Advertisement
E-Paper

‘মা, ট্র্যাফিক সিগন্যাল বানান কী?’ বাড়ি থেকে বেরোনোর আগে এটিই ছিল সৌরনীলের শেষ প্রশ্ন

ছেলের দেহ পাওয়ার অপেক্ষায় হাসপাতালে বসে থাকা মা বললেন, ‘‘ট্র্যাফিক সিগন্যাল বানানটা শিখে নিয়ে বেরোলো বাড়ি থেকে, আর সিগন্যাল পেরোতে গিয়েই সব শেষ!’’

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৫ অগস্ট ২০২৩ ০৭:৩৫
দুর্ঘটনায় মৃত সৌরনীলের (ডান দিকে) স্কুলব্যাগ আঁকড়ে মা। শুক্রবার বিদ্যাসাগর হাসপাতালে।

দুর্ঘটনায় মৃত সৌরনীলের (ডান দিকে) স্কুলব্যাগ আঁকড়ে মা। শুক্রবার বিদ্যাসাগর হাসপাতালে। ছবি: সংগৃহীত।

‘মা, ট্র্যাফিক সিগন্যাল বানান কী?’

স্কুলের পরীক্ষার দিন বাড়ি থেকে বেরোনোর আগে ছেলের এই প্রশ্নে মা শিখিয়ে দিয়েছিলেন বানান। পরীক্ষা দেওয়া তো দূর, বাড়ি আর ফেরাই হল না আট বছরের সেই ছেলের! স্কুলে ঢোকার মুখে লরির চাকা পিষে দিল তাকে। ছেলের দেহ পাওয়ার অপেক্ষায় হাসপাতালে বসে থাকা মা বললেন, ‘‘ট্র্যাফিক সিগন্যাল বানানটা শিখে নিয়ে বেরোলো বাড়ি থেকে, আর সিগন্যাল পেরোতে গিয়েই সব শেষ!’’

বড়িশা উচ্চ বালিকা বিদ্যামন্দির স্কুলের প্রাথমিক বিভাগের দ্বিতীয় শ্রেণির ‘এ’ বিভাগের ছাত্র ছিল সৌরনীল সরকার। তার স্কুলের শিক্ষকেরা জানান, এ দিন মানসিক ও শারীরিক সমন্বয় সাধনের একটি বিষয়ে পরীক্ষা ছিল স্কুলে। তাতেই রয়েছে, ট্র্যাফিক সিগন্যাল ব্যবস্থা এবং কী ভাবে রাস্তা পারাপার করতে হয়, তার নিয়মকানুন। স্কুলের সহকারী শিক্ষক তনুজ চৌধুরী জানান, সেই কারণেই হয়তো ট্র্যাফিক সিগন্যাল বানানটা জানতে চেয়েছিল মায়ের কাছে।

বাড়ি থেকে বেরোনোর কিছু ক্ষণের মধ্যেই মা দীপিকা সরকারের কাছে দুর্ঘটনার খবর আসে। স্কুল থেকেই তাঁকে জানানো হয়, সৌরনীল আর নেই। লরি ধাক্কা মারে সৌরনীলের বাবা, একটি দোকানের মালিক সরোজকুমার সরকারকেও। ঘটনাস্থল হয়ে বিদ্যাসাগর হাসপাতালে পৌঁছন বাবা, একটি দোকানের মালিক সরোজকুমার সরকারকেও। ঘটনাস্থল হয়ে বিদ্যাসাগর হাসপাতালে পৌঁছন দীপিকা। সেখানেই ছেলের দেহের অপেক্ষায় বসে থাকতে দেখা গিয়েছে তাঁকে। সর্বক্ষণ ছেলের স্কুলব্যাগ আঁকড়ে বসে ছিলেন। তার মধ্যেই এক বার ব্যাগটা দেখিয়ে বলে ওঠেন, ‘‘এটা আমার জন্য রেখে গিয়েছে। ছেলেটা আমাকে ছেড়ে চলে গিয়েছে।’’ দীপিকাকে ঘিরে জমে ওঠা ভিড়ে অনেকেরই তখন চোখে জল।

মা জানান, ছেলে স্কুলে যেতে খুব ভালবাসত। রবিবারও স্কুলে যেতে চাইত। আর বাবা সরোজকুমার প্রতি দিনই সাইকেলে জেমস লং সরণি দিয়ে স্কুলে পৌঁছে দিতেন ছেলেকে। ক’দিন ধরে সাইকেলের চেন খারাপ। তাই অটোয় ছেলেকে নিয়ে যাচ্ছিলেন বাবা। দীপিকা বলেন, ‘‘আজও খেয়েদেয়ে নাচতে নাচতে বেরিয়ে গেল। আর ফিরল না।’’ এর মধ্যেই তাঁকে বলা হয়, অভিযোগ উঠেছে, স্কুলের সামনে যান শাসনে পুলিশের নজরদারির অভাব রয়েছে। দীপিকা শুধু বললেন, ‘‘চারপাশে তাকাই না। পুলিশ থাকে কি না, জানি না। আমি শুধু ওই লরি চালকের ফাঁসি চাই।’’

ছেলের নথিপত্র আনতে এক সময় বাড়ির দিকে যেতে হয় দীপিকাকে। তাঁর সঙ্গে সেখানে পৌঁছে দেখা যায়, চার তলা বাড়ির তিন তলায় থাকেন দীপিকারা। বাকি সব ক’টি তলায় ঘর ভাড়ায় দেওয়া। গেটের বাইরে সৌরনীলের ঠাকুরদা-ঠাকুমার নামে স্মৃতি-ফলক বসানো। গেট দিয়ে ঢুকতেই সিঁড়ির নীচে পড়ে রয়েছে সৌরনীলের বাবার চেনকাটা সাইকেল।

ঘরের ভিতরে বইপত্র ছড়ানো সৌরনীলের। থাকে থাকে টেডি বেয়ার, খেলনা। এত ক্ষণ আঁকড়ে থাকা ব্যাগ খুলে বই-খাতা ছুড়ে দেন দীপিকা। বলেন, ‘‘আগামী ২৮ অগস্ট জন্মদিন ছেলেটার। আর কেউ কেক কাটার জন্য বায়না করবে না।’’

Death Behala barisha high school
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy