Advertisement
E-Paper

উপাচার্যকে হুমকি দিয়ে জঙ্গিপনা শিক্ষকদের

কড়া দাওয়াই নয়। শিক্ষায় শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য তিনি সব তরফের মতামত নেওয়ার পক্ষপাতী বলে সোমবারেই জানিয়ে দিয়েছিলেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সুরঞ্জন দাস। মঙ্গলবার সেই সুরঞ্জনবাবুকেই পড়তে হল তৃণমূলের শিক্ষক সংগঠন ওয়েবকুপা-র হুমকির মুখে। তাদের দাবি না-মানলে ফের ক্যাম্পাসে ঢুকে বিক্ষোভ দেখানো হবে বলেও জানিয়ে দিয়েছে তারা। এখানেই শেষ নয়। উপাচার্যের দায়িত্ব কী, কোন কোন বিষয়ে নজর রাখা তাঁর কর্তব্য সেই ব্যাপারে আঙুল উঁচিয়ে সুরঞ্জনবাবুকে পরামর্শও দেন শাসক দলের ওই সংগঠনের সভানেত্রী কৃষ্ণকলি বসু।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৬ জুলাই ২০১৪ ০২:৫৫
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সুরঞ্জন দাসের মুখোমুখি ওয়েবকুপার সদস্যরা। মঙ্গলবার সেনেট হলে। ছবি: সাবেরী প্রামাণিক

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সুরঞ্জন দাসের মুখোমুখি ওয়েবকুপার সদস্যরা। মঙ্গলবার সেনেট হলে। ছবি: সাবেরী প্রামাণিক

কড়া দাওয়াই নয়। শিক্ষায় শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য তিনি সব তরফের মতামত নেওয়ার পক্ষপাতী বলে সোমবারেই জানিয়ে দিয়েছিলেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সুরঞ্জন দাস।

মঙ্গলবার সেই সুরঞ্জনবাবুকেই পড়তে হল তৃণমূলের শিক্ষক সংগঠন ওয়েবকুপা-র হুমকির মুখে। তাদের দাবি না-মানলে ফের ক্যাম্পাসে ঢুকে বিক্ষোভ দেখানো হবে বলেও জানিয়ে দিয়েছে তারা। এখানেই শেষ নয়। উপাচার্যের দায়িত্ব কী, কোন কোন বিষয়ে নজর রাখা তাঁর কর্তব্য সেই ব্যাপারে আঙুল উঁচিয়ে সুরঞ্জনবাবুকে পরামর্শও দেন শাসক দলের ওই সংগঠনের সভানেত্রী কৃষ্ণকলি বসু।

সপ্তাহখানেক আগে তৃণমূল ছাত্র পরিষদ বা টিএমসিপি-র রাজ্য সভাপতি শঙ্কুদেব পণ্ডার নেতৃত্বে বাইরের এক দল যুবক বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বারভাঙা ভবনের দোতলায় উঠে সিন্ডিকেটের বৈঠক চলাকালীন বিক্ষোভ দেখায়। এ দিন স্মারকলিপি দিতে গিয়ে ছাত্র সংগঠনের দেখানো জঙ্গিপনার পথে হেঁটে বিক্ষোভ দেখালেন ওয়েবকুপা-র সদস্যেরা।

গত সোমবার শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় একটি অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, গণতান্ত্রিক পরিবেশে সকলেই নিজেদের দাবিদাওয়া জানাতে পারেন। কিন্তু ছাত্র-শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীদের নিজের নিজের দায়িত্বও খেয়াল রাখতে হবে। ঠিক তার পরের দিন তাঁর দলেরই শিক্ষক সংগঠনের বিক্ষোভ বুঝিয়ে দিল, শিক্ষামন্ত্রীর পরামশর্র্ তাঁদের কাছে বিশেষ গুরুত্ব পায়নি। এই বিষয়ে তাঁর মতামত জানার জন্য টেলিফোন করা হলে শিক্ষামন্ত্রী মঙ্গলবার ফোন ধরেননি।

গত সপ্তাহে রাজাবাজার বিজ্ঞান কলেজ ক্যাম্পাসে শারীরবিদ্যা বিভাগের ছাত্রছাত্রীরা নিরাপত্তার দাবিতে ক্লাস বয়কট করেন। টিএমসিপি-র বিরুদ্ধে আতঙ্ক ছড়ানোর অভিযোগ ওঠে ওই ক্যাম্পাসে। সুরক্ষা সুনিশ্চিত না-হওয়া পর্যন্ত তাঁরা ক্লাসে যোগ দেবেন না বলে ছাত্রছাত্রীরা জানিয়ে দেন। শেষ পর্যন্ত উপাচার্য বিজ্ঞপ্তি জারি করে নিরাপত্তার আশ্বাস দেন এবং পড়ুয়াদের ক্লাসে ফেরার আবেদন জানান। ছাত্রছাত্রীরা তাতে সাড়াও দেন। সোমবার ওই বিভাগে ফের ক্লাস শুরু হয়েছে। এরই মধ্যে টিএমসিপি সব অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তাদের পাল্টা দাবি, ওই বিভাগের শিক্ষিকা রোশেনারা মিশ্র বহিরাগতদের নিয়ে ক্যাম্পাসে বৈঠক করেন। সেখানে সিপিএমের রাজনীতি করছেন তিনি। রোশেনারাদেবী অবশ্য এই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন।

ক্যাম্পাসে শিক্ষকদের রাজনীতি করার বিরোধিতা করে এ দিন উপাচার্যকে স্মারকলিপি দেয় তৃণমূলের শিক্ষক সংগঠন ওয়েবকুপা। প্রকাশ্যে নাম না-করলেও সংগঠনের অনেকেই প্রকারান্তরে জানিয়ে দেন, টিএমসিপি-র মতো তাঁদের অভিযোগও মূলত রোশেনারাদেবীর বিরুদ্ধে। শিক্ষা ক্ষেত্রে রাজনীতিকরণ এবং নির্দিষ্ট একটি রাজনৈতিক মতাদর্শে ছাত্রছাত্রীদের ‘ব্রেনওয়াশিং’ বা মগজধোলাইয়ের যে-পরম্পরা গত তিন দশক ধরে চলে এসেছে, তা বন্ধ করার দাবি জানানো হয়েছে ওয়েবকুপা-র ওই স্মারকলিপিতে।

কিন্তু শুধু স্মারকলিপি দেওয়া এবং দাবি জানানোর মধ্যেই এ দিন থেমে থাকেনি ওয়েবকুপা। বিকেল ৪টেয় উপাচার্যের ঘরের সামনে সেনেট হলে জড়ো হন ওই সংগঠনের শ’দেড়েক সদস্য। হাতে সংগঠনের নাম লেখা প্ল্যাকার্ড। সমাগতদের দাবি, স্মারকলিপি দেওয়ার জন্য উপাচার্যের ঘরে ঢুকতে দিতে হবে তাঁদের সকলকেই। উপাচার্যের অফিসের কর্মীরা আপত্তি জানালে সংগঠনের নেত্রী কৃষ্ণকলিদেবী চিৎকার করে বলতে থাকেন, “তা হলে স্যারকে (উপাচার্যকে) বাইরে আসতে বলুন।”

পরে সেনেট হলে আসেন সুরঞ্জনবাবু, সহ-উপাচার্য (অর্থ) সোনালি চক্রবর্তী বন্দ্যোপাধ্যায়, রেজিস্ট্রার বাসব চৌধুরী এবং সিন্ডিকেট-সদস্য মিলন পাল। তাঁদের ঘিরে দাঁড়ান ওয়েবকুপা-র সদস্যেরা। নেতৃত্বে কৃষ্ণকলিদেবী। গলা তুলে, আঙুল নেড়ে তিনি বলতে থাকেন, “ছাত্রছাত্রীরা ক্যাম্পাসে রাজনীতি করতেই পারে। কিন্তু তা বলে শিক্ষক-শিক্ষিকারা ছাত্রদের নিয়ে রাজনীতি করবেন, এটা কিছুতেই মেনে নেওয়া যায় না।” সেই সঙ্গেই তাঁর অভিযোগ, ক্যাম্পাসে বসে রাজনীতি করছেন শিক্ষক-শিক্ষিকাদের একাংশ। এটা বন্ধ করতে হবে। শিক্ষক-নেত্রী উপাচার্যকে বলেন, “ক্লাসে কী হচ্ছে, সেটা দেখা এবং বন্ধ করাও কিন্তু আপনার দায়িত্ব। এ-সব আপনাকেই দেখতে হবে।” ক্যাম্পাসে রাজনীতি বন্ধ না-হলে তাঁরাও ছাড়বেন না। ক্যাম্পাসে এসে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ করবেন বলে জানিয়ে দিয়েছেন সভানেত্রী।

উপাচার্য সোমবার জানিয়েছিলেন, কাজের সময়ে যাতে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ-অবস্থান-মিটিং-মিছিল বন্ধ করা যায়, সেই জন্য সংশ্লিষ্ট সকলের মতামত নেওয়া হবে। এ দিনও কৃষ্ণকলিদেবীকে সে-কথা জানান তিনি। উপাচার্য বলেন, “সিন্ডিকেটের বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হবে।” এ কথা শুনে বৈঠকের দিন ক্যাম্পাসে হাজির থাকতে চান ওয়েবকুপা-র সদস্যেরা।

ওয়েবকুপা-র এ দিনের বিক্ষোভ নিয়ে উপাচার্য কিছু বলতে চাননি। বিক্ষোভকারীদের মধ্যে ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বাণিজ্য বিভাগের ডিন স্বাগত সেন। তাঁকে প্রশ্ন করা হয়, স্মারকলিপি দিয়ে দাবি জানানোর এই পদ্ধতি কি ঠিক? স্বাগতবাবুর জবাব, “এই নিয়ে কোনও মন্তব্য করব না।”

calcutta university suranjan das wil pay tmcp webcupa
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy