Advertisement
০২ মে ২০২৪

‘হঠাৎ দেখি, উড়ে গিয়ে পড়ল হালিমা’

হাতি লোককে শুঁড়ে তুলে ছুড়ে ফেলছে— এ দৃশ্যটা একাধিক বার টিভিতে দেখেছেন নাসির। সোমবার দেখলেন তাঁর ১২ বছরের শ্যালিকা হালিমা প্রায় সে ভাবেই উড়ে গিয়ে পড়ল দূরে। দৃশ্যটা মনে পড়তেই বারবার কেঁপে উঠছেন ভাঙড় থানার মথুরাপুরের বাসিন্দা ওই যুবক।

জখমদের নিয়ে আসা হচ্ছে এসএসকেএম হাসপাতালে। সোমবার। — নিজস্ব চিত্র

জখমদের নিয়ে আসা হচ্ছে এসএসকেএম হাসপাতালে। সোমবার। — নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০৬ ডিসেম্বর ২০১৬ ০২:৫৬
Share: Save:

কোনও গাড়ি যে কাউকে এ ভাবে তুলে নিয়ে গিয়ে আছড়ে ফেলতে পারে, চোখে না দেখলে বিশ্বাসই করতেন না মথুরাপুরের নাসির মোল্লা!

হাতি লোককে শুঁড়ে তুলে ছুড়ে ফেলছে— এ দৃশ্যটা একাধিক বার টিভিতে দেখেছেন নাসির। সোমবার দেখলেন তাঁর ১২ বছরের শ্যালিকা হালিমা প্রায় সে ভাবেই উড়ে গিয়ে পড়ল দূরে। দৃশ্যটা মনে পড়তেই বারবার কেঁপে উঠছেন ভাঙড় থানার মথুরাপুরের বাসিন্দা ওই যুবক।

কলকাতা দেখা হয়নি অনেক দিন। তাই ছেলে, ছোট ছোট শ্যালিকা এবং অন্যদের নিয়ে কলকাতায় এসেছিলেন নাসির। চিড়িয়াখানা দেখা হয়ে গিয়েছিল। এর পরে ভিক্টোরিয়া আর মিউজিয়াম যাওয়ার কথা। বেলভেডিয়ার রোড-এ জে সি বসু রোডের মোড়ে ফুটপাথে দাঁড়িয়ে ছিলেন সকলে। কিন্তু রাস্তা পেরোনোর আগেই ঘটে গেল ঘটনাটা।

এ দিন বিকেলে এসএসকেএম হাসপাতালে দাঁড়িয়ে নাসির বলেন, ‘‘ভিক্টোরিয়া দেখতে যাব বলে ফুটপাথে দাঁড়িয়ে ছিলাম। হঠাৎ দেখি, একটা গাড়ি রেলিং ভেঙে ছুটে আসছে। ফুটপাথে তখন আমরা জনা চল্লিশ লোক দাঁড়িয়ে। কোথা দিয়ে যে কী হয়ে গেল!’’ হুড়োহুড়িতে পড়ে গিয়েছিলেন নাসির। বললেন, ‘‘উঠতে উঠতেই দেখি, গাড়ির সামনের অংশটা হালিমাকে উড়িয়ে নিয়ে গিয়ে ফেলল ফুটপাথের পাশের রেলিংয়ে।’’ তখনই ওই যুবকের চোখ যায় রাস্তায়। সেখানে তখন গড়াগড়ি খাচ্ছে তাঁরই তিন বছরের ছেলে সামিন মোল্লা।

ছেলে চোট পেয়েছিল পেটে। তাকে কোলে তুলে নাসির দেখেন হালিমাকে নিয়ে গেল পুলিশের গাড়ি। ছেলেকে হাসপাতালে ভর্তি করে হাউহাউ করে কেঁদে ফেলেন বছর পঁয়ত্রিশের যুবক, ‘‘সকাল থেকে কত আনন্দ করলাম। আর এখন হালিমার দেহ নিয়ে ফিরব। আমার ভরসায় পাঠিয়েছিল। ফিরে ওর বাবাকে কী বলব!’’ নাসিরদের ৩৮ জনের দলে ছিলেন লালবাবু শেখ ও তাঁর ছেলে রিয়াজ। লালবাবুর মাথা ফেটেছে। আহত সেলিমা খাতুন এবং আমিনা খাতুনও। আমিনা বলেন, ‘‘চোখের সামনেই একটা গাড়ি এসে মোটরবাইককে মারল। বাইকটা এসে পড়ল আমাদের উপরে। তার পরেই গাড়িটাও উঠে এল ফুটপাথে। বাইকের আড়ালে থাকায় বেঁচে গিয়েছি।’’

বাইকের চালক বেহালার সরশুনার বাসিন্দা ৫২ বছরের সুশান্ত মণ্ডল নিজে বাঁচতে পারেননি। পিছনে বসেছিলেন ছেলে সুব্রত। তিনি বলেন, ‘‘পিছন থেকে গাড়িটা এমন ধাক্কা মারল যে ১০ ফুট দূরে ছিটকে পড়ি।’’ সুশান্তবাবুও ছিটকে পড়েন। তাঁর উপরে এসে পড়ে বাইকটি। এ দিন এসএসকেএমে সুশান্তবাবুর ভাই প্রশান্ত মণ্ডল বলেন, ‘‘সুব্রত কাঁদতে কাঁদতে ফোন করল। পুলিশ বলল, এসএসকেএমে যেতে হবে। এসে শুনি দাদা আর নেই!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Accident Kolkata
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE