Advertisement
E-Paper

তিন দিন পরেও জ্বলছে আগুন, সঙ্গে বিস্ফোরণ

দমকলের একাংশ জানিয়েছে, শুক্রবার থেকেই গুদামের ভিতরে জল জমার পরিমাণ বাড়ানো হয়েছে। যাতে ভিতরে থাকা ড্রামগুলি কম গরম হয়। এর জন্য গুদামের বিভিন্ন প্রবেশ পথে বালির বস্তা দিয়ে জল বাইরে আসা আটকানো হয়েছে এ দিন।

শিবাজী দে সরকার

শেষ আপডেট: ১৫ অক্টোবর ২০১৭ ০১:০৩
এখনও চলছে আগুন নেভানোর কাজ। শনিবার, তারাতলার ট্রান্সপোর্ট ডিপো রোডে। ছবি: রণজিৎ নন্দী

এখনও চলছে আগুন নেভানোর কাজ। শনিবার, তারাতলার ট্রান্সপোর্ট ডিপো রোডে। ছবি: রণজিৎ নন্দী

আগুন লাগার পরে তিন দিন কেটে গিয়েছে। আগুন নেভা তো দূর অস্ত্‌, তারাতলা থানা এলাকার ট্রান্সপোর্ট ডিপো রোডের গুদামে বিস্ফোরণ থামেনি। শনিবারও দিনভর দাউদাউ করে আগুন জ্বলেছে সেখানে।
কিছু ক্ষণ অন্তর ভেসে এসেছে বিস্ফোরণের শব্দ! পরিস্থিতি এমনই গুরুতর যে রাত পর্যন্ত দমকল গুদামের ভিতরে ঢুকতে পারেনি।

এই ভয়াবহ আগুনের জেরে আতঙ্কও ছড়িয়েছে আশপাশে। দমকল সূত্রের খবর, গুদামের বাইরে ওই আগুন যাতে না আসে তার জন্য ব্যবস্থা করা হয়েছে। বিস্ফোরণের কারণ সম্পর্কে দমকলকর্তাদের একাংশের ব্যাখ্যা, গুদামের ভিতরে মুখবন্ধ ৪ ফুট বা ৮ ফুটের ড্রামের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক মজুত রয়েছে। সেগুলি বোমার মতো ফাটছে। ক্রমাগত বিস্ফোরণ ঘটতে থাকায় ভিতরে ঢুকে কাজ করা যাচ্ছে না।

এই পরিস্থিতিতে তা হলে কী উপায় বেছেছে দমকল?

দমকলের একাংশ জানিয়েছে, শুক্রবার থেকেই গুদামের ভিতরে জল জমার পরিমাণ বাড়ানো হয়েছে। যাতে ভিতরে থাকা ড্রামগুলি কম গরম হয়। এর জন্য গুদামের বিভিন্ন প্রবেশ পথে বালির বস্তা দিয়ে জল বাইরে আসা আটকানো হয়েছে এ দিন। দমকলকর্মীরা জানান, যে দু’ধরনের ড্রাম ভিতরে রয়েছে, তার মধ্যে ৪ ফুটের ড্রামগুলি জলে ডুবে রয়েছে। কিন্তু ৮ ফুটের বেশ কিছু ড্রাম জলের উপরেই রয়েছে। ফলে সেগুলি শনিবার গরম হয়ে বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে। তাই এ দিনও দমকলকর্মীরা ভিতরে ঢুকে কাজ করার সাহস পাননি। এক দমকল অফিসারের কথায়, ওই প্রক্রিয়ার ফলে হয়তো আগুন পুরো নিভে যাবে না, কিন্তু বিস্ফোরণের আশঙ্কা অনেকটাই হ্রাস পাবে। কিছু দাহ্য রাসানয়িক অবশ্য জলের মধ্যেও জ্বলতে থাকবে।

কিন্তু অগ্নিকাণ্ডের তিন দিন পরেও কেন দমকল আগুন নেভাতে পারল না, তা নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন। কিন্তু আগুন নেভাতে ৭২ ঘণ্টা ধরে যদি অপেক্ষা করতে হয়, তা হলে দমকলের পরিকাঠামো বাড়িয়ে লাভ কী, প্রশ্ন তুলছেন অনেকেই। দমকলকর্তাদের অবশ্য জবাব, ভিতরে কী রাসায়নিক রয়েছে, তা না জানার জন্য ‘ধীরে চলো’ নীতি নেওয়া হয়েছে। ওই গুদামের রাসায়নিক সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট সংস্থাই নির্দিষ্ট তথ্য জানাতে পারবে। তাদের তলব করা হয়েছে। যদিও দমকলের এক প্রাক্তন কর্তার মন্তব্য, ‘‘তলব করে আনতে বা তাঁদের কাছ থেকে তথ্য পেতে তিন দিন কেটে গেল! এটা তো দমকল-পুলিশের গাফিলতি বলেই গণ্য করা হবে।’’

ট্রান্সপোর্ট ডিপো রোডের ওই গুদামটি তিনতলা। পুলিশ সূ্ত্রের খবর, বুধবার সকালে ওই গুদামের একতলা থেকে ধোঁয়া বেরোতে দেখা গিয়েছিল। তামিলনাড়ুর একটি সংস্থা ওই গুদামটিতে অ্যালমুনিয়াম এবং ম্যাগনেশিয়াম চূর্ণ, জিঙ্ক-সহ বিভিন্ন বাজি এবং রং তৈরিতে ব্যবহৃত রাসায়নিক মজুত করেছিল। তবে কী পরিমাণ রাসায়নিক সেখানে মজুত ছিল, তা সংস্থাটির পক্ষ থেকে পুলিশকে জানানো হয়নি বলে সূত্রের খবর।

প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশ জানিয়েছে, বৃষ্টির জল ওই গুদামের একাংশে আগে থেকেই জমে ছিল। কিন্তু সেখানে কাজ করা কর্মীরা জানতেন না কোন ড্রামে কী মজুত রাখা রয়েছে। ফলে পুলিশের অনুমান, ড্রামে থাকা দাহ্য রাসায়নিক গুঁড়োর সঙ্গে জলের সংস্পর্শে বুধবার আগুন লেগে গিয়েছিল গুদামে। যা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। আগুন না নেভার জন্য এখনও ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞেরা সেখান থেকে নমুনা সংগ্রহ করতে পারেননি। তবে ফরেন্সিকের একটি সূত্রের দাবি, সোডিয়ামের মতো রাসায়নিক জলের সংস্পর্শে এলেই জ্বলে ওঠে। ট্রান্সপোর্ট ডিপো রোডের গুদামটিতে তেমন কোনও রাসায়নিক ছিল কি না, সেটা খতিয়ে দেখতে হবে।

শনিবার ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, ট্রান্সপোর্ট ডিপো রোড দু’দিক থেকে যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করেছে পুলিশ। ঘটনাস্থলে দমকলের চারটি ইঞ্জিনের প্রায় তিরিশ জন কর্মী এক নাগাড়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা করে চলেছেন। বালির বস্তা দিয়ে গুদামের দরজা আটকে রাখা হয়েছে। ওই কাজের মধ্যেই বিকেল তিনটে নাগাদ আচমকা বিস্ফোরণের আওয়াজ শোনা যায় ভিতর থেকে। গুদামের ভিতর থেকে বেরোতে থাকে সাদা ধোঁয়া। দমকলকর্মীরা গুদামের কিছুটা দূরে সরতেই ফের ভিতরে থাকা বন্ধ ড্রামে বিস্ফোরণ ঘটে।

Taratala Warehouse explosion burning fire Faire Accident
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy