Advertisement
E-Paper

‘যৌন হেনস্থা’র প্রমাণ স্পষ্ট, শ্বাসরোধ করে খুন চিকিৎসককে, ময়নাতদন্ত রিপোর্ট আমাদের হাতে

অভিযোগ উঠেছিল, নির্যাতিতার দেহে ‘১৫০ গ্রাম সিমেন’ মিলেছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্টে ‘সিমেন’ সংক্রান্ত কোনও উল্লেখ নেই। ‘সাদা ঘন চটচটে তরল’ সংগ্রহ করার কথা উল্লেখ রয়েছে। তবে তা কী, বলা হয়নি।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৯ অগস্ট ২০২৪ ১৫:৩৯

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

আরজি কর মেডিক্যাল কলেজে নিহত চিকিৎসক পড়ুয়ার দেহে ছিল একাধিক আঘাতের চিহ্ন। তাঁর দেহে ‘যৌন হেনস্থা’র প্রমাণও মিলেছে। এমনটাই রয়েছে ওই চিকিৎসক পড়ুয়ার দেহের ময়নাতদন্তের রিপোর্টে। সেই রিপোর্ট হাতে রয়েছে আনন্দবাজার অনলাইনের। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট বলছে, ওই চিকিৎসককে শ্বাসরোধ করে খুন করা হয়েছিল। এমনকি, তাঁর যৌনাঙ্গে যে জোরপূর্বক কিছু প্রবেশ করানো হয়েছিল তারও উল্লেখ রয়েছে ময়নাতদন্তের রিপোর্টে।

নিহত চিকিৎসক পড়ুয়ার দেহের ময়নাতদন্তের রিপোর্ট অনুযায়ী, তাঁর শরীরে একাধিক ক্ষতচিহ্ন ছিল। মাথা, গাল, ঠোঁট, নাক, ডান চোয়াল, চিবুক, গলা, বাঁ হাত, বাঁ কাঁধ, বাঁ হাঁটু, গোড়ালি এবং যৌনাঙ্গে ক্ষতচিহ্ন মিলেছে। রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে, চিকিৎসকের ফুসফুসে রক্ত জমাট (হেমারেজ) বেঁধেছিল। শরীরে আরও কিছু অংশেও জমাট বেঁধে ছিল রক্ত। চিকিৎসক পড়ুয়াকে যে শ্বাসরোধ করে ‘খুন’ করা হয়েছে রিপোর্টে লেখা রয়েছে তা-ও। যৌনাঙ্গে জোরপূর্বক কিছু প্রবেশ করানো হয়েছিল (রিপোর্টে লেখা পেনিট্রেশন/ইনসারশন) বলেও উল্লেখ রয়েছে রিপোর্টে।

একাধিক মহল থেকে অভিযোগ তোলা হয়েছিল, নির্যাতিতার দেহে ‘১৫০ গ্রাম সিমেন’ মিলেছে। কলকাতা হাই কোর্টে তাঁর পরিবার যে পিটিশন দায়ের করেছে, সেখানেও এই বিষয়টির উল্লেখ রয়েছে। তবে ময়নাতদন্তের রিপোর্টে ‘সিমেন’ সংক্রান্ত কোনও উল্লেখ নেই। রিপোর্টে লেখা হয়েছে, নির্যাতিতার ‘এন্ডোসার্ভিক্যাল ক্যানাল’ থেকে ‘সাদা ঘন চটচটে তরল’ সংগ্রহ করা হয়েছে। তবে সেই তরল কী, তার উল্লেখ নেই রিপোর্টে। রিপোর্টে ‘এক্সটারনাল ও ইন্টারনাল জেনিটালিয়া’ কলমে লেখা হয়েছে, ওজন ‘১৫১ গ্রাম’। প্রসঙ্গত, ময়নাতদন্তের রিপোর্টে নিয়ম মেনে মৃতদেহের বিভিন্ন অংশের ওজন উল্লেখ করা হয়। এ ক্ষেত্রেও তা-ই করা হয়েছে। এক ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞের কথায়, ‘‘যে সাদা চটচটে তরলের কথা উল্লেখ করা হয়েছে, সেটা কী বস্তু তা ফরেন্সিক রিপোর্ট থেকে জানা যাবে। ময়নাতদন্তের রিপোর্টে এমন কিছু লেখা যায় না। কারণ, সেটা পরীক্ষাসাপেক্ষ বিষয়।’’

বিভিন্ন মহল থেকে নির্যাতিতার শরীরের একাধিক হাড় ভাঙার যে সব কথা উঠে আসছিল, ময়নাতদন্তের রিপোর্টে তেমন হাড় ভাঙার কোনও উল্লেখ নেই। রিপোর্টে লেখা হয়েছে, ‘‘শ্বাসরোধ করার কারণে মৃত্যু। মৃত্যুর ধরন খুন। যৌনাঙ্গে জোরপূর্বক কিছু প্রবেশ করানোর মেডিক্যাল প্রমাণও রয়েছে। যৌন হেনস্থার সম্ভাবনা।’’

নির্যাতিতার দেহের ময়নাতদন্তের রিপোর্টে লেখা হয়েছে, দুই গালে একাধিক ক্ষতচিহ্ন মিলেছে। কোনও ক্ষত দৈর্ঘ্যে ০.৩ ই়ঞ্চি এবং প্রস্থে ০.১ ইঞ্চি। কোনওটি আবার দৈর্ঘ্যে ০.২ ইঞ্চি এবং প্রস্থে ০.১ ইঞ্চি। নীচের ঠোঁটের মাঝখানে একটি ক্ষতচিহ্ন রয়েছে, যার দৈর্ঘ্য ১ ইঞ্চি এবং প্রস্থ ০.৪ ইঞ্চি। ওষ্ঠ এবং অধরের ভিতরের অংশেও ক্ষতচিহ্ন মিলেছে, যার দৈর্ঘ্য প্রায় ০.২ ইঞ্চি এবং প্রস্থ ০.২ ইঞ্চি। নাকের বাঁ দিকে একটি ক্ষতচিহ্ন রয়েছে, যার দৈর্ঘ্য ০.৩ ইঞ্চি এবং প্রস্থ ০.১ ইঞ্চি। ঠোঁটের উপরেও দু’টি রয়েছে ক্ষতচিহ্ন, যার দৈর্ঘ্য ০.৪ ইঞ্চি এবং প্রস্থ ০.১ ইঞ্চি। ডান চোয়ালে বড়সড় ক্ষতচিহ্ন রয়েছে। গলার বাঁ দিকে রয়েছে একাধিক ক্ষতচিহ্ন, যেগুলির দৈর্ঘ্য প্রায় ০.৫ ইঞ্চি। ডান চোয়াল এবং গলার ডান দিকের মাঝামাঝি প্রায় এক ইঞ্চি দৈর্ঘ্যের ক্ষতচিহ্ন রয়েছে। বাঁ হাতে তিনটি ক্ষতচিহ্ন রয়েছে। বাঁ কাঁধের উপর ক্ষতচিহ্ন রয়েছে যার দৈর্ঘ্য প্রায় ২ ইঞ্চি। হাইমেনের ডান দিকে রয়েছে ক্ষতচিহ্ন। ঘড়িতে ১০টা বাজলে কাঁটা যেমন থাকে, ক্ষতচিহ্ন দেখতে তেমনই বলে উল্লেখ করা হয়েছে ওই রিপোর্টে।

গত ৯ অগস্ট সকালে আরজি কর হাসপাতালে জরুরি বিভাগের চারতলার সেমিনার হলে চিকিৎসকের দেহ মিলেছিল। অভিযোগ, ধর্ষণ করে খুন করা হয়েছে তাঁকে। এই ঘটনায় এক জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ, যিনি পেশায় ছিলেন সিভিক ভলান্টিয়ার। হাই কোর্টের নির্দেশে ঘটনার তদন্ত করছে সিবিআই। ধৃতকে হেফাজতে নিয়েছে তাঁরা।

RG Kar Medical College and Hospital Incident Autopsy post mortem report
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy