খরচ বৃদ্ধি পাওয়ায় এ ভাবেই পড়ে আছে সরকারি ভলভো বাস। বুধবার, সল্টলেকের করুণাময়ী বাস স্ট্যান্ডে। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক
গত কয়েক মাসে রাস্তা থেকে প্রায় উধাও হতে বসা রাজ্য পরিবহণ নিগমের ভলভো বাসের দেখা মিলতে পারে এ বারের বসন্তেই। বাজেটে পরিকল্পনা খাতে বরাদ্দ টাকার একাংশ দিন দুয়েক আগে রাজ্য পরিবহণ নিগমের হাতে আসায় সেই সম্ভাবনা উজ্জ্বল হয়েছে। প্রায় ১০ কোটি টাকা ওই খাতে মিলেছে বলে নিগম সূত্রের খবর। তাই আয় বাড়াতে গরম পড়ার আগেই ৬৩টি ভলভো বাসের পরিষেবা স্বাভাবিক করতে চায় রাজ্য পরিবহণ নিগম। করোনা পরিস্থিতিতে রক্ষণাবেক্ষণ এবং তেলের বিপুল ব্যয় মেটাতে না পারায় গত কয়েক মাসে ভলভো বাসের সংখ্যা কমতে কমতে প্রায় অর্ধেকেরও কমে এসে ঠেকেছিল। যাত্রী-সংখ্যা খুব কম থাকায় জ্বালানির খরচটুকুও উঠছিল না।
কলকাতা বিমানবন্দর, হাওড়া, টালিগঞ্জ, গড়িয়া এবং সেক্টর ফাইভ-সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ রুটে হাতে গোনা ভলভো বাস এখন চালু রয়েছে। নিয়মিত ভাবে উন্নত মানের খরচসাপেক্ষ রক্ষণাবেক্ষণের প্রয়োজন হয় আধুনিক প্রযুক্তি-নির্ভর ওই সমস্ত বাসের। সাধারণ ভাবে বাস প্রস্তুতকারক সংস্থা বা তাদের মনোনীত সংস্থাই ওই রক্ষণাবেক্ষণের কাজের তদারকি করে। বাসের মেরামতি এবং যন্ত্রাংশ বদলের ভারও তাদের হাতে থাকে। কিন্তু গত কয়েক মাসে ৬৩টি ভলভো বাসের রক্ষণাবেক্ষণ বাবদ একটি বেসরকারি সংস্থার কাছে বকেয়ার পরিমাণ প্রায় দু’কোটি টাকায় গিয়ে ঠেকায় তারা কাজ বন্ধ করে দেয়। সাধারণ ভাবে ৫০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত বকেয়া রাখা যায়। ওই সংস্থা কাজ বন্ধ করার ফলে বিমানবন্দর, হাওড়া স্টেশন-সহ বহু গুরুত্বপূর্ণ রুটে ভলভো বাস অনিয়মিত হয়ে পড়ে।
প্রাক্-করোনা পরিস্থিতিতে রাজ্য পরিবহণ নিগমের আয়ের প্রায় ৬০ শতাংশ এসি এবং ভলভো বাসের পরিষেবা থেকে আসত। কিন্তু করোনা-পর্বে সংক্রমণের আশঙ্কায় সেক্টর ফাইভের বিভিন্ন তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থায় বাড়ি থেকে কাজ করার ব্যবস্থা চালু হওয়ায় ওই সব বাসের যাত্রী এক ধাক্কায় অনেকটা কমে যায়। বিমানবন্দর এবং রেল স্টেশনে যাত্রী কম থাকায় তারও প্রভাব পড়ে এসি এবং ভলভো বাসের আয়ের উপরে। যাত্রী-সংখ্যা অস্বাভাবিক রকম কমে যাওয়ায় তেলের বিপুল খরচের বোঝা সামলাতেও হিমশিম খেতে হয় নিগমকে। সাধারণ নন-এসি বাস যেখানে এক লিটার ডিজ়েলে আড়াই থেকে পৌনে তিন কিলোমিটার পথ চলে, সেখানে ভলভো বাস সম পরিমাণ তেল পুড়িয়ে চলে ১.৮ থেকে পৌনে দুই কিলোমিটার। খরচের এই বিপুল বোঝা এড়াতেই সেই সময়ে ওই সব বাতানুকূল বাস বসিয়ে দেওয়া হয়। এখন ধাপে ধাপে বিভিন্ন পরিষেবা সচল হওয়ায় বাসের যাত্রী-সংখ্যাও বাড়ছে। পরিকল্পনা খাতে বরাদ্দের টাকা এসে পৌঁছনোয় আপাতত রক্ষণাবেক্ষণের কাজ করিয়ে ভলভো বাস সচল করা যাবে বলে আশা করছেন রাজ্য পরিবহণ নিগমের আধিকারিকেরা।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে এক আধিকারিক বলেন, ‘‘গরম বাড়লে এসি এবং ভলভো বাসের চাহিদা অনেকটাই বাড়ে। আশা করছি, সেই চাহিদা বৃদ্ধির আগেই রাস্তায় বাসের জোগান স্বাভাবিক করা সম্ভব হবে।’’ একই সঙ্গে সামনে নির্বাচন থাকায় ভোটের কাজে ব্যবহার করার জন্য সাধারণ নন-এসি বাসগুলির রক্ষণাবেক্ষণ করতে হবে বলে জানাচ্ছেন নিগমের আধিকারিকেরা। সেই কাজও শুরু করা হয়েছে। তবে বরাদ্দের ওই টাকা কোনও ভাবেই তেল কেনার কাজে খরচ করা যাবে না। আপাতত স্বাস্থ্য দফতরের কাছ থেকে পাওয়া টাকার একাংশ ব্যবহার করেই জ্বালানির খরচ মেটাচ্ছেন নিগম কর্তৃপক্ষ। ওই খাতের টাকা এখনও রাজ্য সরকারের কাছে বকেয়া রয়েছে বলে খবর।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy