Advertisement
E-Paper

সহমর্মী দেওয়াল ভাঙছে মহানগরীতে

ইরানের মেশাদ শহরই প্রথম এই সহমর্মিতার দেওয়াল গড়ে পথ দেখিয়েছিল। ভেঙে পড়া অর্থনীতির ধাক্কায় সে দেশের দরিদ্রেরা তখন বিত্তশালীদের দানধ্যানের দিকেই তাকিয়ে। দরিদ্রদের পাশে দাঁড়াতে এমন অভিনব ভাবনা ক্রমে ছড়িয়ে পড়ে তেহরান হয়ে পাকিস্তানের বিভিন্ন শহরে। চিনের লিউঝু, জর্ডনের আম্মান বা এ দেশের দিল্লি, ইলাহাবাদ, চণ্ডীগড়, হায়দরাবাদেও গড়ে ওঠে ‘দিওয়ার-ই-মেহেরবানি’ বা ‘নেকি কি দিওয়ার’! কলকাতাও এই আবেগের শরিক হয়। তবে এ শহরে এখনই এই কাছে টানার দেওয়ালে চিড় ধরেছে।

সৌরভ দত্ত

শেষ আপডেট: ০৬ অগস্ট ২০১৮ ০৩:১৯
লেক টাউনে অদৃশ্য ‘উদারতার দেওয়াল’। নিজস্ব চিত্র

লেক টাউনে অদৃশ্য ‘উদারতার দেওয়াল’। নিজস্ব চিত্র

‘মেহেরবানি’ বা ‘কাইন্ডনেস’। বাংলায় উদারতা। দুঃস্থদের জন্য উদ্বৃত্ত পোশাক বা অন্যান্য সামগ্রী দেওয়ালের সামনে সাজিয়ে রাখার প্রবণতায় ভরে উঠছিল কলকাতা। সেই চেষ্টা কি ধাক্কা খেতে শুরু করেছে?

প্রশ্নটা এ বার উঠেই গেল। অথচ, বছর দু’য়েক আগেও এমনটা ভাবা যায়নি। ২০১৬-র অক্টোবরে লেক টাউনের একটি সিনেমা হলের কাছে আবাসনের পাশে ‘ওয়াল অব কাইন্ডনেস’ বা ‘উদারতার দেওয়াল’ ঘিরে আবেগ উপচে পড়ছিল। ব্যবসায়ী রাজেশ গোয়েন্‌কা ও তাঁর স্ত্রী নীলম গোয়েন্‌কার উদ্যোগে সাড়া দিয়েছিলেন অনেকেই। এখন সেই দেওয়ালের চিহ্নও নেই।

ইরানের মেশাদ শহরই প্রথম এই সহমর্মিতার দেওয়াল গড়ে পথ দেখিয়েছিল। ভেঙে পড়া অর্থনীতির ধাক্কায় সে দেশের দরিদ্রেরা তখন বিত্তশালীদের দানধ্যানের দিকেই তাকিয়ে। দরিদ্রদের পাশে দাঁড়াতে এমন অভিনব ভাবনা ক্রমে ছড়িয়ে পড়ে তেহরান হয়ে পাকিস্তানের বিভিন্ন শহরে। চিনের লিউঝু, জর্ডনের আম্মান বা এ দেশের দিল্লি, ইলাহাবাদ, চণ্ডীগড়, হায়দরাবাদেও গড়ে ওঠে ‘দিওয়ার-ই-মেহেরবানি’ বা ‘নেকি কি দিওয়ার’! কলকাতাও এই আবেগের শরিক হয়। তবে এ শহরে এখনই এই কাছে টানার দেওয়ালে চিড় ধরেছে।

লেক টাউনের দেওয়ালটির মতো দক্ষিণ কলকাতার লর্ডস মোড়ের কাছে একটি দেওয়ালও এক বছরের মাথায় উধাও! লোকের উৎসাহ থাকলেও মূল উদ্যোক্তার অসুস্থতায় দেওয়াল আর টেকেনি বলে জানাচ্ছেন এই কাজের সঙ্গে যুক্ত পুষ্প হালদার। তবে সল্টলেকে এফ-ই ব্লকের উল্টো দিকে ২০১৭-র জানুয়ারি থেকে রয়েছে একটি দেওয়াল। কলকাতায় ওই একটিই! তবে ওই দেওয়ালটি যিনি তৈরি করান, সল্টলেকের বাসিন্দা সেই ব্যবসায়ীও ইদানীং ভয় পাচ্ছেন।

সল্টলেকে অবশ্য এখনও রয়েছে সেটি। নিজস্ব চিত্র

কেন? তিনি বলছেন, ‘‘বর্ষায় দেওয়ালের গায়ে রাখা পোশাক ভিজছে দেখে একটি ছাউনি করে দেব ভেবেছিলাম। কিন্তু কে আবার নোটিস পাঠাবে ভেবে পিছিয়ে আসি।’’ এই আশঙ্কার পিছনে কাজ করছে লেক টাউনের গোয়েন্কা দম্পতির দেওয়ালের পঞ্চত্ব প্রাপ্তির ঘটনা। এলাকায় খবর, স্থানীয় রাজনৈতিক চাপেই নাকি দেওয়ালটি উঠে গিয়েছে।

দেওয়ালের রূপকার গোয়েন্কারা অবশ্য এ প্রসঙ্গে মুখে কুলুপ এঁটেছেন। কিন্তু স্থানীয় সূত্রে খবর, দরিদ্র শহরবাসীর মধ্যে দেওয়ালটির জনপ্রিয়তা ভাল ভাবে নেননি রাজনৈতিক নেতাদের একাংশ। অভিযোগ, রাজেশকে প্রায়ই কটাক্ষ শুনতে হত, ‘আপনি তো নেতা হয়ে গিয়েছেন! নিজের ছবি টাঙিয়ে নিন।’ প্রভাবশালীদের এই অসন্তোষেই রাজেশ পিছু হটেন বলে স্থানীয় বাসিন্দাদের বক্তব্য। স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলর মানসরঞ্জন রায় অবশ্য এ সব অভিযোগ উড়িয়ে দিচ্ছেন। ‘‘জায়গাটা জঞ্জালের আড়ত হয়ে উঠেছিল। তাই জনতা লিখিত প্রতিবাদ করে। জনতার দাসত্ব করি। তাদের কথা শুনতে হবেই।’’ মানসবাবু বলছেন, তিনি রাজেশবাবুকে পুরসভার লিখিত অনুমতি আনতে বলেন। কিন্তু তা না করে রাজেশবাবু দেওয়াল
সরিয়ে ফেলেন।

স্থানীয় বাসিন্দাদের অনেকে অবশ্য কাউন্সিলরের দাবির সঙ্গে একমত নন। স্থানীয় বিধায়ক সুজিত বসু আশ্বাস দিচ্ছেন, ‘‘যাঁরা দেওয়াল করেছিলেন, তাঁদের আমার সঙ্গে কথা বলতে বলুন। পারলে দেওয়াল ফিরিয়ে আনব।’’ গরিবের পাশে দাঁড়াতে দলীয় পতাকাবিহীন এই উদ্যোগ নিয়ে শহরের নানা এলাকায় চাপান-উতোরের ছবিটা কিন্তু স্পষ্ট। দু’বছর আগে সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়কেও এই দেওয়ালের উদ্যোগ স্পর্শ করেছিল। তিনি কিছুটা আশাহত, স্থানীয় সমস্যায় এই প্রচেষ্টা ধাক্কা খাওয়ায়। বলছেন, ‘‘জায়গা পেলে আমার পাড়াতেও এমন দেওয়াল করতাম। এই ধরনের কাজে পুরসভার সমর্থন করা উচিত।’’

Wall of Kindness Kolkata Saltlake Lake Town
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy