Advertisement
০৬ মে ২০২৪

এখনও অনিশ্চিত পুজো দেখার ‘ভিআইপি’ ভাগ্য

শুক্রবার নেতাজি ইন্ডোরে কলকাতা ও রাজ্যের দুর্গাপুজো নিয়ে ডাকা প্রস্তুতি বৈঠকে ভিআইপি কার্ডের রীতি তুলে দেওয়ার কথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী।

শুক্রবার দুর্গাপুজো নিয়ে ডাকা প্রস্তুতি বৈঠকে ভিআইপি কার্ডের রীতি তুলে দেওয়ার কথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী।—ফাইল চিত্র।

শুক্রবার দুর্গাপুজো নিয়ে ডাকা প্রস্তুতি বৈঠকে ভিআইপি কার্ডের রীতি তুলে দেওয়ার কথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী।—ফাইল চিত্র।

দেবাশিস ঘড়াই
কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০২:৪৩
Share: Save:

সত্যিই আলাদা ব্যবস্থা থাকবে না? সকলের জন্য একটাই লাইন? ভিআইপি কার্ড নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্যের পরে এই প্রশ্নই ঘুরছে শহরের পুজোকর্তাদের একটা বড় অংশের মধ্যে। তাঁদের চিন্তা, ইতিমধ্যেই বাজারে একাধিক পুজোর ভিআইপি কার্ড চলে এসেছে। কিছু ক্ষেত্রে সেই কার্ড বিলিও হয়েছে। এখন যদি কার্ড তুলে দেওয়ার কথা বলা হয়, তা হলে ওই কার্ডগুলোর কী হবে?

শুক্রবার নেতাজি ইন্ডোরে কলকাতা ও রাজ্যের দুর্গাপুজো নিয়ে ডাকা প্রস্তুতি বৈঠকে ভিআইপি কার্ডের রীতি তুলে দেওয়ার কথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু অনেক পুজোকর্তারই জিজ্ঞাসা, পুরোপুরি ভিআইপি কার্ড তুলে দেওয়া কি আদৌ সম্ভব? কারণ, পুজোয় স্পনসরদের জন্য সব সময়েই আলাদা গেট পাস করা হয়। তা হলে সেই গেট পাসগুলির কী হবে? ইতিমধ্যে শহরের অনেক পুজোর তরফেই ভিআইপি কার্ড ছাপাতে পাঠানো হয়েছে। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সেগুলি এখন বাতিল করতে হবে কি না, তা নিয়েও স্পষ্ট উত্তর পাচ্ছেন না তাঁরা।

সব থেকে সমস্যা তৈরি হয়েছে ইতিমধ্যেই বাজারে একাধিক পুজোর ভিআইপি কার্ড চলে আসায়। কাশী বোস লেনের পুজোকর্তা সোমেন দত্ত বলেন, ‘‘এক দলের কাছে কার্ড রয়েছে। আর এক দলের কাছে কার্ড নেই। ফলে পুরো বিষয়টা নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি হতে পারে। পুজোর উদ্যোক্তাদের ক্ষোভের মুখে পড়তে হতে পারে সে ক্ষেত্রে। সেটা কী ভাবে সামলাব?’’ উত্তরের আর একটি বড় পুজোর এক কর্তা বলেন, ‘‘ভিআইপি কার্ড পুরো বন্ধ কি করে দেওয়া সম্ভব? এত দিনের রীতি এক ঝটকায় তুলে দিলে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার আশঙ্কা থাকছে।’’

পুজোকর্তাদের একাংশের মধ্যে আরও একটি সংশয় তৈরি হয়েছে যে, ভিআইপি বলতে মুখ্যমন্ত্রী ঠিক কাদের বুঝিয়েছেন! কারণ, মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, ‘‘এক দল মানুষ ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকবেন, আর এক দল ভিআইপি লাল গাড়ি ছুটিয়ে পুজো প্যান্ডেলে ঢুকে যাবেন। এটা ঠিক নয়।’’ এই মন্তব্যকে ব্যাখ্যা করে দক্ষিণ কলকাতার এক বড় পুজোর কর্তা বলেন, ‘‘পুজোর সময়ে অনেক মন্ত্রী-আমলা-উচ্চপদস্থ সরকারি চাকুরে থেকে পুলিশের কর্তা পরিবার নিয়ে পুজো দেখতে আসেন। তাঁদের জন্য সব সময়ই একটা আলাদা ব্যবস্থা করা হয়। মুখ্যমন্ত্রী মনে হয় ভিআইপি বলতে তাঁদেরই বুঝিয়েছেন।’’ একডালিয়া এভারগ্রিনের পুজোকর্তা স্বপন মহাপাত্র অবশ্য বলছেন, ‘‘আমাদের পুজোয় আলাদা করে কোনও ভিআইপি কার্ড থাকে না। ঢাকি, পুরোহিতদের জন্য শুধু আলাদা কার্ডের ব্যবস্থা করা হয়। এ ছাড়া কিছু গেট পাস থাকে।’’

পুরো বিষয়টি নিয়ে ঠিক ভাবে আলোচনার জন্য মুখ্যমন্ত্রীর কাছে সময় চাইতে চলেছে ‘ফোরাম ফর দুর্গোৎসব’। ফোরামের পক্ষে কাজল সরকার বলেন, ‘‘বিষয়টি নিয়ে আলোচনার জন্য মুখ্যমন্ত্রীর কাছে সময় চাইব। অধিকাংশ পুজোর ক্ষেত্রেই স্পনসরদের জন্য আলাদা ভিআইপি কার্ডের ব্যবস্থা করতে হয়। সেগুলির কী হবে? এটা তো আলোচনাসাপেক্ষ বিষয়। তবে মুখ্যমন্ত্রী যা বলবেন, সেটাই হবে।’’

প্রতি বার পুজোর আগে ভিআইপি কার্ড সংগ্রহ নিয়ে রীতিমতো হুড়োহুড়ি শুরু হয়ে যায়। কার কাছে কত বেশি সংখ্যক বড় পুজোর কার্ড রয়েছে, সেই নিয়ে অলিখিত প্রতিযোগিতা চলে। মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের পরে তাই শুধু পুজো কমিটি নয়, পুজোয় চুটিয়ে ঠাকুর দেখা বহু মানুষের মধ্যেই বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

VIP queue Durgapuja Mamata Banerjee
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE