Advertisement
E-Paper

যাত্রীর শ্বাসকষ্ট, নামল ভিয়েতনামি বিমান

এ যেন সপ্তাহান্তে নাটক! শনিবারের রাতটা কার্যত সে ভাবেই কাটল কলকাতা বিমানবন্দরের।রাত প্রায় ১টা। কলকাতার দক্ষিণ আকাশে প্রায় ১২০ কিলোমিটার দূর দিয়ে উড়ে যাওয়া ভিয়েতনাম বিমানসংস্থার একটি উড়ানের পাইলট কলকাতার এয়ার ট্র্যাফিক কন্ট্রোল (এটিসি)-কে বললেন, তিনি কলকাতায় নামতে চান।

সুনন্দ ঘোষ

শেষ আপডেট: ৩০ জানুয়ারি ২০১৭ ০২:১৬

এ যেন সপ্তাহান্তে নাটক!

শনিবারের রাতটা কার্যত সে ভাবেই কাটল কলকাতা বিমানবন্দরের।

রাত প্রায় ১টা। কলকাতার দক্ষিণ আকাশে প্রায় ১২০ কিলোমিটার দূর দিয়ে উড়ে যাওয়া ভিয়েতনাম বিমানসংস্থার একটি উড়ানের পাইলট কলকাতার এয়ার ট্র্যাফিক কন্ট্রোল (এটিসি)-কে বললেন, তিনি কলকাতায় নামতে চান। বিমানে ষাটোর্ধ্ব এক যাত্রী অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। হো চি মিন সিটি থেকে ২৭৯ জন যাত্রী নিয়ে বিমানটি প্যারিস যাচ্ছিল।

নাটকের সেই শুরু। বিমানটিকে কলকাতায় নামিয়ে আনা হয় রাত ১টা ২০ মিনিটে। বিমানবন্দরের সিনিয়র মেডিক্যাল অফিসার প্রহ্লাদ হাইত বিমানে উঠে দেখেন, ৬৭ বছরের ফরাসি নাগরিক জ্যঁ লা ক্রোয়া প্রায় খাবি খাচ্ছেন। দম নিতে পারছেন না। বিমান থেকে নামিয়ে বিমানবন্দরের মেডিক্যাল রুমে প্রাথমিক চিকিৎসার পরে তাঁকে নাগেরবাজারের আইএলএস হাসপাতালে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। বিমান থেকে জ্যঁ লা-র সঙ্গে নেমে পড়েন স্ত্রী আনেত লা ক্রোয়াও।

নাটক বাকি ছিল আরও। বিদেশি বিমানসংস্থার বিমান, যা নিয়মিত এ শহরে নামা-ওঠা করে না, দুম করে এ ভাবে চলে এলে বেশ কিছু নিয়ম মানতে হয়। অনেক প্রক্রিয়া, কাগজপত্রে সই-সাবুদ করে তবেই আবার সে উড়তে পারে। এর মাঝে সেই বিমানকে নতুন করে জ্বালানিও নিতে হয়। কারণ, দূরপাল্লার বিমান তার রুট হিসেব কষেই জ্বালানি ভরে। মাঝখানে এতটা রাস্তা অন্য পথে এসে বিমানবন্দরে নামা-ওঠা করার জন্য জ্বালানি অনেকটাই খরচ হয়ে যায়।

কলকাতা বিমানবন্দর সূত্রের খবর, এই সব প্রক্রিয়া শেষ করার জন্য বিমানবন্দরের ৪৬ নম্বর বে-তে দাঁড়িয়েছিল বিমানটি। যাত্রীরা সকলেই বিমানে বসে। বিমানের ইঞ্জিন চালু করে ভিতরে অক্সিজেন সরবরাহের কাজ চলছিল। বিমানের বিদেশি পাইলট, ইঞ্জিনিয়ারদের সঙ্গে কথাবার্তা চালাতে শুরু করেন বিমানবন্দরের অফিসারেরা। সে সব চলতে চলতে সকাল হয়ে যায়।

রবিবার সকাল আটটা। কলকাতা বিমানবন্দরের চিকিৎসকের কাছে ফের খবর আসে, অন্য এক যাত্রী অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। আবার চিকিৎসক হাইত ছোটেন বিমানে। দেখা যায়, ৬৫ বছরের রজের তঁ দুতিকু ঘন ঘন বমি করতে শুরু করেছেন। তাঁর মাথা ঘুরছে, ব্যথাও করছে। ওই যাত্রীকেও নিয়ে আসা হয় বিমানবন্দরের মেডিক্যাল রুমে। কিছুক্ষণ পরে তিনি সুস্থ হয়ে ওঠেন। ততক্ষণে জ্বালানি ভরে কাগজপত্র ঠিকঠাক করে কলকাতা ছেড়ে আবার প্যারিসে উড়ে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়ে যায় বিমানটি।

রজারকেও বিমানে তুলে দেওয়া হয়। তার পরে আসে শেষ ফোনটি। দাঁড়িয়ে থাকা বিমানে এ বার অসুস্থ হয়ে পড়েছেন আরও এক যাত্রী ৫৭ বছরের জঁ মারি দোনে এবং এক বিমানসেবিকা। মারাত্মক পেট খারাপ। আবার চিকিৎসকদের ডেকে পাঠানো হয়। বিমানটি দাঁড়িয়ে থাকে কলকাতাতেই। শেষের দু’জনকে অবশ্য আর বিমান থেকে নামানো হয়নি। বিমানের মধ্যেই তাঁদের চিকিৎসা করা হয়। রাতভর কলকাতায় অপেক্ষা করার সময়ে বিমানে বসা যাত্রীদের খাবার ও পানীয় দেওয়া হয়। সেই খাবার ও পানীয় বিমানেই ছিল। চিকিৎসকদের সন্দেহ, ওই খাবার খেয়েই অসুস্থ হয়ে পড়েন শেষোক্ত দু’জন।

বিমানবন্দরের চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, তিন বিমানযাত্রীর চিকিৎসায় মূল বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছিল ভাষা। এঁরা কেউই ইংরেজি জানেন না। কেবলমাত্র ফরাসী ভাষা বলতে পারেন। পরে নাগেরবাজারের আইএলএস হাসপাতালের চিকিৎসকদেরও এই সমস্যার মুখে পড়তে হয়। জ্যঁ-এর স্ত্রী আনেতের সঙ্গে কিছুতেই কথা বলতে পারছিলেন না চিকিৎসকেরা। রবিবার বিকেলে হাসপাতালের চিকিৎসক কুমার রাজ জানান, শ্বাসকষ্টই মূল সমস্যা ছিল জ্যঁ লা ক্রোয়ার। তিনি বিপন্মুক্ত হলেও পুরোপুরি সুস্থ নন। এই অবস্থায় এখনই তাঁকে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া সম্ভব নয়। এমনকী, ছেড়ে দিলেও তিনি ফের বিমানে করে প্যারিস ফিরতে পারবেন না। কুমার রাজ বলেন, ‘‘একমাত্র এয়ার অ্যাম্বুল্যান্সে তাঁকে নিয়ে যাওয়া যেতে পারে।’’

পরে আনেত আনন্দবাজারকে জানান, স্বামী-স্ত্রী ভিয়েতনাম বেড়াতে গিয়েছিলেন। সেখান থেকে দেশে ফেরার সময়েই এই বিপত্তি। তাঁদের ভারতে ঢোকার ভিসা নেই। বিশেষ অনুমতি নিয়ে রয়েছেন। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব স্বামীকে নিয়ে দেশে ফিরতে চান তিনি। কিন্তু হাসপাতালের কাউকে কিছু বোঝাতে না পেরে তিনিও যথেষ্ট আতান্তরে পড়ে গিয়েছেন। রাতে কলকাতায় ফরাসী দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করেন আনেত। দেশে ফেরার ব্যবস্থা তাঁরাই করবেন বলে দূতাবাস জানিয়েছে তাঁকে।

Vietnam Flight Passenger Kolkata
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy