Advertisement
E-Paper

হেরিটেজ রক্ষায় নির্মাণ-বিধি শিথিল, কর ছাড়ের প্রস্তাব

কমিশনের আধিকারিকদের একাংশ জানাচ্ছেন, শহরে হেরিটেজ রক্ষার প্রধানতম অন্তরায় হল সংশ্লিষ্ট বাড়ির মালিকদের একাংশের ‘অসহযোগিতা’।

দেবাশিস ঘড়াই

শেষ আপডেট: ১২ মে ২০১৯ ০১:৩৯
ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

হেরিটেজ বাড়ি ভাঙা আইনবিরুদ্ধ। অথচ আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়েই একের পর এক হেরিটেজ বাড়ি ভাঙা পড়ছে শহরে। এ বার সেই প্রবণতা আটকানোর জন্যই কলকাতা পুর বিল্ডিং আইনে রদবদলের প্রস্তাব পাঠাতে চলেছে রাজ্য হেরিটেজ কমিশন। হেরিটেজের একাংশ অক্ষত রেখে বাকি অংশে যাতে নতুন নির্মাণ করা যায়, সে ব্যাপারে পুর আইনে ছাড় পাওয়ার কথা ওই প্রস্তাবে উল্লেখ করা হবে বলে কমিশন সূত্রের খবর। শুধু তাই নয়, হেরিটেজ বাড়ির সম্পত্তিকরের ছাড়ের ক্ষেত্রেও কিছু পরিবর্তন আনা যায় কি না, সে ব্যাপারটিও প্রস্তাবে অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। ইতিমধ্যেই এ বিষয়ে কলকাতা পুরসভা ও রাজ্য হেরিটেজ কমিশনের মধ্যে প্রাথমিক আলোচনা হয়েছে।

কমিশনের আধিকারিকদের একাংশ জানাচ্ছেন, শহরে হেরিটেজ রক্ষার প্রধানতম অন্তরায় হল সংশ্লিষ্ট বাড়ির মালিকদের একাংশের ‘অসহযোগিতা’। অবশ্য এর পিছনে সঙ্গত কারণ রয়েছে বলে মনে করছেন তাঁরা। কারণ, পূর্বপুরুষ কোনও এক সময়ে বাড়ি নির্মাণ করেছিলেন। স্থাপত্যশৈলী, ঐতিহাসিক বা অন্য গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার প্রেক্ষিতে সে বাড়ি পরবর্তীকালে হেরিটেজ ঘোষিত হয়েছে। কিন্তু বর্তমানে হয়তো অনেক শরিক রয়েছেন। বা অন্য ক্ষেত্রে বর্তমান প্রজন্মের সেই আর্থিক সঙ্গতি নেই বাড়িটি রক্ষণাবেক্ষণ করার। এ দিকে বাড়িটি হেরিটেজ মর্যাদাপ্রাপ্ত হওয়ায় সেটি বিক্রি বা ভেঙে নতুন ভাবে নির্মাণেও বাধা রয়েছে। কারণ, বিষয়টি পুরসভার হেরিটেজ কমিটির আওতাধীন। তাই এত ঝামেলা না নিয়ে অনেক ক্ষেত্রেই পুরসভার অজান্তে হেরিটেজ বাড়ি ভাঙা হচ্ছে।

শুধু তাই নয়, গ্রেডের অবনমন ঘটিয়ে খোদ পুরসভার হেরিটেজ কমিটিই বাড়ি ভাঙার অনুমতি দিয়েছে বলে অভিযোগ জানিয়ে সরব হয়েছেন হেরিটেজ বিশেষজ্ঞদের একাংশ। এই সমস্যা দূর করতেই কমিশনের তরফে ওই প্রস্তাব তৈরি হচ্ছে। কমিশনের চেয়ারম্যান শুভাপ্রসন্ন বলেন, ‘‘হেরিটেজ মর্যাদা যাতে গলার কাঁটা না হয়ে যায়, সে দিকটাও দেখতে হবে। তাই হেরিটেজ অংশ অক্ষত রেখে বাকি অংশে নতুন নির্মাণ করার অনুমতি দেওয়া যায় কি না, সে ব্যাপারে পুরসভার সঙ্গে আলোচনা হচ্ছে। আমাদের তরফে একটা খসড়াও তৈরি করা হচ্ছে।’’

কমিশনের সদস্যদের একাংশের অনুমান, এই প্রস্তাব যদি সত্যিই কার্যকর হয়, তা হলে হেরিটেজ বাড়ি ভাঙার প্রবণতা আটকানো যাবে। কারণ, যখন সংশ্লিষ্ট বাড়ির মালিক দেখবেন যে, একটি অংশ ছেড়ে অন্য অংশে নির্মাণের ছাড় পাওয়া যাচ্ছে বা তা থেকে আর্থিক সমস্যার সুরাহা করা যাচ্ছে, তখন হেরিটেজ অংশটুকু রাখতে আর আপত্তি করবেন না। কমিশনের এক সদস্যের কথায়, ‘‘পাইলট প্রকল্প হিসেবে এ রকম দু’একটি কাজও করা হচ্ছে। নকশা তৈরি হচ্ছে সে রকম ভাবে। এর পর যদি প্রস্তাবটি আইনসিদ্ধ হয়, তা হলে সমস্যা হওয়ার কথা নয়।’’

সেই সঙ্গে সম্পত্তিকরের ছাড়ের প্রসঙ্গটিও প্রস্তাবে উঠে এসেছে বলে কমিশন সূত্রের খবর। বর্তমানে পুর আইনের ৪২৫(এ) ধারা অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট বাড়ির মালিকের আবেদনের প্রেক্ষিতে গ্রেড ওয়ান হেরিটেজ তালিকাভুক্ত বাড়িগুলিকে সম্পত্তিকরের আওতার বাইরে রাখা হয়। তাও যদি সংশ্লিষ্ট বাড়ির কর্তৃপক্ষ বাড়িটির সঠিক রক্ষণাবেক্ষণ করেন, এই শর্তে। হেরিটেজ গ্রেড টু এ এবং টুবি-র ক্ষেত্রেও একই নিয়ম। কিন্তু সেখানে নতুন নির্মাণ করলে আর সেই ছাড় পাওয়া যাবে না। শুভাপ্রসন্ন বলছেন, ‘‘সম্পত্তিকরে ছাড়ের বিষয়টি প্রস্তাবে রাখা হচ্ছে। তাতে যদি হেরিটেজ রক্ষা করা যায়, তা হলে সেটাই প্রাপ্তি শহরের।’’

West Bengal Heritage Commission KMC Kolkata Municipal Corporation
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy