প্রতিষ্ঠিত স্বামী, স্বচ্ছল পরিবার। পরস্পরের সম্পর্কও আপাতভাবে যথেষ্ট ভাল। তবু ২৩ বছরের তরুণী আত্মহ্যার চেষ্টা করলেন। নিয়ে যাওয়া হল মনোবিদের কাছে। জানা গেল, দম্পতির মধ্যে স্বাভাবিক সহবাসের সম্পর্কই নেই। তার থেকেই মানসিক চাপ।
দুই, আইটি কর্মীর সদ্য বিবাহ বিচ্ছেদ হল। দু’জনের মধ্যে বন্ধুত্ব ভালই, তাই বিচ্ছেদে অবাক পরিজনেরা। জানা গেল, কারণ একই। দৈহিক সম্পর্ক নেই। তাই স্বাধীন জীবন বেছে নিতে চান দু’জনেই।
২৫ ছুঁই ছুঁই ইঞ্জিনিয়ার লিভ-ইন করেন ২৯-এর গবেষকের সঙ্গে। গবেষক তরুণী চাইছেন মা হতে। স্ত্রীরোগ চিকিৎসকের কাছে গিয়ে জানা গেল, দুই সঙ্গীর নিয়মিত যৌন সম্পর্কই নেই।
উপরের তিনটিই বিচ্ছিন্ন ঘটনা। কিন্তু শহরের আনাচ-কানাচে তরুণ দম্পতিদের আড্ডায় কান পাতলে এমন উদাহরণ অজস্র। মধুচন্দ্রিমা থেকে ফেরা মাত্র বিবাহ বিচ্ছেদের প্রস্তাবও বিস্ময়ের নয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে কারণ একই। শারীরিক সম্পর্ক নেই স্বামী-স্ত্রীর। যা বাড়াচ্ছে দূরত্ব। এর থেকে বাড়ছে অবসাদ, উদ্বেগ, আত্মহত্যা প্রবণতাও।
সাম্প্রতিক এক সমীক্ষাতেও ধরা পড়েছে এই ছবিই। সেখানে কেউ বলছেন কাজের চাপ, কেরিয়ারে উচ্চাশাই এর কারণ। কেউ আবার বলছেন অতিরিক্ত স্বাধীন মনোভাব কমিয়ে দিচ্ছে সম্পর্কের উষ্ণতা। এখনকার দাম্পত্যে ‘দৈহিক’ দূরত্ব যে সমস্যা বাড়াচ্ছে শহুরে জীবনে, তা এক কথায় স্বীকার করছেন মনোরোগ চিকিৎসক-মনোবিদ থেকে স্ত্রীরোগ চিকিৎসক, সকলেই।
মনোবিদ নীলাঞ্জনা সান্যাল বলেন, ‘‘সকলেই এখন স্বাধীন জীবন চান, সেখানেই সমস্যা। সুস্থ যৌন সম্পর্কের জন্যও প্রয়োজন কিছুটা সমর্পণ। কিন্তু তা থাকছে না অনেক ক্ষেত্রেই। তা ছাড়া তরুণদের উপরে আগের প্রজন্মের নজর দিন দিন যেন বাড়ছে। ফলে দাম্পত্যে বাবা-মায়েদের প্রভাব পড়ছে অনেক বেশি।’’ পাশাপাশি তাঁর মত, ‘‘বাইরের চাকচিক্যের প্রতি আকর্ষণ এতটাই বেড়েছে যে ঘরের আটপৌরে জীবনটা একঘেয়ে লাগছে অনেকের। তাতেও বাড়ছে দূরত্ব।’’
মনোরোগ চিকিৎসক অনিরুদ্ধ দেবও বলছেন, ‘‘দিন দিন বেড়ে চলা ব্যস্ততায় এমনিতেই পারিবারিক সময় কমে গিয়েছে। তার উপরে যদি বাড়িতে গুরুজনেরা থাকেন, তাতে স্বামী-স্ত্রী একে অপরের সঙ্গে কাটানোর মতো কোনও সময়ই পান না।’’
স্ত্রীরোগ চিকিৎসক অভিনিবেশ চট্টোপাধ্যায় অবশ্য আরও বেশি দায়ী করছেন কাজের চাপ এবং বদলে যাওয়া কর্ম সংস্কৃতিকেই। তিনি বলেন, ‘‘আইটি সেক্টরে কাজ করা তরুণদের মধ্যে এখনও পর্যন্ত এই সমস্যা সবচেয়ে বেশি। অনেক ক্ষেত্রেই স্বামী-স্ত্রী আলাদ শিফ্টে কাজ করেন। প্রায় দেখাই হয় না। সন্তানধারণের জন্য যে নিয়মিত শারীরিক সম্পর্ক প্রয়োজন হয়, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তার অভাব দেখা যাচ্ছে।’’
তবে শুধু সন্তান ধারণ নয়, সন্তানদের সুস্থ জীবন দিতে যে পারিবারির স্থিতাবস্থা প্রয়োজন, সেইটাই নড়বড়ে হয়ে যাচ্ছে বলে ধরা প়়ড়েছে সমীক্ষায়। বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, বাড়তে থাকা মানসিক চাপে এ ভাবেই ক্রমশ কমিয়ে দিতে পারে সাংসারিক বাঁধন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy