাভ হচ্ছে না বলেই সিইএসসি-র দাবি। এমনকি, কম টাকায় মিটার দিয়ে আইনি পথে বিদ্যুৎ সংযোগ দিতে চাইলেও অনেকে বেছে নিচ্ছেন সেই ‘কার্গিল লাইন’কেই।

সিইএসসি-র আরও দাবি, স্থানীয় বিধায়ক তথা কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম বিদ্যুৎ চুরি রুখতে সচেষ্ট হলেও স্থানীয় কিছু রাজনৈতিক নেতাদের প্রত্যক্ষ মদতে রমরমিয়ে চলছে এই ‘কার্গিল লাইন’। এ প্রসঙ্গে ফিরহাদ অবশ্য বলছেন, ‘‘পুলিশকে সচেষ্ট হতে হবে। এ বিষয়ে কাউন্সিলরদের কিছু করার নেই।’’ আর লালবাজারের এক উচ্চপদস্থ পুলিশকর্তা বলছেন, ‘‘সিইএসসি-র থেকে অভিযোগ পেলেই ব্যবস্থা নেওয়া হয়। তাঁদের সঙ্গে যথেষ্ট পরিমাণ পুলিশ গিয়ে সাহায্য করে।’’

Hooking Electricity CESC Kargil Line
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy